চাঁদপুর জেলাধীন ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২নং বালুথুবা ইউনিয়নের পাটওয়ারী বাজার থেকে মোটর সাইকেল ভাড়া নিয়ে চালানোর নাম করে উধাও হওয়ার ঘটনার সাড়ে ৫ মাসেও থানায় মামলা না নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চোর সনাক্ত হলেও ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা রেকর্ড না টালবাহানা করে বাদীকে আসামী করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২নং বালুথুবা ইউনিয়নের শোশাইচর গ্রামের মৃত ফজলুল হক বেপারীর ছেলে আবু তাহের কালু পাটওয়ারী বাজারে সাফিয়া ট্রেডার্স দোকান দিয়ে গ্যারেজের ব্যবসা করে আসছিলো। তিনি চাঁদপুর স্টেডিয়ামে চাঁদ মোটরস দোকান থেকে এফআরসি লাল রঙ্গের চাঁদপুর ল-১১-১৩৪১ একটি মোটর সাইকেল ক্রয় করেন। গত ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর বিকেল ৫টায় ফরিদগঞ্জ চান্দ্রা বাজারে দক্ষিণ গলির কবুতর হাটা সংলগ্ন এলাকার আনোয়ারের ছেলে শাহ এমরান (২০) পাটওয়ারী বাজার গিয়ে মোটর সাইকেলটি ভাড়া নিয়ে চাঁদপুরে হাসপাতালে অসুস্থ বোনকে দেখতে যাওয়ার নাম করে পালিয়ে যায়। তাকে খোঁজ করে না পেয়ে মোটর সাইকেলের মালিক আবু তাহের কালু ফরিদগঞ্জ থানায় শাহ এমরানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই শামিম ঘটনার সত্যতা ও প্রমাণ পায়। চুরির ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শাহ এমরানের পরিবারের লোকজন মামলা না হওয়ার জন্য পুলিশকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত থানায় মামলা রেকর্ড নিয়ে পুলিশ টালবাহানা করছে বলে জানিয়েছেন বাদী আবু তাহের কালু।
তিনি আরো জানান, চুরির ঘটনার মূল হোতা শাহ এমরানকে মামলা থেকে বাঁচাতে চান্দ্রার শরীফ জমাদার, মাসুদ গাজি, লিটন গাজি, মাইনুদ্দিন বেপারীসহ একটি দালাল চক্র জোর চেষ্টা চালায়। ঘটনা সমঝোতা ও চুরি হওয়া মোটর সাইকেলটি উদ্ধার হওয়ার কথা বলে চোরের পক্ষ নিয়ে চান্দ্রা বাজার মৃত সিরাজ গাজির ছেলে মাসুদ গাজি, বাসু জমাদারের ছেলে শরীফ ও রফিক বেপারীর ছেলে লিটন বেপারী তারা তিনজন মিলে কৌশলে খালি স্ট্যাম্পে বাদী পক্ষের স্বাক্ষর নেয়। মোটর সাইকেল উদ্ধার করে না দিয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র তাদেরকে দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। চোরের কাছ থেকে মোটর সাইকেলটি নিয়ে নিজেরাই আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করে।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসির রদবদল হওয়ার পর তদন্ত ওসি হিসেবে হুমায়ুন যোগদান করার পর অভিযোগের কাগজটি পুনরায় তার কাছে দেওয়া হলে তিনি আসামীর বাড়িতে গিয়ে অলিখিত স্ট্যাম্পটি উদ্ধার করে ও মামলা না নিয়ে ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করবে বলে আসামী পক্ষের সাথে চুক্তি করে আসেন।
বাদী আবু তাহের কালু গত ৯ মার্চ বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজুু করার জন্য তদন্ত ওসি হুমাযুন কবিরকে অনুরোধ করে। তিনি আসামী পক্ষের সাথে সমঝোতা করে বাদীকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে মামলা না করে অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়।
ওসি তদন্তের কথা না শুনে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই মোটর সাইকেলটি চাওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীকে গালমন্দ করে হুমকি দেন। পরে আসামী শাহ এমরান বেপারীর মা বেবি আক্তারকে ফুসলিয়ে তার ছেলেকে অপহরণ করেছে এ অভিযোগে বাদীকে আসামী করে থানায় একটি অভিযোগ নেয় তদন্ত ওসি হুমায়ুর কবির। সে ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানার এসআই আবু নাছির তদন্ত ওসির কথা মতো বাদীকে মামলার গ্রেফতারের ভয় দেখায়।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই আবু নাছিরের সাথে আলাপকালে তিনি চাঁদপুর টাইমস প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগের বাদী আবু তাহের কালুর মোটর সাইকেলটি প্রতারণা করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে বাদীকে থানায় অভিযোগ না করে কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।
এ ব্যাপারে ওসি তদন্ত হুমায়ুন কবির চাঁদপুর টাইমস প্রতিবেদককে জানান, মোটর সাইকেলটি চুরি নয়, প্রতারনা করে নিয়েছে। মামলাটি থানায় না করে কোর্টে করার জন্য বলা হয়েছে। বাদীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কথা বললে বাদী রাজি না হওয়ায় এতোদিন বিলম্ব হয়েছে। থানায় মামলা না নেওয়ার বিষয়টি ৩ তদন্ত কর্মকর্তা জবাব দেবে।
শাওন পাটওয়ারী ||আপডেট: ০৮:০২ অপরাহ্ন, ২২ মার্চ ২০১৬, মঙ্গলবার
চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur