ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে বিদ্যালয় ওয়াশব্লক নির্মাণে অনিয়ম!

ফরিদগঞ্জ বালিকা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি আধুনিক ওয়াশব্লক (শৌচাগার) নির্মাণে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় অভিভাবকদের বাধার মুখে উক্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এসএমসির একজন সহ-সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসূচি (পিডিপি-৩)’র আওতায় ৩৪ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ব্যায়ে ফরিদগঞ্জে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণ করা হচ্ছে। মেসার্স আবুল খায়ের এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্সে ওয়াশব্লক নির্মান কাজ করছেন ফখরুল হাসান নামে এক ঠিকাদার। প্রতিটি ওয়াশব্লক নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ বালিকা উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশব্লক নির্মাণের নকশায় সিএল থেকে পিএল সাড়ে ৫ ফুট হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও স্কেল দিয়ে মেপে পাওয়া যায় ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি। এছাড়া সিএল থেকে ৩০ ইঞ্চি ইটের সলিং দিয়ে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার পর ২৫ ইঞ্চি, ২০ ইঞ্চি, ১৫ ইঞ্চি ও সর্বশেষ সিএল পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি।

ভিতরের ফ্লোর বালি ফিলিং এর পরে ইট দিয়ে সলিং করে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও ঢালাই না দিয়ে শুধু মাত্র বালির উপরে পার্টিশন দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ওই পার্টিশন দেওয়ালটি ভবনের ছাদ পর্যন্ত হওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তাতে ১০ ইঞ্চি খালি রয়েছে। সেফটি টাংকি নির্মানেও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম।

বিদ্যালয়ের এসএমসির সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন নান্নু এ প্রতিবেদককে বলেন, শুরুতে ঠিকাদারের কাছে কাজের সিডিউল/ প্রাক্কলন চাইলে তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সিডিউল মোতাবেক ওয়াশব্লকটি নির্মাণ করা হয়নি। এছাড়া নির্মাণ শ্রমিকদের বার বার অনিয়মের কথা বলা সত্ত্বেও তারা ঠিকাদারের দোহাই দিয়ে কাজ চালিয়ে গেছে। ব্যাপক অনিয়ম ও নিন্মামনের কাজ হওয়ায় এখানে যে কোন মহুর্তে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। নিন্মমানের কাজের কারণে বিদ্যালেয়র ৪শ’ ৫০ জন শিক্ষার্থী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী বলেন, অনিয়মের অভিযোগ থাকায় ওয়াশব্লক নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে ঠিকাদারকে বাধ্য করেছে এলাকাবাসী। এছাড়া পুরাতন শৌচাগার ভেঙ্গে ফেলার কারণে ছাত্র/ছাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত নতুন ওয়াশব্লকের কাজ শেষ করা জরুরী।

ঠিকাদার ফখরুল হাসান এ প্রতিনিধিকে বলেন, ওয়াশব্লক নির্মাণ কাজটি ভালোভাবে বুঝে নেওয়ার জন্যে আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে বলেছি। কাজের কাছে আমি তো আর সব সময় থাকতে পারি না। লেভাররা যদি কোন ভুল করে থাকে তা সংশোধন করে কিভাবে কাজটি শেষ করা যায় এনিয়ে আমি বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে কথা বলছি। তবে সিডিউল মোতাবেক কাজ হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী সফি মো. হাছান এ প্রতিনিধিকে বলেন, বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণ কাজে যে অনিয়ম হয়েছে ঠিকাদারকে তা সংশোধন করতে বলেছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম মাহফুজুর রহমান এ প্রতিনিধিকে বলেন, ওয়াশব্লক নির্মাণে অনিয়ম তদন্তে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত রির্পোট আমার হাতে আসেনি।

প্রতিবেদক : আতাউর রহমান সোহাগ

Share