চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের কৃতি সন্তান, মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নং সেক্টরের কমান্ডার সদ্য প্রয়াত লে. কর্নেল (অব:) আবু ওসমান চৌধুরী ও ৪ নং সেক্টরের কমান্ডার, বিডিআর এর প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব:) সি আর দত্ত বীর উত্তম এর মৃত্যুতে শোক সভা- স্মৃতিচারণ, মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১২ সেপ্টেস্বর, শনিবার বিকেলে উপজেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আয়োজনে উপজেলা আ’লীগ কার্যালয়ে উক্ত শোক সভা- স্মৃতিচারণ, মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
উপজেলা সেক্টর কমান্ডার ফোরাম ও আ’লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহাবুব আলম সোহাগ এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, দূর্যোগ ব্যবস্থ্াপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব হাবিবুর রহমান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, কেন্দ্রিয় আ’লীগ উপ- কমিটির সহ- সম্পাদক মহিউদ্দিন খোকা, জেলা আ’লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল কাশেম কন্টাকটর, উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি রফিকুল আমিন কাজল, সাধারন সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সহিদ উল্লাহ তপাদার, সেক্টর কমন্ডারস ফোরামের সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ এম তবিবুল্লাহ, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেন স্বপন, ওয়াহিদুর রহমান রানা, সদস্য এড. মোহাম্মদ আলী মজুমদার প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত (অব.) বীর উত্তম এবং লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী (অব.)- মুক্তিযুদ্ধের দুই সেক্টর কমান্ডার দুই সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে ইহ জগৎ থেকে বিদায় নিলেন। শ্রী দত্ত ২৫ আগস্ট সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং আবু ওসমান চৌধুরী ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা সিএমএইচে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি এ দুই বীরকে চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
মেজর (পরবর্তীকালে লে. কর্নেল) আবু ওসমান চৌধুরী ১৯৭১-এর ফেব্রæয়ারিতে ডেপুটেশনে চুয়াডাঙ্গায় অবস্থিত তৎকালীন ৪র্থ ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল (ইপিআর) ইউনিটের অধিনায়ক হিসেবে যোগদান করেন। সরকারি কাজে ২৫ মার্চ তিনি কুষ্টিয়ায় অবস্থানকালে রাতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকার পিলখানাসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৬ মার্চ সকালে কুষ্টিয়ায় অবস্থানরত পাকবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি চুয়াডাঙ্গায় নিজ ইউনিটে ফিরে যান। সেখানে পৌঁছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ ও ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, পদ্মা-মেঘনার পশ্চিমাঞ্চলকে দক্ষিণ-পশ্চিম রণাঙ্গন নামকরণ করে নিজেকে অধিনায়ক ঘোষণা, ৪র্থ ইপিআর সদর দফতরে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে লাল সূর্যের মাঝে মানচিত্রখচিত বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সালাম প্রদান করেন। পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় তার এ সিদ্ধান্ত দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য এক বিরাট সাহসী পদক্ষেপ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বঘোষিত অধিনায়ক হিসেবে পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনকে অনুপ্রাণিত এবং আরও সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে তিনি ওই অঞ্চলের তৎকালীন এসডিও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ও এসডিপিও মাহবুব উদ্দিনকে (পরবর্তীকালে এসপি) নিজ দায়িত্বে ক্যাপ্টেন র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন। বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত সিলমোহর বানিয়ে পরদিন থেকে স্বাধীন দেশের প্রশাসন চালু করেন, যা শত্রু সৈন্য দখলকৃত বাংলাদেশের অন্য কোথাও ছিল না। ২৯-৩০ মার্চ তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলামকে নিরাপদে সীমান্তের ওপারে পৌঁছে দেয়া এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনে উপরোক্ত তিনজনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আমার জানা ছিল। তারপরও ইতিহাসের সাক্ষী আবু ওসমান চৌধুরী ও মাহবুব উদ্দিনের কণ্ঠে আরও কিছু জানার আগ্রহে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ইতিবাচক সাড়া পাই। ২০১৮ সালের এপ্রিলের এক সন্ধ্যায় ধানমন্ডি লেকের পাড়ে আবু ওসমান চৌধুরীর চারতলা বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করি।
অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন, উপজেলা ওলামালীগের সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান।
প্রতিবেদক:শিমুল হাছান,১২ সেপেটম্বর ২০২০