Home / শীর্ষ সংবাদ / ৩৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ফরিদগঞ্জ জিএফএল চেয়ারম্যান কারাগারে
GFL Chairman Udau

৩৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ফরিদগঞ্জ জিএফএল চেয়ারম্যান কারাগারে

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ জিএফএলের প্রকল্প জনকল্যাণ সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শাহজাহানকে ৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রতারণা দায়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত জামিন তার না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করেন। অপর ২ নং আসামী তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে অস্থায়ী জামিন দেওয়া হয়।

মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সমবায়ের সনদ নিয়ে মোঃ শাহজাহান, মোঃ আলকায়েত হোসেন, মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ মোরশেদ আলম ও মোঃ মাহাবুবর রহমান যৌথ ভাবে ফরিদগঞ্জ জনকল্যান সমবায় সমিতি লিঃ (জিএফএল) রেজিঃ নং ৫৯৬/চাঁদ/০৪ এর কার্যক্রম চালু করেন।

প্রাথমিক ভাবে কার্যক্রমে সদস্য সংগ্রহ, আমানত সংগ্রহ ও ঋণ দান কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে উপজেলাব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টি করে। পর্যায়ক্রমে একের পর এক প্রকল্প শুরু করেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ফরিদগঞ্জ মেডিকেল সেন্টার, জিএফএল সুজ ফ্যাক্টরি, জিএফএল প্রপাটিজ, জিএফএল পিভিসি পাইপ কারখানা ইত্যাদি।

প্রতিটি প্রকল্পে পরিকল্পনাকারী ও বাস্তাবায়নকারী হিসাবে প্রধান দায়িত্ব পালন করেন প্রকল্প চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান। বাকি ৪ জন শেয়ারদারকে নামমাত্র দায়িত্ব দিয়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে কয়েক বছরে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে শাহজাহান।

এক পর্যায়ে নিজের স্ত্রীকে প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক বানিয়ে নেয়। এতে তার অর্থ আত্মসাতের পথ আরো সুগম হয়। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় এসে কোটি কোটি টাকা আমানতকারীদের আমানতের লভ্যাংশ ও আমানত ফেরত দিতে ব্যার্থ হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠান। এতে প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার গ্রাহক প্রতিষ্ঠানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। উপায় অন্ত না পেয়ে এক পর্যায়ে সবকিছু ফেলে তারা পালিয়ে যায়।

পরে শাহজাহান ব্যতীত বাকী ৪ জন সদস্য মোঃ আলকায়েত হোসেন, মোঃ মিজানুর রহমান, মোঃ মোরশেদ আলম ও মোঃ মাহাবুবর রহমান সমিতির বিপুল অংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি লিখিত ভাবে জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা সমবায় কর্মকর্তা সমিতির সকল হিসাব পর্যালোচনা করেন। এতে আত্মসাতের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে।

জেলা সমবায় কার্যালয়ে বিষয়টি শুনানীর পূর্বে অভিযুক্ত শাহজাহানকে বারবার নোটিশ করা শর্তেও তিনি উপস্থিত হননি। পরে ২৮/১১/২০১৬ ইং তারিখে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম অভিযুক্ত শাহজাহান কর্তৃক বিভিন্ন খাতে সর্বমোট ৩৪ লাখ ৮০ হাজার একশত উনত্রিশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে প্রতিবেদন দেন।

এতে তার স্ত্রী (সম্পাদক) হিসাবে তাকে আত্মসাতে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

জেলা সমবায় কর্মকর্তার আদেশের প্রেক্ষিতে গত ১২ জানুয়ারি মোঃ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মোঃ শাহজাহানকে ১ নং আসামী করে ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- সিআর-১৫৯/১৭।

ওই মামলায় ৩ ও ৪ নং আসামী মাইন উদ্দিন (ম্যানেজার) ও শ্রীকৃষ্ণ দাস (ক্যাশিয়ার) জামিনে থাকলে ও ১ ও ২ নং আসামী শাহজাহান ও তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম দীর্ঘদিন পালিয়ে ছিল।

৭ ডিসেম্বর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে শাহজাহান ও তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক শফিউল আজম শাহজাহান এর জামিন না মঞ্জুর করেন। অপর আসামী তার স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে অস্থায়ী ভাবে জামিন দেন।

এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আলকায়েত হোসেন বলেন, আমাদের সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন কৌশলে পরিকল্পিতভাবে শাহজাহান প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করে। এতে আমিও ব্যক্তিগত ভাবে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে কিছু কিছু গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করি। এবং আদৌ পর্যন্ত পরিবার পরিজন ত্যাগ করে যাযাবরের মত দিন অতিবাহিত করছি। তার বিচার অবশ্যই হবে এবং সাধারণ মানুষের আমানতের টাকা ফেরত পাবে ইনশাল্লাহ।

উক্ত অভিযুক্ত শাহজাহান গ্রেফতারের খবর ফরিদগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে শতশত আমানতকারী গ্রাহক খোঁজ খবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবং ২ নং আসামী তার স্ত্রী বাবেয়া বেগম জামিন পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আমানতকারীরা তাদের আমানতের টাকা ফেরত পাওয়াসহ বিপুল অর্থ আত্মসাতকারী শাহজাহানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:১০ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ