ফরিদগঞ্জে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, এক বছরেও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি

ফরিদগঞ্জে এক বছরেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত রিপোর্ট। তদন্তে অপরাধি চিহ্নিত হওয়ার পরও কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ৪৯তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আন্তস্কুল ফুটবল টুর্ণামেন্টে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয় শোল্লা স্কুলের ১৫ জন শিক্ষার্থীকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে চঁাদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরদিন, দৈনিক চঁাদপুর দর্পণ পত্রিকায় সচিত্র রিপোর্ট ছাপা হয়। ওই ঘটনায়, তিনদিন পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন ইউএনও তাছলিমুন নেছা। অপরাধে জড়িতদের নাম-ধাম তদন্তে বেরিয়ে আসে। স্বগতিক এ.আর. পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এর গাফিলতিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের চিহ্নিত করা হয়। হামলার শিকার শোল্লা স্কুলের প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বলেছেন, তদন্তে কি হয়েছে আমরা আজও জানি না। এ কারণে, আমরা গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বর্জন করেছি। ওই খেলায় বহিরাগত আটজন শিক্ষার্থী খেলায় অংশ নিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বছরও, ৫০তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চারটি বিদ্যালয়ে বেদম মারামারির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ খ্রিঃ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার। ৪৯তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিকালে আন্তস্কুল ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে, স্বাগতিক ফরিদগঞ্জ এ.আর. পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় বনাম শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ৩-১ গোলে বিজয়ী হয়ে আনন্দ উল্লাস করার সময় বেশ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ও তরুণ শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে বেদম মারধর করে। রক্তাক্ত জখম হয় অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী। হামলাকারীদের হাত থেকে শোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চঁাদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনদিন পর ইউএনও অফিসার তাছলিমুন নেছা সভা আহবান করেন। অপরাধ তদন্তের জন্য পঁাচ সদস্য বিশিষ্ট্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল আহ্বায়ক, গাজীপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল লতিফ, কেরোয়া হোসনে আরা বেগম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিপক কুমার রাউত, পূর্ব বড়ালী শাহজাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেছার আহম্মদ ও ফরিদগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার এস.আই এস.এম. জামালকে সদস্য করা হয়। তারা, তদন্ত পূর্বক অপরাধী চিহ্নিত করে এক সপ্তাহের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমুন নেছা বরাবর রিপোর্ট পেশ করেন।
ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেছে। রিপোর্ট প্রকাশ বা কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলাফল হিসেবে এ বছরও একই খেলায় অন্তত চারটি বিদ্যালয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে, আহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। খেলা বাতিল করা হয়েছে। শোল্লা স্কুল এন্ড কলেজ এর অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান বলেছেন, আমরা আজও জানি না রিপোর্টে কি পাওয়া গেছে। আমাদের গভর্ণিং বডি, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি। তাদের মনের ঘা আজও শুকোয়নি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান আশিক জামিল, আমরা তদন্ত পূর্বক এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করেছি নির্বাহী অফিসার বরাবর। তদন্তে অপরাধের প্রমাণ মিলেছে ও অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছে। সদস্য আবদুল লতিফ বলেছেন, এস.এস.সি পরীক্ষার জন্য ফরম ফিল-আপ করেছে- ওই রকম শিক্ষার্থীকে বহিরাগত হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এস.আই জামাল বলেছেন, তদন্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি, এ.আর. পাইলট মডেল স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও কয়েকজনকে চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছিল। এদিকে, ভূক্তভোগী ও এলাকাবাসী এখনও বিচারের অপেক্ষায় আছেন।
এক বছরেও তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না করা ও অপরাধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করার বিষয়ে সোমবার বিকালে অফিস কক্ষে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এ.আর. পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তাছলিমুন নেছার সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তদন্ত রিপোর্ট নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেবো না কি। অপরাধি চিহ্নিত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এস.আই. জামালকে প্রশ্ন করেন। ব্যবস্থা নেবে তারা। নির্বাহী অফিসার ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে আপনার দায়িত্ব কি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্লিজ আমি ব্যস্ত আছি আর বেশি কিছু বলতে পারবো না।

এদিকে, এস.আই. জামাল বলেছেন, আমাদের দায়িত্ব তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের দায়িত্ব নির্বাহী অফিসারের।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

Share