চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাসারা নেছারাবাদ ছিদ্দিকিয়া ছালেহিয়া ডিএস ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাও.মোশাররাফ হোসেন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে যোগদানের এক বছরের মাথায় নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সদ্যবিদায়ী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক মিয়াজী বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। সুপারের আচরণে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তার অপসারণ দাবি করেছে।
সুপারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা চলাকালীন সময়ে উপস্থিত না থাকলেও রাতে এসে হাজিরা প্রদান, ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী দিয়ে ক্লাস নেয়া এবং গাইড বই এনে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাসারা বাজারের অদূরে ১৯৭৫ সালে স্থানীয় লোকজন ও ছারছীনা দরবার শরীফের অনুসারীদের সহায়তায় বাসারা নেছারাবাদ ছিদ্দিকিয়া ছালেহিয়া ডিএস ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হয়। এবতেদায়ী থেকে দাখিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।
সরে জমিন গেলে মাদ্রাসার সদ্যবিদায়ী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হক মিয়াজী বলেন, মাদ্রাসার বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অবকাঠামোগত সমস্যা ও শিক্ষার মানোন্নয়ন, তার উপর সুপারের নানা অনিয়ম। কমিটির নেতৃবৃন্দ ও আশপাশের লোকজনের সহায়তা মাদ্রাসার একটি অংশ দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত উন্নয়ন সম্ভব হয়।
এছাড়া সর্বশেষ আমাদের এলাকার কৃতী সন্তান, কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন খোকার সার্বিক সহযোগিতায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবনের কাজ সহসাই শুরু হবে। কিন্তু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান যেই সংকট, তা শিক্ষার মান উন্নয়নের অন্তরায়। ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর মাদ্রাসা সুপার হিসেবে মাও.মোশাররাফ হোসেন পাটওয়ারীসহ তিনজনকে নিয়োগ প্রদান করি। তাকে নিয়োগ দেয়ার সময় বিনীতভাবে বলেছি অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না, আপনার প্রধান দায়িত্ব মাদ্রাসার শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি করা। কিন্তু তিনি যোগদানের পর থেকেই নিজের মতো করে চলতে শুরু করেন।
ইচ্ছেমত মাদ্রাসায় আসা যাওয়া, উপজেলায় কাজ রয়েছে বলে সেখানে না গিয়ে অন্য কাজে যাওয়া তার রুটিন ওয়ার্ক হয়ে পড়ে। তিনি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ইচ্ছার বাইরে গাইড বই ক্রয় করতে বাধ্য করেন। তার এসব অনিয়ম বিষয়ে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভায় তাকে সতর্ক করে রেজুলেশনভুক্ত করা হয়। যাতে তার স্বাক্ষর রয়েছে।
সর্বশেষ নভেম্বর মাসের ২ তারিখ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত তিনি একটানা মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলেন। অথচ অতীতের মতো এবারও তিনি রাতে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে রাখেন।
সর্বশেষ ঘটনার ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ইবতেদায়ী পরীক্ষা ও জেডিসি পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন। যদিও তিনি ওই দুই পরীক্ষায় কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নন। সুপারের এই আচরণের কারণে মাদ্রাসার ফলাফলে প্রভাব পড়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের দাখিল পরীক্ষায় ১৯ জনের মধ্যে ৭ জন পাস করেছে।
তিনি আরো জানান, মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নূর উদ্দিনকে দিয়ে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনির ক্লাশ নেন। এবছর মাদ্রাসার পাঠ্য বইয়ের বাইরে গাইড বই বিক্রি করে তিনি বড় অংকের অর্থ বাণিজ্য করেছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের সম্মানিসহ বিভিন্ন ভুয়া ভাউচার তৈরি করতেন তিনি।
তিনি আরো জানান, সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এমপির ডিও লেটার নিয়ে এক প্রার্থী মাদ্রাসায় অযাচিত আচরণ করে যান। পরবর্তীতে ওই দিনই নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে কামতা এলাকায় অবরুদ্ধ করে ফিরে যেতে বাধ্য করে একদল লোক। পরে মাদ্রাসার সুপার নিজেই সে বিষয়ে ইউএনওকে এমপির ডিও লেটার নিয়ে আসা প্রার্থীর অযাচিত আচরণ বিষয়ে লিখিতভাবে জানালেও কয়েকদিন পর কৌশলে তিনি মাদ্রাসার নাইটগার্ডসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা জিডি করেন থানায়। নির্ধারিত সময় নির্বাচন না হওয়ায় তিনি গোপনে এডহক কমিটির গঠনের জন্য প্রস্তুতি নেন। এই কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি সবই তিনি কাউকেই না জানিয়েই কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এতে প্রতিনিধি কারও স্বাক্ষর নেই।
কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক শিক্ষক আবুল খায়ের, বিল্লাল হোসেন, মো. বাবুল, ইউপি সদস্য নূর মোহাম্মদ, জাকির হোসেন, সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াছ মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা আ. মমিন, অহিদুল ইসলাম সুপারের এসব আচরণের বিষয়ে বলেন, মাদ্রাসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে এই সুপারকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দাবি একটাই মাদ্রাসার শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ভাল ফলাফল নিশ্চিত করা।
কয়েকজন শিক্ষক জানান, বিগত বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালে সুপার পরীক্ষার প্রশ্ন নিজের ড্রয়ারে রেখে তালা মেরে কুমিল্লা চলে যান। পরে বিষয়টি তার নজরে আনলে তিনি পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বলেন। কিন্তু আমরা বাইরে থাকা প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যাই। কিছু প্রশ্ন সংকটের কারণে আমরা ব্লাক বোর্ডে লিখে দিয়ে পরীক্ষা নেই।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার মাও. মোশারফ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, কমিটি মাদ্রাসার শৃংখলা ফিরাতে গিয়ে কর্মরতদের চক্ষুশূল হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে। আমি যখনই মাদ্রাসা থেকে বের হয়েছি মুভমেন্ট রেজিস্টারে কারণ উল্লেখ করে বেরিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে রেজুলেশন হওয়ার কথা সঠিক, কিন্তু মাদ্রাসার সভাপতি সভার শুরুতেই বাধ্যতামূলকভাবে সবার স্বাক্ষর নিয়ে নেন।
তিনি আরো বলেন, আমি এসে শিক্ষকদের ক্লাসে নিয়মিত করেছি। যার ফলে তারা কমিটির কাছে হয়তো কানভারী করেছেন। গাইড বই বিক্রির বিষয়ে তিনি জানান, ছাত্ররা বই আশপাশের না পাওয়ায় আমি ফরিদগঞ্জ থেকে বই এনে দিয়েছি। নূর উদ্দিন মাদ্রাসার ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হলেও সে আলিম পাস তাই তাকে ক্লাস নিতে বলেছি।
প্রতিবেদক: মো.শিমুল হাছান