ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলীর ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কে?

কাজ পাইয়ে দেয়ার শর্তে ‘মেসার্স আজিজ ব্রাদার্স’ এর কাছ থেকেই নয় লক্ষ টাকা নেয়া, বিল অনুমোদনের জন্য ২% কমিশন বানিজ্য, দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারনে বিভিন্ন প্রকল্প কাজের ব্যাঘাত ঘটানো এবং চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের স্থলে কৃত্রিম সমস্যা সৃষ্টি করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়।

এইসব বিষয়গুলো যার জন্য ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার তিনি হলেন, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. দেলওয়ার হোসেন। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর থেকেই আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ফরিদগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগকে অনিয়মের আখড়ায় পরিনত করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। নিজ এলাকা নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার হাট পুকুরিয়া ইউনিয়নে নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চাটখিল পৌরসভার পাশ্ববর্তী একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। তাঁর নিজ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় ঢাকাতেও রয়েছে তার একাধিক ফ্লাট।

নিত্যনৈমিত্তিক তার এমন অনিয়মের কারণে জনগণের পাশাপাশি স্বয়ং তার উপর বিরক্ত ছিলেন তৎকালীন ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটোয়ারীও। নিয়ম-নীতি বর্হিভূতভাবে নিজের ইচ্ছা মতো অফিসে আসা- যাওয়া করা, সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন না করা। একক স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অফিসের দৈনন্দিন কাজ ব্যহত হওয়া এবং কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে তার নেতৃত্বে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মরহুম নজরুল ইসলাম ও সাবেক প্যানেল মেয়র আব্দুল মান্নান পরান সহ ‘মেসার্স আজিজ ব্রাদার্স’ এর কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা করে ২৬,০০,০০০/- (ছাব্বিশ লক্ষ) টাকা নেয়া ও তার অনিয়মের কারনে সরকারের উন্নয়নমূলক সকল কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এবং ঠিকাদারদের বিল হতে কমিশন না দেওয়ায় বিল অনুমোদন প্রক্রিয়ায় তালবাহানা করে ঠিকাদারদেরকে ২% কমিশন দিতে বাধ্য করার বিষয় উল্লেখ করে তৎকালীন মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী ১লা জুলাই ২০২৪ তারিখ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ দেলোয়ার হোসেন কে কারণ দর্শানোর একটি নোটিশ প্রদান করেন। (স্মারক নং- ফয় পৌঁঃ/প্রশাঃ/২০২৪/২০২)৷

এক তথ্যসূত্র বলছে মূল দায়িত্ব হিসেবে ফরিদগঞ্জ পৌরসভা অফিসে অফিস করার কথা থাকলেও তিনি তা না করে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রামগঞ্জে পৌরসভায় অফিসেই নিয়মিত অফিস করেন এই কর্মকর্তা। জরুরী কাজ কিংবা মিটিং থাকলে ফরিদগঞ্জে আসেন, নয়ত আসেন না।

গত ৫ আগস্টের পর ফরিদগঞ্জ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন ও পৌর মেয়রের ব্যবহৃত নিদিষ্ট গাড়ি মেরামতের বিষয় নিয়েও করেছেন নানা রকম টালবাহানা। এ সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে পৌরসভার একাউন্ট সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে করেছেন উচ্চ-বাচ্ছও।

এসব অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে ভিন্ন সময়ে ফরিদগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে তাকে না পাওয়া গেলেও মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বহু প্রচেষ্টা বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর পৌরসভা অফিসে গিয়ে পাওয়া যায় ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ দেলোয়ার হোসেন কে।

সাংবাদিকদের উপস্থিতির টের পেয়েই তিনি কোথাও একটা যাবেন বলে খানিকটা ব্যাস্ততা দেখাতে শুরু করেন। ভিন্ন সময়ে নির্ধারিত দিনগুলোতেও নিজের অফিসে তাকে পাওয়া যায় না এমনটি বলতেই তিনি বলে ওঠেন ‘না পেলে, লেখালেখি করেন’।

পৌরসভার প্রকল্পের বিষয়ে কথা তুলতেই তিনি ফের বলে ওঠেন ‘যত উন্নয়ন, ততই দুর্নীতি’। তার বিষয়ে আনিত অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন আমি বক্তব্য দেয়ার জন্য তথা কথা বলার জন্য মানুষিক ভাবে প্রস্তুত নয়। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে মানুষিক প্রস্তুতির কি প্রয়োজন? জিজ্ঞেস করতেই তার উত্তর না দিয়ে ফের তার সামনে থাকা কয়েকটি ফাইল নিয়ে খানিকটা ঘাটাঘাটি করে ব্যাস্ততা দেখাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি তার কক্ষে থাকা সাংবাদিকসহ বাকিদের রেখেই তার রুম ত্যাগ করেন।

২৭ অক্টোবর রোববার ফের মুঠোফোনে কথা হয় ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে। এসময় তিনি বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতার হুমকির কারণে আমি অফিসে আসতে পারছি না। তারা আমাকে বলেছেন, আপনার মত দুর্নীতিবাজ ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে পৌরসভা চালাবো না। আমরা ভালো ইঞ্জিনিয়ার আনবো। কোন নেতা? এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন আমার জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমি তাদের নাম বলছি না৷

প্রকৌশলী দেলোয়ারের নিজ এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশি জানান, দেলোয়ারের পূর্ব পুরষরা মধ্যবৃত্ত পরিবারের হলেও ঢাকায় ও গ্রামে তার আলিশান বাড়ি ও জীবন যাপন আলাদিনের চেরাগের মত মনে হয়। সৎ পথে দায়িত্ব পালন করলে পৌরসভার দ্বিতীয় শ্রেণির একজন প্রকৌশলীর এত সম্পদ কিভাবে হয়?

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজিজ ব্রাদাস’র পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন আমাকে কাজ দিবে বলে আমার কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। পরে তৎকালিন মেয়রের হস্তক্ষেপে আমার টাকা ফেরত পেয়েছি।

প্রকৌশলী দেলোয়ারের দুনীর্তির বিষয়ে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, ঘুষ দুনীর্তির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তাকে শোকজ করেছিলাম।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ আবু সুফিয়ান বলেন, সহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মূল দায়িত্ব ও রামগঞ্জ পৌরসভায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়ম অনুযায়ী ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় সপ্তাহে ৩ দিন দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে। তাঁর অনিয়মের খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

Share