ভোট দেওয়া প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা প্রায় পাঁচ দশক ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন না।
রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৪ হাজার ৪৫৪ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ১২ হাজার ১শ’ ১৪ জন। তারা সবাই ভোটার তালিকায় নাম উঠাতে ছবি তুলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রও নিয়েছেন। ভোট না দিলেও নিত্যদিন ঘরের বাইরেও যান। কিন্তু ভোটের দিন সবাই থাকেন ঘরের ভেতরে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর মাওলানা মোহাম্মদ হাছান মওদুদ নামে জৈনপুরের পীর এই ফতোয়া জারি করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তৎকালিন সময়ে তিনি দ্বাবি করেন, মেয়েদের ভোট দেয়া নাজায়েজ কাজ। এরপর ১০টি জাতীয় এবং স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে ভোট দেননি নারীরা।
কথিত রয়েছে, প্রায় ৫০ বছর আগে ওই এলাকায় কলেরা প্রকোপ দেখা দেয়। এরপর ঐ এলাকায় তৎকালীন সময়ে জৌনপুর হুজুর নারীদের ভোট দিতে নিষেধ করেন। সেই থেকে এই ইউনিয়নের কোনো নারী আর ভোট দেন না।
জানাযায়, মাওলানা মোহাম্মদ হাছান মওদুদ নামে জৈনপুরের পীর ১৯৮১ সালে ভারতে মৃত্যু বরন করেন।
একই গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর রব বলেন, ‘পীর কইছে এ জন্য মহিলারা ভোট দেয় না। আমরা কইলেও হেতিরা যায়না। এইডা চলি আইতেছে যুগকে যুগ ধরি।’ কি কইতাম মাইয়া ও বৌরা সব কামই করে ঘরের বাইরে, শুধু ভোট আইলে হেতিগো হুজুরের কথা মন অয়।’
কথা হয় স্থানীয় গৃদকালিন্দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে, তিনি বলেন এই ইউনিয়নের পুরুষেরা এগিয়ে এলে নারীরা ভোট দিতে পারতেন। আর কিছুরই দরকার নেই।
রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শরীফ হোসেন খান বলেন, শুনেছি হুজুর বলেছিলেন নারীদের পর্দাশীল হওয়ার জন্য। ভোটাধিকার প্রয়োগ না করার কথা বলেননি তিনি। এখন নারীরা বাজার করা থেকে শুরু করে সকল কাজই করেন। আশাকরি এই ইউপি নির্বাচনে তারা তাদের ভোটের অধিকারও প্রয়োগ করবেন। আমরাও তাদেরকে ভোট দিতে উৎসাহী করতে কাজ করে যাচ্ছি।
রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান ও (৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড) সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি নিজে একজন নারী কিন্তু নির্বাচিত হই পুরুষের ভোটে। এই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১৩টিতেই নারীরা ভোটকেন্দ্রে যায় এবং ভোট দেন। কিন্তু আমরা তাদের কাছে যাই, তাদের হাতে পায়ে ধরে বুঝাই। ভোটকেন্দ্রে নারী এজেন্টও থাকে। কিন্তু কোন লাভ হয় না, তারা ভোট দিতে আসেন না।
তিনি আরো বলেন, আমি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন করি। কিন্তু নারীদের ভোট পাই না, পুরুষের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। এটি অনেক কষ্টের বিষয় আমাদের জন্য। আমরা চাই পুরুষ ভোটারদের পাশাপাশি আমাদের মা-বোনদের ভোটে আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবো।
নারীরা ভোট না দেয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি বলেন, এটা তাঁদের বিশ্বাসের বিষয়। তাঁদের বিশ্বাস যেন ফেরানো যায়, এ জন্য আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবো, তিনি যদি আমাকে নারীদের ভোট প্রদানের জন্য কোন সভা করে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে বলেন তা হলে আমি কাজ করবো। উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে ভোট হবে আগামী ৫ জানুয়ারী।
প্রতিবেদকঃ শিমুল হাছান, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১