একটার পর একটা কল আসছে। কল সেন্টারের কর্মকর্তারা সবাই ব্যস্ত। হঠাৎ এক বয়স্কা নারীর ফোন।
ফোন রিসিভ করার পর তিনি বলেন, আমার খুব পেটে ব্যথা হচ্ছে আমি এখন কী করব? অন্য একজন ফোন দিয়ে বলছেন, আমার মোবাইলের ব্যালান্স থেকে বেশি টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে, কেউ বা বলছেন তার কাছ থেকে ট্রেনের টিকেটের দাম বেশি রাখা হচ্ছে।
এভাবে হাজার হাজার কল আসছে প্রতিদিন। বাচ্চা-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষ তাদের অভিযোগ জানাচ্ছেন। তবে অভিযোগগুলোর বেশিরভাগই দুর্নীতি দমন কমিশনের আওতার বাইরে।
বলছিলেন অভিযোগ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা দুদকের সহকারী পরিচালক সেলিনা আক্তার মনি।
হটলাইন ১০৬ চালু হওয়ার পর থেকে (২৭ জুলাই) সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোট ৯১ হাজার ৪১৭টি ফোন কল এসেছে। যার মধ্যে মাত্র ২২৫টি অভিযোগ আমলযোগ্য হিসেবে নেওয়া গেছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
অভিযোগ কেন্দ্রে আসা বিভিন্ন ফোন কলের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সেলিনা মনি বলেন: গত ২ তারিখ সকালে একজন কর্মকর্তা না থাকায় আমিই ডেস্কে গিয়ে বসেছিলাম।
তখন সৈয়দপুর থেকে একটি বাচ্চা ফোন দিয়ে বলছে, আপু আমি রাকিব বলছি। আমাদের স্কুলের সামনে গাছ কাটা নিয়ে খুব মারামারি হচ্ছে। কয়েকজন আহত হয়েছে। আমরা এখন কী করব?
প্রথমে ভাবলাম মজা করছে। কিন্তু ওর এবং ওপর পাশে থাকা বন্ধুদের কণ্ঠের উদ্বিগ্নতা শুনে বুঝতে পারছি মজা করছে না। তখন বললাম তোমাদের আসেপাশে যদি কোন পুলিশ থাকে তবে তাদের জানাও। আর যদি থানা কাছে থাকে তবে তোমরা কয়েক বন্ধুরা মিলে গিয়ে বলে আসো।
ওইদিন বিকেলে আবারও ডেস্কে বসলাম। একটি ফোন রিসিভ করার পর সে বলছে, আপু তুমি কোথায় ছিলে? কতক্ষণ থেকে তোমাকে ফোন করছি কিন্তু কারা যেন ধরছে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি কার ফোন ছিল।
কে বলছেন জানতে চাইলেই ওপাশ থেকে বলল, আমি রাকিব চিনতে পারছো না? তুমি বলার পর আমরা থানায় গিয়েছিলাম, আমাদের এখানকার ঝামেলা মিটে গেছে! তোমাকে থ্যাঙ্কস দিতে কতবার ফোন দিচ্ছি! কিন্তু তুমি কাকে দিয়ে যেন ফোন ধরাচ্ছো। শুনে আমার এত ভালো লাগলো যে বলে বোঝানো যাবে না।
এত অপ্রাসঙ্গিক কলে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা মোটেই বিরক্ত হচ্ছেন না জানিয়ে সেলিনা বলেন: আমরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং অধিদপ্তরের ফোন নম্বর রেখেছি। কারও অভিযোগ যদি আমাদের আওতার বাইরে থাকে তবে কোথায় গেলে তার প্রতিকার পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করি।
‘ধরেন কেউ একজন বললো আমার ফোনের ব্যালান্স থেকে বেশি টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে, আমরা তাকে বলি আপনি ১২১ এ ফোন দেন।
আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অভিযোগ হলে থানায় বা মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছি, সম্ভব হলে যোগাযোগের উপায়ও বলে দিচ্ছি।’
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের মতে, মানুষের এত এত অভিযোগ আসলে তাদের অসহায়ত্বেরই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন: মানুষের এত সমস্যা। কিন্তু এ সমস্যার প্রতিকারের জন্য তারা কোথায় যাবে সেটিও জানে না। এ জন্য যারা অভিযোগ কেন্দ্রে কাজ করছেন তাদের পরামর্শ দিয়েছি আমাদের আওতার মধ্যে না থাকলেও কোথায় গেলে সাহায্য পেতে পারে, সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে।
অভিযোগ কেন্দ্রে তিন শিফটে পাঁচজন করে কর্মকর্তা কাজ করছেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকছে হটলাইন ১০৬। এ সময়ের মধ্যে যে কোন নাগরিক টোলমুক্ত কল করে দুর্নীতি সম্পর্কিত অভিযোগ জানাতে পারছেন। (চ্যানেল আই)
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১: ০০ পিএম, ৯ আগস্ট ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ