Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে এতিমদের ৮২ টন গম বিতরণে হরিলুট
ফরিদগঞ্জে এতিমদের ৮২ টন গম বিতরণে হরিলুট

ফরিদগঞ্জে এতিমদের ৮২ টন গম বিতরণে হরিলুট

ফরিদগঞ্জে ৪১ এতিমখানা ও লিল্লাহ্বডিংয়ে জন্যে জি.আর প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৮২ টন গম বিতরণে হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতিমের জন্যে গম হরিলুটের মধ্যস্থতায় রয়েছে এক প্রভাবশালী নেতা।

এ নিয়ে খোদ প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক ’জন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ফরিদগঞ্জে ১৫ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় একাধিক এতিমখানা ও লিল্লাহবডিং থাকলেও ৫ ইউনিয়নে কোনো প্রকল্পই দেয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বললে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জি.আর প্রকল্পের অনুকূলে জুন মাসের শেষের দিকে সরকার ফরিদগঞ্জে ৮২ টন চাল বরাদ্দ দেয়।

পরবর্তীতে খাদ্য বিভাগ চালের পরিবর্তে গম বিতরণের সিদ্ধান্ত প্রদান করে। নির্দেশনা অনুসারে ৪১টি প্রকল্পের মাধ্যমে এতিমখান ও লিল্লাহবডিংয়ের নামে ২ টন করে গম বরাদ্দ দেয়া হয়। বর্তমান বাজারদর অনুসারে ২ টন গমের মূল্য ৬৬ হাজার টাকা।

প্রকল্পগুলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, ২ টন গমের দাম ৬৬ হাজার টাকার বিপরীতে প্রতিটি প্রকল্প ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা পেয়েছে। প্রকল্পের অধিকাংশ সভাপতির সাথে কথা বলে এমনই বক্তব্য পাওয়া যায়।

সুবিধা হাতিয়ে নিতে গাজ্জালী এতিম খানা নামে এক প্রতিষ্ঠানকে স্থান দেয়া হয়েছে তালিকায়।

চরবসন্ত দারুল উলুম এতিম খানা প্রধান হুজুর ১৬ হাজার টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন , ‘আমাদের যেন ক্ষতি না হয়।’

‘হাঁসা আল আমিন মাদ্রাসা ও এতিম খানার প্রধান ‘১৬ হাজার টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।’

হুগলি হালিমা হক নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানায় ১৬ হাজার টাকা পেয়েছে বলে জানান। উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা আওরঙ্গজেব বলেন, ‘
জি.আর প্রকল্পে আমার দপ্তরে কোনো ধরণের টাকা নেয়া হয়নি । নিয়মতান্ত্রিকভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বিস্থস্ত সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, চট্রগ্রাম থেকে খাদ্য ফরিদগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে পথিমধ্যেই খাদ্য অন্যত্র বিক্রি করে দেয়া হয়েছে ওসিএলএসডির যোগসাজসে। খাদ্যশস্য ডেসপাস রিসিট রিসিভ করে বুঝাতে চেয়েছেন গুদামে খাদ্যশস্য এসেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রফিকুল আমিন কাজল বলেন, ‘এ সকল বরাদ্দের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। দলীয় ফোরামে এ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান সব কাজ একাই করে চলেছেন।’

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান রানা বলেন,‘ প্রকল্প পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ৫ হাজার টাকাও পেয়েছে প্রকল্প পিছু। এ সকল কারণে সরকারের অর্জন ম্লান হয়ে পড়ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা দুদুক কমিটির সভাপতি হিতেশ শর্মা জানান, ‘বরাদ্দের অনিয়ম সর্ম্পকে আমি ইউএনওকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি । তিনি বলেছেন অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেবেন।’

উপজেলা খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি সুমন দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেছি।’

পথিমধ্যে খাদ্যশস্য অন্যত্র পাঠানো ও ডেসপাস রিসিট রিসিভিং বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নির্বাক থাকেন। স্ত্রী অসুস্থ বলে জানিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড.মো.শহীদ হোসেন চৌধুরী বলেন,‘এতিমের গম বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ফেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। এ বিষয়ে আমি সর্তক করে দিয়েছি।’

সংসদ সদস্য ড.মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া বলেন,`ইউএনও ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব সঠিক ভাবে বিলি বন্টন করা । এটি নেতাদের হস্তক্ষেপের বিষয় নহে। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে দেখবেন বলে জানান।

প্রকল্পগুলোর বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার বলেন,‘প্রকল্প কী এমনিতেই এসেছে? অনেক খরচ দিয়ে আনতে হয়েছে।’

এ প্রকল্পে কতো টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রতিবেদক) গম কিনবেন ২৮ টাকা কেজি দরে?’

এ বলে তিনি প্রতিবেদকের ব্যক্তিগত বিষয় ও কর্মস্থলের খোঁজ খবর নেওয়ার হমকি দেন। মুঠো ফোনে কথা বলার সময় বার বার অফিসে গিয়ে চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ করেন।

করেসপন্ডেন্ট
:আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৭:২৫ পিএম,৭ জুলাই ২০১৭,শুক্রবার
এজি /ডিএইচ

Leave a Reply