গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফরিদগঞ্জ পৌর সভার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় ২২টন রড চুরি হয়ে যায়। চুরি হওয়া রড কান্ড নিয়ে উপজেলা জুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। এদিকে ১৫ সেপ্টেম্বর গোপন তথ্যের মাধ্যমে সাংবাদিকরা কিছু চোরাই রডের সন্ধান পায়। পৌরসভার রড চুরির বিষয়টি এতোটাই ওপেন যে ঠিকাদার, পৌর কর্তৃপক্ষ, উপজেলা প্রশাসন এমনকি পুলিশ প্রশাসনও জানেন। কিন্তু রহস্য জনক কারণে কেউই কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ঠিকাদারও অদ্ভুত কারণে কোনো ধরনের আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছেন না!
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বড়ালী গ্রামের দেওয়ান বাড়ির বোরহান উদ্দিন দেওয়ানকে কম দামে রড কিনার প্রস্তাব করেন একই এলাকার দেলোয়ার ঠিকাদার। বাজার মূল্য থেকে প্রায় পনের হাজার টাকা কমে রড পাচ্ছে বোরহান উদ্দিন। তাই দেরী না করে ৭৮ হাজার টাকায় ১ টন রড কিনে রাখেন তিনি।
৭ আগস্ট পৌর এলাকার পশ্চিম বড়ালী দেওয়ান বাড়িতে চোরাই রড নিয়ে আসেন পাশের বাড়ির আ. রহিম সরকার। আবদুর রহিম নসিমন চালক হলেও এই চোরাই রড চক্রের সাথে সেও জড়িত আছে বলে সূত্র জানায়। রড ক্রয় বিক্রয়ে মধ্যস্থতা করেন সাইফুল দেওয়ান ও ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন। তাদেরই সহযোগীতায় চোরাই রড ক্রয় করেন প্রবাসী বোরহান উদ্দিন। বোরহান উদ্দিনের বাড়ির দ্বিতীয় তলার ছাদের কাজের জন্য এই চোরাই রড ক্রয় করনে ৭৮ হাজার টাকা দিয়ে। বিষয়টি জানাযানি হলে ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে নসিমুন দিয়ে রড সরিয়ে নেয় চক্রটি।
বোরহানের ভগ্নিপতি আবদুল বারেক মিজিও একজন ঠিকাদার। তার বাড়ি উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের দায়চারা গ্রামে। জামেলা এড়াতে তারা ভগ্নিপতি বারেক মিজির কাছে রড পাঠিয়ে দেয়। সূত্র জানায় সে তার চলমান কাজে রডগুলো ব্যবহার করে। এদিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকরা বারেক গাজী বাড়ি এবং এলাকায় অনুসন্ধান করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়।
মধ্যস্থতাকারী ঠিকাদার দেলোয়ার বলেন, “সাইফুল ও আবদুর রহিম আমার কাছে এই রড নিয়ে এসেছে। আমি মনে করেছিলাম কোন ঠিকাদারের কাজের পর কিছু রড রয়ে গেছে। আর ওরা সেগুলোই বিক্রি করতে আনছে। তাই কম মূল্যে প্রায় এক টন রড ৭৮ হাজার টাকায় কিনে দিয়েছি বোরহানকে। আমি যানতামনা এই গুলো চুরাই রড। আমি একাধিকবার রহিমের কাছে জানতে চেয়েছি এই রডের মালিক কে? সে বলেনি।’
সাইফুল বলেন, “ভাই রড রহিম এনেছে। আমি শুধু লেবার হিসাবে নামিয়ে দিয়েছি। সব কিছু রহিম জানে। আমি রহিমের কল পেয়ে বাড়ি থেকে আসি। সে কোথায় থেকে রড এনেছি জানি না।”
আবদুর রহিম বলেন, ভাই আমি গাড়ি চালাই সংসার চালাই। ফরিদগঞ্জ বাজারের টি এনটির সামনে এক লোক আমার গাড়িতে এই রড দিয়েছে। বলেছে বিক্রয় করে টাকা দিতে। তাই বিক্রয় করেছি। অপর প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি তাকে চিনিনা। দেখলে ছিনবো। আর কিছু জানিনা।
বোরহানের স্ত্রী বলেন, ‘ঠিকাদার কই থেকে রড এনে দিয়েছে আমরা যানিনা। আমরা টাকা দিয়ে রড কিনেছি।’ কত টাকা দিয়ে কিনেছেন, জানতে চাইলে বলেন, ৭৮ হাজার টাকা।
বারেক গাজী বলেন, ভাই আমি চোরাই রডের ঘটনা শুনেছি কিন্তু আমি নেইনি বা আমার কাছে কেউ পাঠায়নি। যে বা যারা আপনাদের তথ্য দিয়েছে তারা ভুল তথ্য দিয়েছে।
ফরিদগঞ্জ থানা অফিসার ইনর্চাজ মো: হানিফ সরকার বলেন, “এই বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।”
পৌর প্রশাসক এ.আর.এম জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের পৌরসভার ভিতরে কিছু ঠিকাদারের রড ছিলো, আমি যোগদানের আগেই রডগুলো চুরি হয়ে গেছে। এই বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ হয়নি। তথ্য পেলে আমরা প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য রাখা চুরি হওয়া রডের সাথে উপজেলা এবং পৌর বিএনপি ও যুবদলের বেশ কয়েকজন নেতার নাম উঠে আসে।
অনুসন্ধান চলমান রয়েছে, সম্পূন্ন হলে রড চুরির সাথে কারা জড়িত আছে পাঠক জানতে পারবেন।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur