Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে পানিশূন্য সেচখাল, হতাশায় কৃষক
সেচখাল
কৃষকদের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার

ফরিদগঞ্জে পানিশূন্য সেচখাল, হতাশায় কৃষক

চলছে বোরো মৌসুম। ধানের চারা লাগানোর এখন উপযুক্ত সময়। কিন্তু সেচ খালে পানি না থাকায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ। একদিকে ধানের চারা লাগানোর উপযোগী সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ধানের চারা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হওয়ায় দিশেহারা কৃষক।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পূর্বাঞ্চলের সেচখালগুলো পানি শূণ্য থাকায় এর প্রভাব পড়েছে বোরো আবাদে। পানির অভাবে গত এক মাসেও ধানের ক্ষেতে চারা লাগাতে পারেনি ওই অঞ্চলের কৃষকরা। ধানের চারা প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের আদশা, খাজুরিয়া, মান্দারতলী, সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ঘড়িহানা, চৌরাঙ্গা, গোবারচিত্রা, সাচনমেঘে, বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের মাছিমপুর, বালিথুবা, ডিয়ার মন্ডলসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পাশ^বর্তী রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুরা গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষকদের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার।

চাঁদপুর সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে খালে পানি সরবরাহ না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়নে নতুন বাড়ি নির্মানে সরকারি খালে রাস্তা নির্মান এবং নতুন ব্রীজ নির্মানে বাঁধ দিয়ে পানি যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় খালে পানি প্রবাহ হচ্ছে না।

বুধবার সরেজমিন গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, একরের পর একর জমি কৃষকরা ধানের চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখলেও পানির অভাবে ধান রোপন করতে পারছেন না। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে খালে পর্যাপ্ত পানি চলে আসায় তারা সেচের মাধ্যমে বোরো মৌসুমে চাষাবাদ করতেন। কিন্তু এবছর জানুয়ারি মাস পার হয়ে গেলেও পানি আসার খবর নেই।

সেচখাল

আদশা গ্রামের কৃষক আবুল কালাম, টেলু পাঠান, খোরশেদ আলম, আবুল খায়ের , মানিক হোসেন, মফিজুল ইসলাম জানান, পানির অভাবে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ধান ক্ষেতে একবারের স্থানে কয়েকবার হাল দিতে হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেতে পানি কিনে ধান রোপন করলেও পানির অভাবে পারছেন না বাকী গুলো। কয়েকশত একর ধানের আবাদী জমি এভাবে পড়ে রয়েছে। কয়েকটি স্থানে ধান ক্ষেত পানির অভাবে মাঠ ফেটে চৌঁচির হয়ে গিয়েছে।

আদশা গ্রামের সেচ ম্যানেজার আব্দুল কাদের জানান, তিনি সেচ মেশিন নিয়ে প্রস্তুত থাকলেও খালে পানি না থাকায় সেচ করতে পারছেন না।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ বলেন, প্রতিবছর জানুয়ারির শুরুতে পানি আসলেও এবছর তার ব্যতিক্রম। জানুয়ারী শেষ হয়ে এখন ফেরুয়ারী শুরু হয়েছে এখন পর্যন্ত খালে পানি আসেনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান বলেন, সরিষা চাষের জন্য এবার পাউবো খালে পানি ছাড়তে কিছুটা বিলম্ব করেছে। তবে আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে পানির সমস্যা সমাধান হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ড. সাফায়েত আহমেদ সিদ্দিকী জানান, বিষয়টি জেনে তাৎক্ষনিক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সরেজমিন গিয়ে দেখার নিদের্শনা দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার ডিডিও এই বিষয়ে পাউবোকে বলেছে। আমিও বলবো যাতে দ্রুত পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে।

এব্যাপারে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম জানান, সেচ খালের উপর বেশ কয়েকটি ব্রীজ নির্মিত হওয়ায় খালে বাঁধ ছিল। গত সোমবার আমরা লোক দিয়ে সেগুলো অপসারণ করেছি। আশা করছি ৩/৪ দিনের মধ্যে ফরিদগঞ্জের পুর্বাঞ্চলের খালে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩