ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ল্যান্সনায়েক নুরুল ইসলামের স্ত্রীর মানবেতর জীবন

বাক প্রতিবন্ধী তফুরের নেছা (৮০) যার স্বামী মোঃ নুরুল ইসলাম খান গ্রাম সুবিদপুর (পূর্ব)। নুরুল ইসলাম খানের স্ত্রীর অভিযোগের আলোকে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) তার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তফুরের নেছা একটি দুই ছালা ঘরের বিছানায় পড়ে আছেন। কোন মতে কথা বলতে পারেন।

তিনি জানান, তার স্বামী ১৯৫৮ সালে তৎকালীন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে যুদ্ধে করেন। ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে তিনি পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় চট্টগ্রাম সেনানিবাসে শাহাদাতবরণ করেন। সেনাবাহিনীতে যার সনদ নং ছিল ৩৯৩২৩৩১। যা মেজর মোঃ রবিউল ইসলাম ডিএএ এন্ড কিউএমজি (পিএন্ডডবিøউ/ইবিআরসি রেকর্ডস) মোতাবেক স্বাক্ষরিত একটি সেনা মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রে উল্লেখ্য।

এছাড়া বিভিন্ন কাগজপত্র দেখে বুঝা যায় ল্যান্সনায়েক (শহীদ) নুরুল ইসলাম খানকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় এবং মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত সাময়িক সনদপত্র যার সনদনং ২০১৪৪৪৪ দেওয়া আছে এবং তৎকালীন মেজর মনির হোসেন কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ আছে।

এছাড়া ২০০৪ সালে মুক্তিযুদ্ধা তালিকা প্রস্তুত করার সময় তার নাম লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও সেনাবাহিনীর স্বাক্ষরিত অনেক কাগজপত্রে দেখা যায় তিনি ১৯৭১ সালে দেশের পক্ষে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে সেই কালরাত ২৫ই মার্চ তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে মারা যান।

এবং সেখানেই তাকে দাফন করেন। সে সময় তিনি ২ ছেলে ১ মেয়ে এবং স্ত্রী রেখে যান। বর্তমানে তারা অত্যান্ত মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাইজুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম একজন দিনমুজুর।

মেয়ে সামছুন্নাহার একটি দরিদ্র পরিবারে বিয়ে দেওয়ায় কোন মতে দিন চলছে।

তাদের আকুতি ‘বাবা দেশের জন্য যুদ্ধ করে জীবন দিয়েছেন। বাবা বেঁচে থাকলে হয়ত তারা আরেকটু ভাল থাকতেন। কিন্তু এখন বাবাকে হারিয়ে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত।

শহীদ মুক্তিযুদ্ধা নুরুল ইসলামের নাতি চায়ের দোকানদার মোঃ সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক বছর যাবত দাদার মুক্তিযুদ্ধের ভাতার জন্য অফিসে অফিসে ঘুরতে ঘুরতে হাপিয়ে উঠছি। ফরিদগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধা অফিসে মুক্তিযুদ্ধা যাচাই বাচাই হয়ে গেলেও আমার দাদার জন্য তারা কোন পদক্ষেপই নিল না।’

তিনি অত্যান্ত আক্ষেপ করে বলেন, ‘কত মানুষইতো মুক্তিযুদ্ধা না হয়ে এবং মুক্তিযুদ্ধাদের এক গøাস পানি পান করিয়ে মুক্তিযুদ্ধা হয়ে গেছেন। কিন্ত আমার দাদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েও এবং আমরা একটি শহীদ পরিবারের সন্তান হয়েও কিছুই পেলাম না।’
তফুরের নেছা নিথরদেহে বিছানায় পড়ে আছেন। তিনি কথা বলতে না পারলেও এ প্রতিনিধিকে আকারে ইঙ্গিতে বলতে চেয়েছেন তারা একটি শহীদ পরিবার। বর্তমান সরকারও মুক্তিযুদ্ধের সরকার। তারপরও কি তাদের পাশে দাঁড়াবে না কেউ?

আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:১০ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার
ডিএইচ

Share