Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রী সীমার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

ফরিদগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রী সীমার রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল

পারিবারিক দন্দ্ব-কলহ, মানসিক বিষাদ ও হতাশা থেকে আত্মহত্যার এর প্রবণতা বাড়ছে। এর অধিকাংশগুলো নানা কারণে অপমৃত্যু হিসেবে পুলিশের হিসেবে থেকে যাচ্ছে।

সম্মানহানি কিংবা হয়রানির ভয়ে এ নিয়ে কেউ আবার অধিকতর তদন্তের দাবিও করেন না।

এ ধরেনর এক ঘটনায় গত ৭ মার্চ ফরিদগঞ্জ পৌরসভার নোয়াগাঁও গ্রামের দুবাই প্রবাসী মনির হোসেনের স্ত্রী সীমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

পরে ময়নাতদেন্তর জন্য লাশ চাঁদপুর মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণ ও পরিবারের সদস্যদের ধারনা পারিবারিক কলহ ও দ্বন্ধের কারণে সীমা আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।

জানা যায়, জানালার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচানো ও অর্ধ-বসা অবস্থায় ছিলো সীমার নিথর দেহ।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সীমা আক্তারের মৃত্যুর কারণ হিসেবে গলার ফাঁসে শ্বাসসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ঘটনার দিন ৭ মার্চ সীমার মা পারুল বেগম বাদী হয়ে নিহতের শ^শুর, শাশুড়ি ও ননদসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আত্মহত্যায় প্ররোচণাদানের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।

রহস্যজনক এ মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ এরইধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পৌর এলাকার কেরোয়া গ্রামের আব্দুল হাই বেপারির ছোট মেয়ে সীমার সাথে ৪ বছর পূর্বে নোয়াগাঁও গ্রামের মোখলেছুর রহমান এর ছেলে মনির হোসেনের বিয়ে হয়। এ বিয়েতে মনিরের বাবা-মায়ের মত ছিলো না। পারিবারিক কলহের কারণে সীমা আক্তার পাশ্ববর্তী আব্দুর ছাত্তার সাউদের বাসা ভাড়া নিয়ে ৮ মাস যাবৎ বসবাস করে আসছিলো । দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকেইে শ^শুর বাড়ির মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে শুরু হয় সীমার বিবাহিত জীবন ।

২০১৭ সালে মনির হোসেন পুনরায় বিদেশে চলে গেলে সীমা আক্তারের ওপর শ^শুর বাড়ির লোকজনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন বেড়ে যায়। পরবর্তীতে সে স্বামীর সাথে পরামর্শ করে পাশ^বর্তী সাউদ বাড়িতে প্রায় ৮ মাস পূর্বে জনৈক আ.সাত্তার সাউদের ঘর ভাড়া নেয়। বাড়ির মালিক বৃদ্ধ আব্দুর ছাত্তার ও তার বৃদ্ধা স্ত্রী ওই বাড়িতে থাকেন।

সীমার মা পারুল বেগম এ প্রতিনিধিকে বলেন,‘ বিয়ের কয়েকদিন পর মনির হোসেন বিদেশে চলে যাওয়ার সময় সীমা তার বাবার বাড়িতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় তিন বছর বিদেশে অবস্থানের পর গত বছর সে বাড়িতে আসার আগের দিন সন্ধ্যায় সীমা শশুর বাড়িতে যায়। বিয়ে পরবর্তী এ মধ্যবর্তী সময়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজন সীমার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।’

যদিও স্বামীর সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সীমার শ^শুর বাড়ির লোকজন পাকের ঘর,থাকার ঘর ও বাথরুমের বেড়া ভেঙ্গে ফেলেছিলো।’

সূত্র মতে, বিয়ের পূর্বে প্রবাসে থাকার সময় মনির হোসেন তার বোন মনোয়ারার ব্যাংক হিসেবে টাকা পাঠাতো। সে টাকা দিয়ে পরিবারের খরচ মিটিয়ে বাকি টাকা জমিয়ে মনির হোসেনকে না জানিয়ে মনোয়ারা তার বাবার সহযোগে জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে তা জানাজানি হলে ছেলে এ নিয়ে বাধা দেয়।

এক পর্যায়ে সে জমি কিনতে মনস্থির করে। কিন্তু রেজিস্ট্রি করার সময় মনিরের নামে ৫ শতাংশ রেজিস্ট্রি করে বাকি ৫ শতাংশ তারা নিজের নামে করে নেয়।

এছাড়াও বিয়ের পূর্বে আরও ৮ শতাংশ জমি মনির নিজের নামে খরিদ করে মর্মে জানা যায়। তবে মনির হোসেনের বাবা ৫ শতাংশ জমি নিজেদের নামে করে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। বিয়ের পর মনির হোসেন তার বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ এমনকি তাদের ভরণ-পোষণ বাবদ খরচের টাকা দেয়াও বন্ধ করে দেয়। অসহায় বাবা-মায়ের ছেলের এহেন কার্যকলাপ মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

জমি ও পারিবারিক খরচ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ছেলের সাথে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতবিরোধ চরমে পৌঁছে। বিদেশ থেকে আসার পর সালিশী বৈঠকে বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ বাবদ মাস প্রতি পাঁচ হাজার টাকা ধার্য করে দেয়। মনির হোসেন তা মেনেও নেয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে বিদেশ যাওয়ার পর সে তা দিতে টালবাহানা করে।

মনিরের বোন মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মনির হোসেন বিয়ের পূর্বে সংসারের খরচ বাবদ নিয়মিত টাকা পাঠাতো। বিয়ে পরবর্তী সময়ে সে খরচ দেয়া বন্ধ করে দেয়। তবে তিনি সীমার ওপর তার পরিবারের লোকজনের ধারা নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন।’

অপরদিকে বাড়ির মালিক মোবাশ্বেরা বেগম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ মঙ্গলবার (৬ মার্চ) সকাল, দুপুর, বিকাল ও রাতে সীমা আক্তারকে স্বামীর সাথে মোবাইলে ঝগড়া করতে শোনা যায়।’

বাড়ির মালিক আব্দুর ছাত্তার সাউদ জানান, ঘটনার দিন ভোরে তার স্ত্রী তাদের পাশের ঘরে ভাড়াটিয়া সীমাকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে দরজায় ধাক্কা দিলে দরজাটি খুলে যায়। পরে তিনি জানালার সাথে ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচানো ও অর্ধ-বসা অবস্থায় সীমার লাশ দেখতে পান।

এ দিকে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মো.শাহ আলমের কাছে সীমার মৃত্যু সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘এখনো পোষ্টমর্টেম রির্পোট থানায় আসেনি। রির্পোট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সর্ম্পকে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

প্রতিবেদক : আতাউর রহমান সোহাগ