ফরিদগঞ্জে প্রবাসী স্ত্রীর রহস্যজনক আ-ত্ম*হ-ত্যা

রাতে গৃহবধূর সাথে ঝগড়া । গভীর রাতে প্রবাসীর স্ত্রী এক সন্তানের জননী আসমা আক্তার তানজিনা (২১) এর আত্মহত্যা। এলাকায় তোলপাড়। স্থানীয়রা বলছেন আত্মহত্যার ঘটনাটি রহস্যময়। শ্বশুর বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন আম গাছের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা। ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাটি দেখেনি শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেবর ছাড়া অন্য কেউ।

রোববার (৩ নভেম্বর) ভোর আনুমানিক ৪ ঘটিকার সময় ফরিদগঞ্জের গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চির্কা এলাকার রাড়ি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের এস আই ইসমাইল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আসমার শ্বশুরের ঘর থেকে মৃত দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে আসেন।

ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, প্রায় ৪ বছর পূর্বে পারিবারিক ভাবে আসমার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী এলাকার রাড়ি বাড়ির হানিফ খানের বড় ছেলে মালয়েসিয়ান প্রবাসী মাছুমের সাথে‌। এরপর ঠিক ঠাক মতোই চলছিলো তাদের সংসার। এরমধ্যে আসমা ও মাছুম দম্পতি কোল জুড়ে ছেলে আয়ানের জন্ম হয়। আয়ান এখন ( ১৮ মাস) বয়সী। এরপর থেকে তাদের সংসারে নানান বিষয় নিয়ে কলহ লেগেই থাকত। গত রাতে আসমার শাশুড়ি ও পরিবারের লোকজনের সাথে ঝগড়া হয় বলে জানা যায়।

আসমার শাশুড়ি মাছুমা বেগম জানান, আমার পুত্রবধূ রাতে আমার সাথে ঘুমিয়েছিল। ভোর রাতে আমার স্বামী হানিফ খান প্রকৃতির ডাকে সাঁড়া দিতে গিয়ে দেখেন ঘরের কোণে থাকা আম গাছের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে। উনার চিৎকার শুনে আমি এবং আমার ছেলে সাইমুন ঘরে থেকে বের হয়ে তাকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ ডায়াবেটিস হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন‌। আপনার পুত্রবধূর কোন সমস্যা ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি? কেন আসমা আত্মহত্যা করেছে জানতে চাইলেও তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।

এ বিষয়ে আসমার দেবর সাইমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কি কারণে ভাবী আত্মহত্যা করেছে তা আমার জানা নেই। আত্মহত্যার সময় আপনি কোথায় ছিলেন জানত চাইলে বলেন, আমি পাশেই ঘুমে ছিলাম। বাবা চিৎকার শুনে উঠে দেখি এই অবস্থা। অপর প্রশ্নের জবাবে সাইমুন বলেন, গত একমাস পূর্বে ভাবী একটি ছেলের সাথে কথা বলতো। তাই আমি ভাবীর মোবাইল ভেঙে ফেলি।

এরপর মাসুমের মা, ভাই , বোন, ভাগ্নি ফিস ফিস করে বলতে থাকে সকলে এক কথায় থাকেন তাহলে কোন সমস্যা হবে না।

আসমার ভাবী রিয়া জানান, গত রাত ১২টার সময় আমার সাথে ফোনের ইমোতে কথা হয় । এসময় আসমা খুব কান্নাকাটি করতে থাকে। কি জন্য কান্নাকাটি করিস জানতে চাইলে বলে ভাবী আমার কাছে খারাপ লাগে এই বলে ফোন রেখে দেয়‌ আমি পরে ১২ .৫২ মিনিটের সময় আসমা আমাকে ফোন দেয় আমি ঘুমে থাকার কারণে ফোনটি রিসিভ করতে পারিনি। রাত ৪ টার সময় আমার দেবর ফোন দিয়ে জানায় আসমা নাকি আত্মহত্যা করেছে। এইটা আসমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নাটক। তারা আসমাকে মেরে ফেলে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে।

আসমার খালা মরিয়ম জানান, গতরাতে ১২টা ৩১ মিনিটের সময় আমার ইমোতে ফোন করে আসমা। তখন তাদের ঘরে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পাই। এর মধ্যে তার কাছ থেকে কেউ মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফোন কেটে দেয়।

আসমার ভাই রুবেল খান বলেন, আসমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার বোনকে মেরে ফেলেছে। আমার বোন আত্মহত্যার করতেই পারে না। তাকে তারা হত্যা করেছে।

এ বিষয়ে তদন্তকারী এস আই ইসলাম হোসেন জানান, আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আসমার মৃতদেহ ঘরে চাদর দিয়ে ডাকা অবস্থায়। আসমার শ্বশুর হানিফ খানসহ পরিবারের লোকজন জানান, আসমা ঘরের পাশে আম গাছের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আম গাছ থেকে আমি ওড়না ও আসমাকে উদ্ধার করিনি।

থানায় অফিসার ইনচার্জ মোঃ হানিফ সরকার জানান, আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৩ নভেম্বর ২০২৪

Share