Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চায় তার পরিবার
Tumpa

ফরিদগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার চায় তার পরিবার

চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ মহিলা মাদ্রাসার দাখিল ৬ষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার টুম্পা (১৩)। দিনমজুর পিতা মো. মহিন পাটওয়ারী ঘরে যেনো একটুকরো চাঁদের আলো। অক্ষরজ্ঞানহীন মা পারভিন বেগম স্বপ্ন দেখতেন মেয়েকে অনেকদূর লেখাপড়া করিয়ে তাদের মতোই কোনো নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারের রাজপুত্রের হাতে তুলে দিবেন চাঁদের টুকরো মেয়েকে। গরীবের ঘরে এমন সুন্দরী মেয়ে, তাই বাবা মায়ের কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিলোই। কিন্তু ওই এলাকার সামাজিক নিরাপত্তা, এক প্রতিবেশীর সাথে অন্য প্রতিবেশীরর সম্পর্ক ছিলো খুবই শক্তপোক্ত।

কিশোরী টুম্পার দিকে নজর পড়ে মাদারীপুর জেলার ফরিদপুর চাঁনমিয়া এলাকা থেকে বিতাড়িত বখাটে-লম্পট ইসহাক মিয়ার (২২)। সে টুম্পাদের পাশের বাড়িতে (নানা বাড়ি) থেকে স্থানীয় বাজারের ট্রেইলাসের কাজ করবো। ওই এলাকার যুবকরা টুম্পাদের বোনের নজরে দেখে আমলেও ইসহাক দেখতো খারাপ দৃষ্টিতে। সে তার মামার বাড়িতে থেকে ওই এলাকায় স্কুল-মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়েদের জন্যে প্রেমের জাল ফেলে। কখোনো কখনো উত্তক্ত করতেও দ্বিধা করতো না। এভাবে ওই গ্রামের বহু সরলমনা কিশোরীকে সে প্রেমের জালে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ওই বাড়ির লোজজন বিষয়টি কমবেশি জানলেও প্রতিবাদ করে বিচার পায়নি। কারণ লম্পট ইসহাকের মামারা সবাই প্রবাসে থাকে। মামাদের প্রশ্রয় আর আহ্লাদে তাঁদের ভাগ্নে হয়ে ওঠে আরো বেপোরোয়া।

প্রথম দিকে সে জালে পা রাখেনি তানজিলা আক্তার টুম্পা। কিন্তু ভন্ড প্রেমিক ইসহাকের উপর্যপরি উত্তক্ত হওয়া আর প্রেমের অভিনয়ে এক পর্যায়ে সে জালে আটকে যায় টুম্পা। ইসহাকের নানী ও মামিদের সহোযোগিতায় টুম্পার সাথে তাঁর শারীরিক সম্পর্কও গড়ে উঠে। লোকলজ্জা এবং বাবা মায়ের ভয়ে নিজের ভুল করার বিষয়টি নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করে চলে কিশোরী মেয়েটি। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় পরিবারের অগোচরে ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস দেয় চাঁদকন্যা টুম্পা।

সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়ে দেয়া এমর মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ নভেম্বর চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডস্থ পাটওয়ারী বাড়িতে। এই ঘটনার ১মাস পেরিয়ে গেলেও আটক হয়নি লম্পট-বখাটে ইসহাক মিয়া। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে সে। এই পালিয়ে যাবার পেছনে সহযোগিতা ছিলো ইসহাকের নানী ও মামিদের। হয়তো অবহেলা ছিলো ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশেরো। যার কারণ টুম্পার পিতা মহিন পাটওয়ারী সামান্য দিনমজুর- গরীব। মৃত্যুর পরে লাশ পোস্টমর্টেম করার সময় তার পরিবার জানতে পারে টুম্পা গর্ভবতী ছিলো।

এ বিষয়ে সরেজমিনে তানজিলা আক্তার টুম্পার বাড়িতে গিয়ে তারর পিতা মহিন বেপারী সাথে কথা হলে তিনি জানায়, আমার মেয়েটি অত্যন্ত শান্তশিষ্ট ছিলো। সে মাদ্রাসায় যাবার সময় বখাটে ইসহাক মিয়া প্রায় তাকে উত্তোক্ত করতো। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬. ৫ মিনিটের ইসহাকে মোবাইল (০১৪০০৯৯৭৭০৪) থেকে একটি ফোন আসে টুম্পার মায়ের মোবাইলে। টুম্পা মায়ের মোবাইলে লুকিয়ে কথাও বলে। এর পরই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আত্মহত্যা করে কিশোরি টুম্পা। ঘটনার পর থেকে নানী ও মামিদের সহোযোগিতায় পালিয়ে যায় ইসহাক।

মহিন বেপারী আরো জানান, ঘটনার পর থেকে ইসহাকের নানী শুক্কুরী বেগম এবং খালাতো ভাই মিলন তাঁদের নানানভাবে ভয় দেখিয়ে হুমকি দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে যদি পুলিশকে জানালে কিংবা মামলা করলে তাঁদের ক্ষতি করা হবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। তিনি চাঁদপুরের পুলিশ প্রশাসনের কাছে মেয়ে হত্যার বিচায় চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ো ফরিদগঞ্জ থানায় এটি জিডি করেছেন তিনি। যার জিডি নং ৮৯৬/ তাং ১৮/১১/২০১৯।

এ বিষয়ে বাড়ির প্রতিবেশী মসহিন জানান, বখাটে ইউসুফ তার মেয়েকসহ এলাকার বহু মেয়েকে সে নানাভাবে উত্তক্ত করতো। রুমনা বেগম বেগম ও নেহার বেগম অভিযোগ করে বলেন, এই ছেলেটি এতোটাই খারাপ ছিলো যে এলাকার বহু মেয়েকে সে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে। সে তার নিজের জেলা থেকে এমন ঘটনার কারণে বিতারিত হয়ে নানার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এই ছেলেটির বিচার না হয়ে তার কারণে এনম বহু টুম্পার জীবন নিভে যাবে।

এদিকে ঘটনা বিষয়ে অভিযুক্ত ইসহাক মিয়ার নানার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার মামা পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ বেগমের ও আরেক মামা অালমগীরের সাথে। তারা জানান, দুই বছর ধরে ইসহাক তাদের বাড়িতে থাকছেন। কিন্তু টুম্পার সাথে ইসহাকের সম্পর্কের বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা। এ প্রতিবেদককে তার আরো জানান, ইসহাক অপরাধী হলো তার সর্বোচ্চ শাস্থি দেয়া হোক।

মামলার তদন্তকারী কর্মকতা জাফর আহমেদ জানান, টুম্পার সাথে স্থানীয় এক যুবকের সম্পর্ক ছিলো। সে অন্তঃসত্তা ছিলো কি না বিষয়টি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে জানা যাবে। তবে টুম্পার পরিবার সকল প্রকার আইনী সহযোগীতা পাবেন বলে আসস্থ করেন তিনি।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা ওসি অব্দুর রাকিব বলেন, টুম্পার আত্মহত্যার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। তবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে এলেই আমরা আইনী ব্যবস্থা নিবো। অভিযুক্ত আসামীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার পরোচনায় মামলা করা হবে।

স্টাফ করেসপন্ডেট