ফরিদগঞ্জের আদশা গ্রামের আলোচিত মা ও তার দশ মাস বয়সী শিশু পুত্রকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার একজন ছাড়া সকল আসামী জেল হাজতে রয়েছে। তবে বাদী পক্ষের অভিযোগ, এ লোহমর্ষক হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আমিন পাটওয়ারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে তারা আতঙ্কে রয়েছেন।
নিহত মা ফাতেমা ও তার শিশু পুত্র ফুয়াদকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামী শাশুড়ি শামছুন্নাহার বেগম (৪৫), শ্বশুর সিরাজুল হক (৫৫), ননদ রুবী বেগম (২৪), ননদ জামাই আশ্রাফ আলী খান (৪০), দেবর শাহাদাত (২৬) ও ফজলে রাব্বী (২২) গত ৩১ ডিসেম্বর চাঁদপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিন মঞ্জুরের আবেদন করেন।
বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এর আগে ঘটনার দুই মাস পর মামলার প্রধান আসামী ঘাতক স্বামী রাসেল (২৮)কে ঢাকার দৈনিক বাংলার মোড় থেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে থানা পুলিশ। এদিকে মামলার অন্য আসামী এবং বাদী পক্ষের দাবি অনুযায়ী ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আমিন পাটওয়ারী হাইকোর্ট থেকে ৬ মাসের আগাম জামিন নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী নিহত ফাতেমার ভাই মনির হোসেন জানান, ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছাড়া অন্যরা জেল হাজতে থাকলেও তারা আতঙ্কে রয়েছেন। তারা বিভিন্নভাবে নতুন নতুন পরিকল্পনা তৈরি করছে মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্যে। তাই জেলের বাইরে থাকা আসামী আমিন পাটওয়ারীর জামিন বাতিল করে জেল হাজতে প্রেরণ করার আবেদন জানান তিনি। একই সাথে জেল হাজতে থাকা আসামীদের রিমান্ডে এনে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করার আবেদন জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২০ জুন ফরিদগঞ্জ উপজেলার আদশা গ্রামে যৌতুকের জন্য ফাতেমা বেগম ও তার ১০ মাস বয়সী শিশু পুত্র ফুয়াদকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার পর লাশ বসতঘরের পার্শ্ববর্তী ডোবায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ঘাতক রাসেল। ঘটনার পরদিন ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ওই ডোবা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। এ নৃশংস ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় উত্তেজিত লোকজন অভিযুক্ত রাসেলের বসতঘর ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ সময় পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে বাধা দিতে গেলে জনতার ইট-পাটকেল নিক্ষেপে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিলেন।
এক পর্যায়ে চাঁদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলাম ও সদর সার্কেল এএসপি নজরুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবদিন অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
পরদিন ২১ জুন নিহত ফাতেমার ভাই মনির হোসেন বাদী হয়ে রাসেল ও তার পরিবারের ৯ সদস্যকে অভিযুক্ত করে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই সময় ফাতেমার পরিবারের লোকজন জানিয়েছিলেন যৌতুকের জন্যে রাসেল ও তার পরিবারের লোকজন ঘটনার রাতে ফাতেমা ও তার শিশু পুত্র ফুয়াদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ডোবায় ফেলে দেয়।
তখন ফাতেমার পিতা আঃ গফুর আরো জানিয়েছিলেন, তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী রামগঞ্জ উপজেলার রাঘবপুর গ্রামে। ২০১৩ সালের ৭ মে ফরিদগঞ্জ উপজেলার আদশা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রাসেলের সাথে পারিবারিকভাবে ফাতেমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রাসেল বিভিন্ন সময় যৌতুকের কারণে ফাতেমাকে নির্যাতন করতো। ২০১৪ সালের শেষের দিকে তাদের সংসারে ফুটফুটে শিশু সন্তান ফুয়াদ জন্ম নেয়ার পর তারা ভেবেছিলেন হয়তো ফাতেমা নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু ঘাতক রাসেল ও তার পরিবারের লোকজন এভাবে ফাতেমা ও তার শিশু পুত্রকে হত্যা করবে তা তারা কখনো ভাবেননি।
ফরিদগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট || আপডেট: ০৫:০৯ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৬, বুধবার
এমআরআর