ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝকঝকে ভবনে বেহাল দশায় শহীদ মিনার

বাংলা ভাষার জন্য বাংলাদেশের যে সকল সূর্য সন্তানরা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মৃতি ধরে রাখার আশায় চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা জরাজীর্ন শহীদ মিনারের বেহাল চিত্র দেখে অনেকেই হতবাক হয়েছেন।

বিদ্যালয় ভবনটি ঝঝঝকে হলেও জরাজীর্ণ রয়ে গেছে শহীদ মিনার। গত কয়েক বছরে ধরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এতে ফুল দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সরজমেনি গিয়ে উপজেলার ৫নং গুপ্টি ইউনিয়নের ৪১ নং গুপ্টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এমন চিত্র দেখা যায়।

স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার পূর্বাঞ্চলে গুপ্টি বাজার সংলগ্ন ১৯৪০ সাথে স্থাপিত হয়েছিল গুপ্টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হয়েছিল এই শহীদ মিনার। এটি স্থাপনের পর থেকে প্রতিটি জাতীয় দিবসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী শহীদদের সম্মানে ফুল দিয়ে নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো দীর্ঘদিন থেকে ওই শহীদ মিনারটির ইটবালু খসে পড়ছে। শুধু তাই নয়, তিনটি স্তম্ভের মধ্যে একটি স্তম্ভের প্রায় অর্ধেক ভেংগে আছে।

এমন অবস্থায়ই এই শহীদ মিনারে জাতীয় দিবসে ফুল দিয়ে নানা কর্মসূচী পালন করে আসছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নয়নের জন্য স্লিপ মানি হিসেবে অর্ধলক্ষ টাকা বরাদ্দ করে থাকে। এত কিছু পেয়েও সামান্য কিছু অর্থের অজুহাত দেখিয়ে শহীদ মিনারটির সংষ্কারের কোন আন্তরিক উদ্যেগ নিতে পারলেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ।

শুধু তাই নয়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কোন কর্মকর্তা কিংবা ওই স্কুলের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা ক্লাষ্টারের (সহকারী শিক্ষা অফিসার) এর নজরেও বিষয়টি না পড়ায় অনেকেই হতবাক হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওই স্কুলের ক’জন ও সাবেক এক শিক্ষার্থী জানায়, প্রতি বছর আমাদের প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে জরাজীর্ন এই শহীদ মিনারেই আমরা শহীদদের স্বরণে ফুল দিয়ে থাকি।

সোমবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছির উদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ওই শহীদ মিনারটির জরাজীর্ণের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি এই স্কুলে ২০১৭ সালের প্রথম দিকে যোগদান করেছি। শহীদ মিনারটির ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব তো আমার নয়। এটা নিয়ে নিউজ করলে করেন, তাতে আমার কি?

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জরাজীর্ন শহীদ মিনারটি সংষ্কার না করে এটি ব্যবহার করা ঠিক করেনি প্রধান শিক্ষক।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি হরি বলেন, শহীদ মিনারটি ঠিক না রেখে এটি ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি অবশ্যই অপরাধ যোগ্য। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। তবে যেহেতু আপনারা (সাংবাদিক) আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন আমি অবশ্যই বিষয়টি দেখবো এবং প্রয়োজনে ওই স্কুলে যাবো।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান উক্ত বিষয়টি জেনে স্কুল কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে জরুরী ভিত্তিতে জরাজীর্ন ওই শহীদ মিনারটি নতুন ভাবে নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

প্রতিবেদক:শিমুল হাছান, ৬ জানুয়ারি ২০২০

Share