প্রতিবন্ধীতার বাঁধা ডিঙ্গিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন ফরিদগঞ্জ পৌরসভার প্রতিবন্ধী যুবক ফরিদ।
সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের কর্মস্পৃহায় অনেকটা পথ এগিয়েও গিয়েছিলেন। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন ভিক্ষাবৃত্তি নয় কাজ করে অর্থ উপার্জন করে বেঁচে থাকবেন। কিন্তু ২য় বারের মত আবারো ফরিদের দোকানে হানা দিয়েছে চোরের দল। নিয়ে গেছে নতুন কম্পিউটার ও গ্রাহকের মেরামত করতে দেওয়া মোবাইল ফোনসহ মালামাল।
নিঃস্ব প্রতবিন্ধী ফরিদের মনে এখন হতাশা আক্ষেপের ভাষায় হলো ‘ ভিক্ষা করা ছাড়া আমার আর কোন পথ থাকলো না।’
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ালী হাজী বাড়ির সোলায়মান হাজীর ছেলে মো. ফরিদ হোসেন গত ৫ বছর পূর্বে গাছ থেকে পড়ে পঙ্গু হয়ে যায়। তার শরীরের কোমর থেকে পা পর্যন্ত অকেজো হয়ে গেছে। কিন্তু পঙ্গু শরীর নিয়ে সে বসে থাকেনি। বেছে নেয়নি ভিক্ষাবৃত্তির মতো পেশা। ঢাকার পক্ষাগ্রস্থ পূর্নবাসন কেন্দ্র থেকে কম্পিউটার ও মোবাইল মেরামতের ওপর ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে পূর্ব বড়ালী শাহজাহান কবির হাইস্কুল সংলগ্ন স্থানে ফরিদ কম্পিউটার স্টোর এন্ড ভেরাইটিজ নামে একটি দোকান দেন।
হুইল চেয়ারে বসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনি তথপ্রযুক্তি বিষয়ে মানুষের নানা সেবা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিনের মত গত বৃহস্পতিবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান। আর এই রাতই আবারো প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফরিদের জন্য কাল রাত হয়ে আসলো।
ফরিদের সাথে যখন এ প্রতিনিধির কথা হয় তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয়ে আসছিলোনা। হতাশাগ্রস্থ হয়ে শুধু ফেল ফেল করে উপস্থিতত লোকজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলেন। উপস্থিত লোকজন ও চুরির ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছিলেন।
ফরিদ চাঁদপুর টাইমসক জানান, ‘আমি প্রতিবন্ধী। নিজের উপার্জন দিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলাম। প্রথমবার গত বছরের ১৬ আগস্ট দোকানে চুরি হওয়ার পর জেলা পরিষদের আর্থিক সহযোগিতা ও ঋণ করে একটি কম্পিউটার ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু আবারো দোকানে চুরি হওয়াতে আমি নিঃস্ব^ হয়ে গেলাম। কিভাবে বৃদ্ধ মা-বাবার জন্য দুমুঠো ভাত জোগাড় করবো তা নিয়ে আমি চিন্তিত। ভিক্ষাবৃত্তিকে আমি মন থেকে ঘৃণা করলেও এখন ভিক্ষা করা ছাড়া আমার কোন উপায় থাকলো না। আগের বারও চোরের দল আমার দোকান থেকে নগদ টাকাসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামালা নিয়ে যায়। আমার অপরাধ কি? স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র এঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের দাবি জনাচ্ছি।
এদিকে স্থানীয় লোকজন জানায়, ওই এলাকাতে একটি ভবঘুরে চক্র সক্রিয় রয়েছে। যারা এলাকাতে মাদক বিক্রি, ইভটিজিং, চুরি-ডাকাতির সাথে জড়িত। এরইমধ্যে ওই এলাকাতে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার পাশ^বর্তী শাহাদাত মোদী স্টোরেও চুরির ঘটনা ঘটে। এনিয়ে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
এদিকে ফরিদ আরো জানায়, ‘ প্রথমবার চুরির পর তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এবারো চুরির পর থানার ওসি স্যারকে জানানো হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এসম্পর্কে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ আলম বলেন, ‘কেউ একজন আমাকে ফোনে প্রতিবন্ধীর দোকানে চুরির বিষয়টি জানিয়েছে। কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ওই এলাকাতে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রতিবেদক- আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮:৪৩ পিএম, ৯ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur