চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে তিন যুবদল কর্মী হত্যার ১১ বছর পর আদালতে মামলা হয়েছে। ৮ ডিসেম্বর রোববার ফরিদগঞ্জ আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত যুবদল কর্মী আরিফ হোসেনের ভাই দেলোয়ার হোসেন। মামলায় ৩৩৫ নামিও এবং ৪শত জনকে অজ্ঞাত আসামিসহ মোট ৭৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবীতে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয় ১৮ দলীয় জোট। এরই অংশ হিসেবে ঐদিন বিকাল ৪টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার জোট নেতাকর্মীরা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে পৌঁছলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একযোগে মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায়। ফরিদগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি নাজমুল হকের দেওয়া তথ্যানুসারে মিছিলে ২৪২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি, ২৯ রাউন্ড চায়না পিস্তলের গুলি ও ১১ রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ছোঁড়া হয়। মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবদলের তিন কর্মী জাহাঙ্গীর বেপারী, আরিফ হোসেন ও বাবুল ভূঁইয়া নিহত হন। পরিবারের পক্ষ থেকে ঐ সময়ে মামলা করা হলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাল্টা মামলার কারণে তাদের মামলাগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং উল্টো মামলায় বাড়িঘর ছাড়তে হয় তাদের। ১১ বছরের অধিক সময় মুখ বুঝে সব সহ্য করলেও জুলাই আন্দোলনে পট পরিবর্তন হলে বিচারের প্রত্যাশায় নতুন করে বুক বাঁধেন ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজনরা। এরই ধারাবাহিকতায় ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে আদালতে মামলা করেন নিহত আরিফ হোসেনের ভাই দেলোয়ার হোসেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার, জাহিদুল ইসলাম রোমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম কাজল, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহফুজুল হক, যুবলীগ নেতা মো. মাসুদ হোসেন ভুঞা (কিলার মাসুদ), উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. অহিদুর রহমান রানা, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম রিপন, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারী আকবর হোসেন মনিরসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ৩৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০০ জনসহ মোট ৭৩৫ জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে। তবে এতে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কাউকে আসামী করা হয়নি।
নিহত জাহাঙ্গীর বেপারী উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের পূর্ব গাজীপুর তিনকড়ি বেপারী বাড়ির আব্দুল মতিন বেপারী ও তফুরেরনেছা দম্পতির ছোট ছেলে। রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের আব্দুল আলিম ও হাজেরা বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন এবং একই ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের আব্দুর রহিম ও সফুরা বেগমের ছেলে বাবুল ভূঁইয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করেছি। আমি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।
মামলার আইনজীবী মো. আবুল খায়ের স্বপন বলেন, মামলাটি আদালত আমলে নেয়ার পর তৎকালীন সময়ে ফরিদগঞ্জ থানায় যে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে ঐ মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। প্রতিবেদন পাওয়ার পরে মামলাটির পরবর্তী নির্দেশনা আসবে।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪