Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে ভিজিডির চাল নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের চালবাজি
ভিজিডির

ফরিদগঞ্জে ভিজিডির চাল নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের চালবাজি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান কর্তৃক দুস্থদের বরাদ্দকৃত সরকারি ভিজিডি চাল বিতরণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান চাল নিয়ে করছেন চালবাজি। ভিজিডি কার্ডের ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কাথা থাকলেও চেয়ারম্যান দিচ্ছেন ২২-২৫ কেজি। কার্ডধারিদের কাছ থেকে নিচ্ছেন বাড়তি ১শত টাকা। বিতরনেও নানন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদে ভুক্তভোগীরা সংবাদকর্মীদের কাছে এমন অভিযোগ করেন। পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, যেই চাউলের বস্তা রয়েছে তা হাতে শিলাই করা এবং বস্থায়ও চাল কম রয়েছে। চেয়ারম্যানের লোকদের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না সুবিধাভোগীরা।
জানা যায়, উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের মোট ১০৩ জন ভিজিডি কার্ডধারীদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভিজিডি চাল জনপ্রতি মাসে ৩০ কেজি করে দেয়ার কথা। কিন্তু সরকারি ভাবে গত জুলাই- সেপ্টেম্বর ৩ মাসের চাল না দেওয়ায় চলতি মাসে এক সাথে তা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত চাল গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাজাহান মাষ্টার উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে ৩’শ ৯ বস্তায় ৯ হাজার ২’শ ৭০ কেজি চাল বুঝে নেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে চাল বিতরন করা হয়। এতে জুলাই ও আগষ্ট মাসের চাল কার্ডধারিদের দেওয়া হয়।

সেপ্টেম্বর মাসের চাল আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে দেওয়ার কথা জানান ইউপি চেয়ারম্যান। এদিকে জুলাই ও আগষ্ট ২ মাসে প্রত্যেক কার্ডধারিদের ৬০ কেজি চাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান শাহাজাহান মাষ্টারের একক স্বেচ্ছাচারিতায় ট্যাগ অফিসারের অনুপুস্থিতিতে ও অবগত না করেই ছিদ্র করা বস্তায় প্রত্যেক কার্ডধারিকে ২ মাসে ৬০ কেজি চালের পরিবর্তে ৪৫-৫০ কেজি করে চাল দেন এবং এসময় প্রত্যেক কার্ডধারির কাছ থেকে ১’শত টাকা করে আদায় করেন। এতে কার্ডধারিরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বাকী এক মাসের চাল না দেওয়ায় হয়রানির শিকার হবে বলে জানান।
স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান পরিষদের নিয়মনিতির তোয়াক্কা না করেই একক সেচ্ছাচারিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদেও ঠিকমত যাননা। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ও ফিরোজপুর জনকল্যান বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সাধারন মানুষের হয়রানির যেন শেষ নেই ।
ভিজিডি কার্ডধারী কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, সরকার আমাদের প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে ভিজিডি চাল দেয়ার কথা। আমরা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে পরিষদ থেকে চাল সংগ্রহ করি। কিন্তু কোন কারনে গত ৩ মাস চাল দেওয়া হয়নি। চলতি মাসসহ ৩ মাসের চাল দেওয়ার কথা, কিন্তু আমাদেরকে ২ মাসের চাল দেওয়া হলেও তাতে ৬০ কেজির স্থলে ছিদ্র করা বস্তায় ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ কেজি চাল করে দেন। বাকী চাল আগামী ২৬ তারিখ দিবেন শুনেছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউপি সদস্যরা জানান, ৩০ কেজি করে ভিজিডির চাল দেওয়ার কথা থাকলেও কার্ডধারী চাল আনার পর আমাদের জানিয়েছে তারা ৬০ কেজি চালের মধ্যে ৫০-৫২ কেজি পেয়েছে। তারা আরো বলেন, চেয়ারম্যান কার্ডধারিদের কাছ থেকে ১’শত টাকা করেও নিয়েছেন। চেয়াম্যান পরিষদের কোন বিষয়ে আমাদের জানানই না । নিজের মতো পরিষদ চালান।
চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে চেয়ারম্যান শাহজাহানকে পাওয়া যায়নি।

এরপর উনার মোবাইল ফোনে কল করলেও তিনি বলেন, আমি উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে চাল সংগ্রহ করে পরিষদে রেখে বিতরন করছি। আপনি ট্যাগ অফিসারকে না জানিয়ে কিভাবে চাল বিতরন করেছেন জানত চাইলে তিনি বলেন, আমি নিজের মতই চাল বিতরণ করছি। চালের বস্তা প্রতি ৫ থেকে ৭ কেজি করে কেন কম দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, চাল তো ঠিকই ছিল কম কেন হবে? চাল নিতে আসা কার্ডধারিদের কাছ থেকে কেন ১’শত টাকা নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে আমি আগামিতে টাকা ফেরত দিয়ে দেব।

চাউলের বিষয়ে উপজেলা জানতে উপজেলা খাদ্য গুদামের ওসি এল এজ ডি ইমতিয়াজ বুলবুল সাকির বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শাহাজাহান চেয়ারম্যান নিজে এসে বিজিডির ৩০ কেজি করে ৩০৯ বস্থা চাল নিয়ে গেছেন। খাদ্য গুদাম থেকে কোন ভাবেই চাল কম দেওয়া হয়নি। চাল বুঝে নেওয়ারপর বাহিরে গিয়ে কি হল তা আমার জানার বিষয় না।
চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের ভিজিডি চাল বিতরণে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার মনিরুল ইসলাম জানান, চাল বিতরণের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিবো।

মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমেনা বেগম জানান, চালের ডিও আমি দিয়েছি। চেয়ারম্যান আমাকে না জানিয়ে চাল বিতরণ করেছেন। উপকার ভোগিদের চাল কম দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, চাল কম দেওয়ার কথা নয়। চেয়ারম্যানেকে জিজ্ঞেস করেন তিনি কেন চাল কম দিচ্ছেন। আমি সময়মত পরিষদে গিয়ে জেনে নিব। এ বিষয়টি আপনি( সাংবাদিক) ইউএনওকে জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌলি মন্ডল জানান, আমি এ বিষয়ে অবগত নই, খোঁজ নিয়ে জানাবো।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান,২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩