চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ঘুষের টাকা না দিতে পারায় এক প্রতিবন্ধীর ভাতার কার্ড বাতিলের অভিযোগ উঠেছে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী শারিরিক প্রতিন্ধী অর্চনা রানী সরকার প্রতিকার পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। যদিও অভিযুক্ত সমাজসেবা অফিসের সুপারভাইজার পান্না রহমান তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন।
জানা গেছে, অর্চনা রানী জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধি। তার একটি পা অন্যটির চেয়ে কয়েক ইঞ্চি ছোট। চলাফেরা করার সময়েই তার প্রতিবন্ধী বিষয়টি চোখে পড়ে। যদিও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের চোখে এটি ধরা পড়েনি(!) । অর্চনা রানী গত ৭ বছর ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছিল। সম্প্রতি তার ভাতার বইতে টাকা জমা না হওয়ায় সমাজসেবা অফিসে গিয়েই বিপদে পড়েন ওই প্রতিবন্ধী নারী।
সমাজ সেবা অফিসের সুপারভাইজার পান্না রহমান তার ভাতার বইটি নিজের কাছে নিয়ে জানান, অর্চনা প্রতিবন্ধী নয়। এই ওই প্রতিবন্ধী নারীর অনুনয় বিনয় শুনেননি তিনি। উল্টো তার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবী করেন বই ঠিক করে দেয়ার জন্য।
অর্চনা রানী জানান, নিজস্ব সম্পত্তি নাথাকায় সরকারি সম্পত্তির উপর অস্থায়ী ঘর তুলে বসবাস করেন। পারিবারিক অভার অনটনের কারনে মন্দিরে পরিস্কার পরিচ্চন্নতার কাজ করেন তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে প্রতিবন্ধি ভাতা পেয়ে আসছেন। কিন্তু অফিসে গেলে পান্না রহমান তার বইটি বাতিল হয়েছে বলে জানিয়ে তার কাছ থেকে ১০ হাজার দাবী করেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কাছে গিয়ে গিয়ে কাকুতি মিনতে করলেও তিনিও অর্চনাএক শারিরিক প্রতিবন্ধী বলে মনে হয় না বলে লিখে দেন। তার প্রতিবন্ধীর বিষয়টি দৃশ্যমান।
প্রতিবন্ধি অর্চনা রানী আরো বলেন, তারা আমার ভাতার বই রেখে দিয়ে পান্না রহমান বলেন আপনি প্রতিবন্ধি না, এরপর তারা আমার শরীর দেখাতে বলে, আমি দেখাই। কিন্তু কিছুতেই তাদেও মন গলেনি। আমি ইতিমধ্যেই সরকারি হাসপাতাল থেকে আমার শারিরিক প্রতিবন্ধীত্বে বিষয়ে কাগজ জমা দিয়েছি। কিন্তু অদ্যবদি কোন কিছুই হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ইউএনও ও পৌর মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতিবন্ধীরা জানান, আমরা বিভিন্ন সহযোগীতার জন্য সমাজসেবা অফিসে আসলে আগে পান্না মেডামের সাথে যোগাযোগ করা লাগে। তিনি আমাদেরকে গালমন্দ ভাষা ব্যবহার করে কথা বলেন।
ঘুষ দাবী করার বিষয়ে জানতে চাইলে ফিল্ড সুপার ভাইজার পান্না রহমান জানান, অর্চনা রানীর সুবর্ণ নাগরিক কার্ডটি নাই। প্রতিবন্ধি ভাতার জন্য যখন আসছে তখন তাকে শুধু একথা বলা হয়েছে। একজন অর্থপেডিক ডাক্তার দেখাইয়া একটা প্রত্যায়ন আনতে। এরপর এই কার্ডটা (সুবর্ণু নাগরিক) কার্ডটা হলে একদম এ্যাকুরেট হয়ে যাবে। আর কিছুনা।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিবন্ধি সনাক্ত করার বিষয়টা ডাক্তারী বিষয়, আমরা যদি হওয়ার মত দেখি তখনই ডাক্তারের কাছে পাঠাই, প্রয়োজনীয় উপদেশ দেই, যদি কেউ এধরনের বিষয়ের (ঘুষ লেনদেন) জড়িত থাকে এবং প্রতিয়মান হয় অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুধু প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনই নয়, পরিচয় গোপন রাখার শর্তে অফিসের অন্যান্য কর্মচারীরা জানান, অফিসের উচ্চমান সহকারি, অফিস সহকারিসহ অন্যান্যদের কোন কারণ ব্যাতিত অফিসের কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়েছে। সুপারভাইজার ফারজানা ও সুপারভাইজার পান্না রহমানের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে, নিজেও সুবিধা নিয়ে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। পান্না রহমানের সাথে উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতা রয়েছে। তাই তিনি খামখেয়ালীপনার মধ্যদিয়ে চলাফেরা করলেও কেউ তাকে কিছু বলার সাহস পায়না।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান,২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur