ফরিদগঞ্জে মাদ্রাসার সুপারকে পুর্নবহাল করাকে কেন্দ্র করে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে, শাহ পরান সুজন নামক এক ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। তিনি চঁাদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ছাত্রীর সাথে মাদরাসা সুপারের অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার গুজবের জের ধরে ওই সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
১৮ অক্টোবর বুধবার দুপুরে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে উপজেলার খাজুরিয়া বাজারে। এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
সরেজমিন জানা গেছে, খাজুরিয়া বাজার সংলগ্ন ‘খাজুরিয়া ওল্ড স্কিম দাখিল মাদরাসা’র সামনের চা দোকানে বসেছিলেন জনৈক লিটন (৩০)। তিনি ওই মাদরাসার সুপার আবুল বাসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাকে পুনর্বহাল করা হচ্ছে মর্মে সমালোচনা করে মন্তব্য ও কটুবাক্য করছিলেন। এতে, প্রতিবাদ করেন মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ী মিজান মোল্লা (৫০)। দুজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাধে। তাদের থামাতে লোকজন এগিয়ে যান। পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী ইব্রাহীম খলিল (৫০) মিজান মোল্লাকে শান্ত করার জন্য ধরেন। ঠিক ওই মূহুর্তে পার্শ্ববর্তী অপর ব্যবসায়ী শাহ পরান (৩০) আচমকা ছুটে গিয়ে মিজান মোল্লাকে মারধর করেন। আকস্মিক ওই ঘটনায় উপস্থিত লোকজন হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তারা মিজান মোল্লাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশের এস.আই. রফিক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে মিজান মোল্লার ছোট ভাই সুজন মোল্লা (৩৫) ছুটে গিয়ে শাহ পরানের দোকানে ঢুকে তাকে মারধর করেন। ওই সময় তার সঙ্গে অন্তত ৩০/৩২ জন যুবক ছিলো। সুজন মোল্লা তাকে অন্তত তিনদফা মারেন। তৃতীয় দফায় সুজন মোল্লা একটি লোহার পাইপ দ্বারা আঘাত করেন। লোকজন আশেপাশে দঁাড়িয়ে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। মার খেয়ে শাহ পরান সুজন আহত হন। চিকিৎসার জন্য তিনি চঁাদপুর সদর হাসপাতালে যান। দুপক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় দুজন বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
খাজুরিয়া বাজারে গিয়ে সাক্ষাৎ না পেয়ে, মুঠোফোনে কথা হয় শাহ পরানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি চঁাদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছি। তিনি বলেন, আমার বিকাশ এজেন্ট, গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। মিজান মোল্লা, তার ভাই ও লোকজন আমার দোকানে ঢুকে আমাকে পিটিয়েছে ও টাকা নিয়ে গেছে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে গেছে। আপনি মিজান মোল্লাকে মেরেছেন কেনো, এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেনননি।
এ ব্যপারে মিজান মোল্লা বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে ও বিনা দোষে খলিল ও সুজন আমাকের মেরেছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার ভাই দোকানে ঢুকেনি ও তিনদফা মারেনি। তার সাথে ৩০-৩২ জন যুবক থাকার তথ্য সঠিক নয়।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম বলেছেন, খাজুরিয়া বাজারে মারামারির খবর শুনে এস.আই রফিক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। দুই পক্ষ থেকে আলাদা দুটি অভিযোগ এসেছে। প্রাথমিক তদন্তের জন্য একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। রাতে (বুধবার) পুলিশ সেখানে গেছে।
উল্লেখ্য, খাজুরিয়া ওল্ড স্কিম দাখিল মাদরাসার সুপার আবুল বাসার ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন মর্মে শিক্ষার্থীর ভাই অভিযোগ দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। তদন্তে অভিযাগের সত্যতা পেয়েছেন মর্মে তিনি রিপোর্ট দিয়েছেন। ওই রিপোর্টের পর অধিকতর তদন্তের জন্য ইউএনও বরাবর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ লিখিত আবেদন করেন। তদন্তে উপস্থিত থাকার জন্য বুধবার সকাল ১০ ঘটিকা নাগাদ মাদরাসায় উপস্থিত হন অভিযুক্ত সুপার আবুল বাসার। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হতে গুজব রটে মাদরাসা সুপারকে পুনর্বহালের চেষ্টা করা হচ্ছে। তারই জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, তদন্তের জন্য উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মশিউর রহমান ভুইয়া আনুমানিক সাড়ে ১০ ঘটিকায় মাদরাসায় পেঁৗছেন ও তদন্ত করেন। মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। এদিকে, সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়নি অনুসনন্ধানে যানা গেছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি স্থানীয় চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ জানান, আমি হামলার ঘটনা শুনেছি। অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হামলা চলাকালে আমি মাদ্রাসার বিতর ছিলাম। আমি এর বেশি কিছুই জানিনা।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ১৮ অক্টোবর ২০২৩