ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে মুসলিম নারীর মহানুভবতা…

এক হতদরিদ্র হিন্দু যুবকের মরদেহ সৎকারে হিন্দুরা বাধা দিলেও এগিয়ে আসেন এক মুসলিম প্রতিবেশী। ওই মুসলিম নারীর বদান্যতায় দরিদ্র হিন্দুর লাশ দাহ করা হয়।

বুধবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ অনন্য দৃষ্টান্তের সাক্ষী হয়ে থাকলো চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপটি গ্রাম। ওই গ্রামের সৈয়দা জাকিয়া বেগমের মানবিক সহায়তায় গোপাল চন্দ্র শীল (৩৪) নামের এক হিন্দু যুবকের শবদাহ করা হয়।

জানা গেছে, গুপটি গ্রামের শীল বাড়ির গোপাল চন্দ্র শীল নামে এক যুবক পায়ের গ্যাংগ্রিন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত মঙ্গলবার চিকিৎসক তাকে জানান যে, তারা বোধ হয় তার পা’টি আর রক্ষা করতে পারবেন না। জীবন বাঁচানোর জন্য তার পা’টি কেটে ফেলতে হবে।

ওই কথা শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান গোপাল চন্দ্র শীল। দরিদ্র গোপালের মরদেহ নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকাও ছিল না তার স্বজনদের কাছে। পরে এলাকাবাসীর সাহায্যে মরদেহ পৌঁছায় গ্রামের বাড়িতে।

এরপর শুরু হয় আসল বিড়ম্বনা। কোথায় সৎকার হবে গোপালের শব। তাদের যে কোনো শ্মশান নেই! তাদের শশ্মান যে দখল করে নিযেছে প্রতিবেশী আব্দুল গনি (বর্তমানে মৃত)।

প্রতিবেশী ঠাকুর বাড়ি, দাস বাড়ি, কর্র্মকার বাড়ি, ধোপা বাড়ি থাকলেও তাদের শ্মশানে জায়গা হচ্ছিল না দরিদ্র গোপালের। সারাটা দিন গোপালের মরদেহ নিয়ে একটু সৎকারের জন্য নানাজনের কাছে ছুঁটে বেড়িয়েছেন তার অসহায় বৃদ্ধা মা। কিন্তু কেউই তাকে মাত্র হাত কয়েক জায়গা দিতে রাজি হয়নি।

অবশেষে এগিয়ে এলেন প্রতিবেশী এক মহীয়সী নারী। তার নাম জাকিয়া বেগম। তিনি গোপালের মাকে বললেন, আর কারো কাছে যেতে হবে না। তিনি জায়গা দেবেন, দিলেনও। তবে এখানেও বাগড়া দিতে এগিয়ে এলো প্রতিবেশী দুই ভাই খোরশেদ ও শামীম। জাকিয়া বেগমের নিজ মালিকানাধীন জায়গায় যাতে হিন্দু লাশের সৎকার করতে না পারে সেজন্য ওই তারা এলাকার এক মাদকাসক্ত সন্ত্রাসী প্রকৃতির নাজমুলকে ভাড়া করে লাশটি ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। নাজমুল এসে দেখে শবদাহ শুরু হয়ে গেছে।

শেষ পর্যন্ত প্রতিবেশী জাকিয়া বেগমের মহানুভবতায় দরিদ্র গোপাল চন্দ্র শীলের সৎকারের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ কুড়ি ঘণ্টার ঘৃণা, অবহেলা আর স্বার্থান্বেষীদের নির্দয় ঠেলাঠেলির অবসান ঘটে।

জানা যায়, গোপাল শীলদের প্রতিবেশী সৈয়দা জাকিয়া বেগম অত্যন্ত দানশীল, পরোপকারী ও সজ্জন ব্যক্তি। প্রতিবেশী দরিদ্র পরিবারগুলোর তিনি অত্যন্ত আপনজন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সাহায্যেই এগিয়ে যান। তার প্রয়াত স্বামী সৈয়দ আব্দুল হকও ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও পরোপকারী মানুষ।

সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :

||আপডেট: ০৯:০৪  পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার

এমআরআর

Share