ফরিদগঞ্জে সাংবাদিক কন্যাকে বাসায় ঢুকে অপ‌হরণের চেষ্টা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মী গাজী মমিনের কন্যাকে অপহরণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। ব্যর্থ হয়ে তাকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। তিনি এ বছর অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ধারালো অস্ত্র দ্বারা তার হাতে, মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করা হয়েছে। তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোববার দিবাগত রাত দুই ঘটিকার পর এ ঘটনা ঘটেছে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার নিজ বসত ঘরে।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী জানিয়েছে, রাত আনুমানিক দুই ঘটিকার পর ঘুমন্ত কন্যা মোহনা আক্তার রেহানা (১৫)কে মাথায় হাত বুলিয়ে জাগিয়ে তোলা হয়। চোখ মেলতেই তার মুখ চেপে ধরে দুর্বৃত্তরা। তারা সংখ্যায় তিনজন যুবক বলে কন্যা জানিয়েছেন। তাদের একজনের বয়স ২০/২১ বছর অন্যদের বয়স ২৭/২৮ বছর হবে। একজন সর্বক্ষণ তার মুখ চেপে ধরেছিল। তারা তাকে পাকা বসত ঘরের বাইরে যেতে বলেন। রেহানা রাজি না হলে বেশ কিছু সময় তার সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি চলে। এক পর্যায়ে তারা বসত ঘরের বাইরে নিয়ে যায়। ওই সময় পাশের বাড়িতে লোকজন দেখা যায়। তাদের মধ্যে থাকা পুলিশ দেখে অপহরণ চেষ্টা কারীদের দুজন আড়ালে চলে যায়। মুখ চেপে ধরে রাখা অপর একজনের হাতে সজোরে কামড় বসিয়ে দিলে ওই ব্যক্তি তাকে ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ছাড়া পেয়ে রেহানা ঘরে গিয়ে মাকে ডেকে তুলেন ও ঘটনা জানান। অপর কক্ষে ঘুমিয়ে থাকা বাবা মমিন গাজীকে ডেকে তুললে তিনি ছুটে গিয়ে বাইরে খোঁজাখুঁজি করেন। তিনি কাউকে পাননি। এরপর রাত তিন ঘটিকা নাগাদ তিনি থানা পুলিশকে জানালে এস.আই. আমজাদ ও এস.আই. খোকন চন্দ্র সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তার বাড়িতে যান ও ঘটনার বর্ণনা শোনেন। পরে মমিন গাজী তার কন্যাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসাদ উজ জামান জুয়েল বলেছেন, নির্যাতনের শিকার ও আহত কন্যা ঝুঁকিমুক্ত আছেন।
মমিনের মেয়ে রেহানা, তার ওপর পরিচালিত নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, তারা তার মাথার চুল কেটে দিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন যাবত বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দুজন যুবক তাকে নানা কটু কথা বলেছে। জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, বাবা মাকে লজ্জায় বলিনি। তবে, রাতেই একটি কাগজে পথে উত্যাক্ত করার ঘটনা লিখে রেখেছি, সকালে মা’র হাতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু, তার আগেই আমার নির্যাতন চালানো হলো।

মমিন গাজী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে ধারণা করা হচ্ছে কেউ রাতে ঘরের ভেতরে আগে থেকে অবস্থান করছিলেন। রাত ৯ ঘটিকা নাগাদ মমিন গাজীর কন্যা ও রাত এগার ঘটিকা নাগাদ বাবা মা আলাদা কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। মমিন গাজী দৈনিক আজকের পত্রিকার ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি। এ ছাড়া, স্থানীয় একটি পত্রিকা ও একটি আইপি টিভিতে রিােপর্টিংয়ের কাজ করেন। মোহনা আক্তার রেহানা স্থানীয় পূর্ব বড়ালি কবির আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের এ বছরের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) শাহ আলম বলেছেন, আমরা প্রাথমিক তদন্ত করেছি ও খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ ছাড়া, মমিন গাজীর অভিযোগের অপেক্ষায় আছি। অভিযোগ প্রাপ্তির পর সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জের সাংবাদিকবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা, সহকর্মীর কন্যার ওপর পরিচালিত নির্যাতকদের খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় নেয়ার জন্য ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের সাথে দেখা করে, আহ্বান জানিয়েছেন। এ ঘটনায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া বলেছেন, আমি ঘটনা শুনেছি ও থানার অফিসার ইনচার্জকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছি।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম জানান, আমি ঘটনা শুনা মাত্রই পুলিশ পাঠিয়েছি এবং আমি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াদিন রয়েছে। দ্রুতই অপরাধিদের আইনের আওতায় আনা হবে।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

Share