চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে সাড়ে চার মাসে পবিত্র কোরআন শরীফ হাফেজ হয়ে চমক দেখিয়েছে নয় বছরের শিশু আব্দুল আউয়াল। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায়ও সে সকল বিষয়ে শতভাগ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে।একই সাথে দুই ধারার দুটি প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে সে প্রতিভার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ কড়ৈতলী গ্রামের মৌলভীবাড়ির মোঃ মোশারফ হোসেন ও মাজেদা আক্তার দম্পতির ছেলে। দুই সন্তানের মধ্যে আব্দুল আউয়াল বড়। বাবা বর্তমানে ৫৮নং পশ্চিম ভাওয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ওই বিদ্যালয়েই বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল আউয়াল।
বাবা আব্দুল আউয়াল সর্ম্পকে বলেন,শিশু বয়স থেকেই তার মেধার পরিচয় তিনি পেয়েছেন। তাই তার প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়ার জন্যে তিনি তাকে নিজের বিদ্যালয়ে ভর্তি করান।
তিনি জানান, আব্দুল আউয়াল সারাদিন দুষ্টুমি করতো। পড়তো অল্প কিছুক্ষণ। আর তাতেই সে তার স্কুলের পড়া শেষ করতে পারতো। এদিকে দাদীর আশার উদ্রেক নাতির আলেম হওয়ার স্বপ্ন এবং চাচা মুফতি মুনাওয়ার হোসেনের আগ্রহে তাকে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সাথে মাদ্রাসার হিফ্জ বিভাগে পড়ানোর জন্যে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। প্রথমে চাঁদপুরে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করালে পরববর্তীতে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আবদুল আউয়ালকে তিনি ভর্তি করান। মাদ্রাসার নূরানী ও নাজেরা শাখায় ভর্তি হলেও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের আগ্রহ ও তার মেধা দেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও তার পড়াশোনা অব্যাহত রাখেন তিনি। ফলে এক সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানে দু’টি ধারায় সে অধ্যয়ন করেছে এবং সফল হয়েছে।
ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, তার ছেলে একজন আলেম হওয়ার সাথে সাথে সে যদি সাধারণ শিক্ষা নিয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা যে কোনো পেশায় যেতে আগ্রহী হয় তবে আমি সেই চেষ্টা করবো।
জামালুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও পরিচালক হাফেজ মাওলানা ইবনে আহমদ ওয়ালী উল্লাহ জানান, শিশু আব্দুল আউয়াল তার মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর এক বছরের মধ্যেই নূরানী ও নাজেরা শেষ করে। পরে হিফ্জ বিভাগে ক্লাস শুরু করে। আর সফলভাবে শেষ করে অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ কোরআনে হাফেজ হয় চলতি বছর তথা ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি। মাঝে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্যে সে ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছিলো। এ হিসেবে সাড়ে চার মাসেই সে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করে এক অবিশ্বাস্য রকমের চমক দেখালো।
তিনি জানান, আব্দুল আউয়াল প্রথম দিকে প্রতিদিন ৩ পৃষ্ঠা করে পড়া দিতো। শেষদিকে এসে সে দিনে ৬/৭ পৃষ্ঠা করে পড়া দিতে পারতো। আব্দুল আউয়াল এমনিতে সারাদিন খুব একটা পড়াশোনা করতো না। অল্পতেই তার পড়া মুখস্থ হয়ে যায়। তার মেধা দেখে তাকে পড়ালেখায় আরো আগ্রহ করার জন্যে নিয়মিত পড়ার জন্যে পুরস্কারের ব্যবস্থা করি। এতে সে আনন্দের সাথেই পড়ালেখা করেছে। আবার অমনোযোগী হলে পুরস্কারের সাথে সাথে জরিমানা দিতে হবে এ কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দিলে সে পথে আর সে পা বাড়াতো না।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানান, আব্দুল আউয়াল হাফেজ হলেও সে নিয়মিত এ চর্চা অব্যাহত রাখবে। ভবিষ্যতে আলেম হওয়ার সাথে সাথে তিনি আশা করছেন উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সে যেনো নিজেকে আরো শাণিত করে তোলে। পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী ভালো একটি প্রতিষ্ঠানে সে পড়তে পারলে পরিবারের পাশাপাশি দেশের জন্যে সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে। তবে এজন্যে তার পরিচর্যা করতে হবে। তার এ প্রতিভা যেনো কোনো কারণে ক্ষয়িষ্ণু না হয় সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে পরিবারকে।
সর্বদা হাসিমুখে থাকা আব্দুল আউয়াল মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠীদের কাছে আজ একটি গৌরবের অংশ। তার শিশু মনের আশা, তার মতো আরো অনেক হাফেজ বেরিয়ে আসবে এ মাদ্রাসা থেকে। কারণ, মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক পরিচালক হাফেজ মাওলানা ইবনে আহমদ ওয়ালী উল্লাহ ও সহকারী শিক্ষক হাফেজ মেহেদী হাসানের মতো শিক্ষক এ মাদ্রাসায় রয়েছেন।
চাঁদপুর টাইমস রিপোট
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur