ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে ৩ লাখ রোগীকে স্বাস্থ্যসেবা : উন্নয়নে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গত এক বছরে অন্তত ৩ লাখ রোগী সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ৩৭ টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে রোগীদের এই স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০১৭ সালের তথ্যবিবরণী থেকে এই তথ্য জানা গেছে। এদিকে সচেতন জনগন সরকারিভাবে ফরিদগঞ্জের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াকে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নয়নের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের সুফল হিসাবেই দেখছেন।

নানা সংকটের মধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলার এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাংগীর আলম শিপন তাঁর সহযোগীদে নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তার দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে ফরিদগঞ্জে স্বাস্থ্যখাতে সেবার মান বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর (ভারপ্রাপ্ত) পরিসংখ্যানবিদ মো. মামুন মিজি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ২০১৭ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগ থেকে ৪৭’হাজার ৫’শ ৪০ জন, জরুরী বিভাগ থেকে ৯’হাজার ১’শ ৬ জন ও ইনডোর থেকে ৮’হাজার ২’শ ৮৪ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর সর্বমোট সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ৬৪’ হাজার ৯’শ ৩০ জন।

এছাড়া ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে এক বছরে সর্বমোট ৫৩ হাজার ১৯ জন রোগীকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়েছে। গড়ে প্রতিমাসে ৪ হাজার ৪’শ ১৯ জন রোগী সেবা গ্রহণ করেছে।

অপরদিকে ৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গত এক বছরে সর্বমোট ১ লাখ ৬৭’ হাজার ৭জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। প্রতিমাসে গড়ে ১৩’হাজার ৯’শ ১৭ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছে।

এসর্ম্পকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাংগীর আলম শিপন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ফরিদগঞ্জ একটি জনবহুল উপজেলা। এখানে ৬ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। সরকারিভাবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরনো ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মান ও কর্মচারীদের আবাসনে আরেকটি ভবন নির্মাণের জন্য সর্বমোট ১০ কোটি টাকার কাজ শিঘ্রই শুরু হতে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ‘স্বাস্থ কমপ্লেক্স খে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা উন্নিত করণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হাসপাতালে নতুন অ্যাম্বুল্যান্স সংযোজন, এক্স-রে মেশিন, ওটি’র জন্য জেনারেটর, হাসপাতালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করণ, সোলার স্থাপন, উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে ইসিজি মেশিন প্রদান, হাসপাতাল পুকুরের গাইড ওয়াল নির্মান ও এ্যাম্বুল্যান্স দুটি রাখার জন্য গাড়ির গ্যারেজ নির্মানে এমপি মহোদয় আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন। এজন্য আমি এমপি মহোদয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।’

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে নিয়মিতভাবে গর্ভবতী নারীদের বিনামূল্যে সিজারিয়ান অপারেশন ও নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে ইনডোর রোগীদের বেড নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। পূর্বে হাসপাতালে দালালদের যে দৌরাত্ম ছিলো তা শতভাগ বন্ধ হয়েছে। হাসাপাতালে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ও পর্যবেক্ষনের জন্য ইতোমধ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৩’শ ২৫ জন রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে আসে। কিন্তু চিবিৎসক সংকটে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। সিজার অপারেশন করার জন্য বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্ট না থাকায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার দিয়েই কাজ করাতে হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪’শ রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছে। এই বিশাল সংখ্যক রোগীর চাহিদা অনুযায়ী আরো বেশি করে ঔষুধ সরবরাহ করা জরুরি।

ফরিদগঞ্জের ৬লক্ষাধিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের জন্য সরকারিভাবে পরিচালিত ৫৬টি প্রতিষ্ঠান তদারকি করতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার জন্য একটি গাড়ি সরবরাহ করা জরুরি। সরকারিভাবেপ্রাপ্ত ওষুধ জরুরি বিভাগ-ইনডোর-বর্হিবিভাগে সঠিকভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে।

হাসপাতালের ঔষুধ সরবারহ সর্ম্পকে (ভারপ্রাপ্ত) স্টোরকিপার মো. আব্দুল গনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ১’শ ৫০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ৫০/৬০ ধরনের ঔষুধ সব সময় রোগীদের সরবরাহ করা সম্ভ্যব হয়। তবে আয়রন ট্যাবলেট, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, হিসটাসিন, রেনিটেড, ওমিপ্রাজল, প্যারাসিটামল, হিসটাসিন সিরাপ, এমক্সিসিলিন সিরাপ, কলেরা স্যালাইন আরো বেশি করে সরবরাহ করা প্রয়োজন।

এছাড়া ডায়াবেটিস ও হার্টের ওষুধের সরবরাহ বাড়ানো জরুরি।

প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:০৩ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার
ডিএইচ

Share