উপজেলা সংবাদ

ফরিদগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে নিয়ে স্বস্তিতে নেই প্রধান দু’দল

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে নিয়ে নানা মেরুকরণের কারণে স্বস্তিতে নেই প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও বর্তমান মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীর সমর্থকদের ভূমিকা নিয়ে চিন্তিত দুই দলই।

ফরিদগঞ্জ পৌর নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পাল্টাপাল্টি উত্তেজনার ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। এখানে মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক। বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাবশালী নেতা আবুল খায়ের পাটোয়ারী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও সংবাদ সম্মেলন করে প্রত্যাহার করে নেন।

আবুল খায়ের পাটোয়ারী মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিলেও তাঁর সমর্থকেরা মাহফুজুল হকের পক্ষে সেভাবে এখনো মাঠে নেই। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বিক্ষুব্ধ এ ঘরানার সমর্থকেরা বর্তমান মেয়র মনজিল হোসেনের পক্ষে নেপথ্য থেকে কাজ করছেন।

বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন হারুন অর রশীদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র মনজিল হোসেন। তিনিও এবার নির্বাচনের মাঠে আছেন মোবাইল প্রতীক নিয়ে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দেলোয়ার হোসেন হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকলেও প্রচারে তেমন দেখা যাচ্ছে না তাঁকে।

ফরিদগঞ্জের নানা রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল খায়ের পাটোয়ারীকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হলেও শেষ মুহূর্তে তিনি বাদ পড়ে যান।

দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও একজন সাংবাদিক নেতার আশীর্বাদ ছিল মাহফুজুল হকের ওপর।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ওই সাংবাদিক নেতা চাঁদপুরের এ আসন থেকে নির্বাচন করে হেরেছিলেন। সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি শামসুল হক ভূইয়াসহ আবুল খায়ের পাটোয়ারী ও তাঁদের সমর্থকেরা ওই সাংবাদিক নেতার বিপক্ষে কাজ করেন। ওই প্রভাব বলয়টি ভাঙতে মাহফুজুল হককে সমর্থন দিয়ে মাঠে নামিয়ে সফল হন সাবেক ওই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাংবাদিক নেতা। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন আবুল খায়ের পাটোয়ারী।

জানতে চাইলে আবুল খায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীও এখনো সেভাবে মাঠে নামেনি, আমিও নামিনি। তবে নেতা-কর্মীদের ডেকে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলে দিয়েছি।’ দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে কর্মীদের অন্য প্রার্থীর জন্য কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারে যেমন মনোমালিন্য থাকে, তেমনি দলের ভেতরেও মনোমালিন্য কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কেউই যাব না।

নির্বাচনী প্রচারে পুরোদমে নেমে ঘরে ঘরে ভোটারের কাছে যাচ্ছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুল হক বলেন, ‘নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও দলমত-নির্বিশেষে সবাই আমার জন্য কাজ করছেন। এমনকি বিএনপির অনেক সমর্থকও আমার হয়ে মাঠে নেমেছেন।’

অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থী হারুন অর রশীদের পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা কাজ করলেও দলের কিছু নেতা-কর্মী বর্তমান মেয়র মনজিল হোসেনের হয়ে মাঠে আছেন। সামনে থেকে তাঁকে সহায়তা করছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ হান্নান। আবার নেপথ্যে থেকেও বেশ কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা মনজিলকে সহায়তা করছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলো দাবি করে। এ বিষয়টি বিএনপি নেতাদের বেশ ভাবাচ্ছে।

তবে বিএনপির প্রার্থী হারুন অর রশীদ মনে করেন, এ বিষয়টি তাঁর নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার আমাদের প্রতীক ধানের শীষ হওয়ার কারণে দলের সব কর্মী-সমর্থক ধানের শীষের জন্য মাঠে থাকবেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ কাজ করলে সেটাতে কোনো সুফল পাবেন না।’

সূত্র : প্রথমআলো

 

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৬:৫৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫, রোববার

এমআরআর  

Share