সানাউল হক, ফরিদগঞ্জ | আপডেট: ০৭:০১ অপরাহ্ণ, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় দিন দিন অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণ-তরুণীদের প্রেমঘটিত সম্পর্ক বেড়েই চলছে। এ কারণে বহু পরিবার রঙিন স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে। প্রতিটি মা-বাবাই স্বপ্ন দেখে তাদের সন্তানদেরকে নিজে দেখে-শুনে বিয়ে দেবে। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে না জানিয়ে নিজেরাই বর-কনে ঠিক করে পাড়ি জমায় অজানায়। অতীতের তুলনায় বর্তমানে এসব ঘটনা কয়েকগুণ বেড়েছে সমাজে। প্রতিদিনই চোখে পড়ে এরকম একাধিক ঘটনা।
ফরিদগঞ্জের ধানুয়া, চরমথুরা, চির্কা, চির্কা চাঁদপুর, ভাটিয়ালপুরসহ উপজেলার প্রায় সব গ্রামেই অহরহ এসব ঘটনা ঘটছে। এখন চায়ের দোকানসহ সর্বত্র একই ধ্বনি শোনা যাচ্ছে, ১৫ বছরের তরুণের হাত ধরে পালিয়ে গেল ১৭ বছরের যুবতী। এ রকমভাবে প্রতিনিয়তই ঘটছে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার ঘটনা।
আবার এমনও হয়েছে বড় বোন প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়ার বছর না পেরুতেই ছোট বোনও একই কায়দায় প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গেছে।
অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের দেশে রেখে হাজার হাজার মাইল দূরে বিদেশে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করেন বাবা। বিদেশের মাটিতে তপ্ত রোদে শরীরের চামড়া পুড়িয়ে টাকা উপার্জন করছেন তারা। বাবার সেই কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে দেশের মাটিতে ছেলে তার প্রেমিকা নিয়ে ফুর্তি করছে। মেয়ে বাবার জমানো টাকা নিয়ে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ ধরনের বিয়ে অধিকাংশই ভেঙ্গে গেছে। কারণ একটি বেকার ছেলে সংসারের গ্লানি টানতে না পেরে তার ভালোবাসার মানুষটিকে রেখে পালিয়ে যায়।
অপরদিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটি আবেগের বশে প্রেমিকের হাত ধরে চলে গেলেও সংসার জিনিসটি সে ঠিকভাবে বুঝে না। তাই তাদের সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে।
এলাকার সচেতন মানুষের ধারণা, মা-বাবার অসচেতনতা আর নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবেই সমাজে এসব ঘটনা ঘটছে।
এছাড়াও বাল্যবিয়ে এ অঞ্চলের জন্যে একটি অভিশাপ। এ থেকে কিছুইতেই পরিত্রাণ পাচ্ছে না উপজেলার মানুষরা। প্রতিদিনই কোনো কোনো এলাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাল্যবিয়ে।
গত ২৭ আগস্ট উপজেলার চালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত মুসলিম মিয়ার নবম শ্রেণিতে পড়–য়া ছাত্রী হাওয়া আক্তার (১৪) এবং চির্কা গ্রামের আমির খানের মেয়ে শারমিন আক্তার (১৫)-এর বিয়ের আয়োজন চলছিল। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তেক্ষেপে বিয়ে দু’টি আর হয়নি। কিন্তু প্রশাসনের চোখের আড়ালে প্রায়ই বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এ বাল্যবিয়ে বন্ধে নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ।
এলাকার সচেতন মানুষরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আকাশসংস্কৃতি আমাদের যুব সমাজ এবং নারী সমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে স্টার জলসা, জি বাংলার সিরিয়াল দেখে গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে অশান্তি লেগেই আছে। আর এর সুযোগ নিয়ে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা বিপদগামী হচ্ছে। এজন্য মা-বাবারাই অনেকাংশে দায়ী। তাছাড়া নৈতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষা না থাকায় এসব ঘটনা ঘটেই চলছে।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫