ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে নৃশংস ঘটনার ২৭দিন পার হলেও সব আগের মতোই রয়ে গেছে

ফরিদগঞ্জে নৃশংস ঘটনার ২৭দিন পার হয়ে গেলেও এখনো সব আগের মতোই রয়ে গেছে। দিনের বেলা লোকজন বাড়ি ঘরে থাকলেও বিকাল হলেও চলে যায় অন্যত্রে, আবারো হামলার শিকার হতে হবে এই ভয়ের ঘর। এইতো গেল যাদের ঘরে হামলা ও ভাংচুর হয়েছে।

কিন্তু সাবেক ব্যাংকর নুর মোহাম্মদের ঘরের কথা বললে চোখের জল এসে যাবে। একপলক দেখলে আপনিও গা শিউরে উঠবেন। সাজানো গোছানো একটি আধাপাকা বড় ঘরটি আগুনের লেলিহার শিখায় ধ্বংসস্তুুপে পরিনত হয়েছে। শুধু কি আগুনই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এর আগে শতাধিক হামলাকারী ঘরে ঢুবে সকল আসবাবপত্র ভেঙ্গে চুরে তচনছ করেছে। ছোট্ট শিশু ও নারী ছাড়া ওই ঘরের বাকী পুরুষরা হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফলে বাড়িতে থাকা ওই নারী ও শিশুদের মাথা গোজার ঠাঁই দুরের আত্মীয়ের বাড়িতে। ঘটনাটি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১১নং চরদু:খিয়া পুর্ব ইউনিয়নের সন্তোষপুর গ্রামের।

সরেজমিন এলাকা সন্তোষপুর গ্রামের খলিফা বাড়িতে গেলে ভিড় করে স্থানীয় লোকজন। তারা জানায়, কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে নারকীয় ঘটনা ঘটায় দুবৃর্ত্তরা।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে শতাধিক অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী হামলে পড়ে খলিফা বাড়ির উপর বাড়িতে ঢুকতে তারা প্রতিটি ঘরে হামলা করে ভাংচুর করে। সর্বশেষ তারা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদের বসত ঘরটিতে ঢুকে তাদের সবকিছু ভেঙ্গে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে সাজানো গোছানো একটি ঘর কয়েক ঘন্টায় অঙ্গারে পরিনত হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঘরের মধ্যে থাকা চাল আগুনে পুড়ে চালভাজা হয়ে রয়েছে। ঘরের পাশের রান্না ঘরে চুলার উপর পানির পাত্রে এখনো পানি রয়েছে। দু্ই পাশের গাছগুলো আগুনের ভয়াবহতার প্রমাণ দিচ্ছে। বাড়ির পাশেই গরুর ঘরে থাকা গরুগুলো লুটে নেওয়ার আগে খড়ের গাঁদাটিও পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

কথা হয় সন্ত্রাসী হামলায় আহত নুর মোহাম্মদের স্ত্রী জাহিদা বেগমের সাথে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার সুখের সংসার আজ তচনছ। সামান্য একটি জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এভাবে আমাদের সবকিছু জ্বালিয়ে দিয়ে পথে বসিয়ে দিবে সন্ত্রাসীরা তা মেনে নিতে পারছি না। আমার স্বামী ও ছেলেরা আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে। আর আমরা প্রতিপক্ষ এমরান বাহিনীর হুমকির মুখে রয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়ার পরও এখনো আমাদের পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, দোষ আমাদেরই কারণ আমরা কেন মানবতা দেখিয়ে ক্রয়কৃত সম্পত্তির উপর লোকমানদের থাকতে দিয়েছিলাম। ফলে ওই লোকমানের স্ত্রীর ইন্দনে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাদের সর্বশান্ত করেছে। আতংকের কারণে আমরা দুরে গিয়ে স্বজনদের বাড়িতে রাত যাপন করি।

নুর মোহাম্মদের ভাই মোক্তার আহাম্মদ ও তোফায়েল আহাম্মদ জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও দেখেছি। আজ ৫০ বছর পর আমাদের সেই কথা মনে করিয়ে দিল সন্ত্রাসীরা। পাকহানাদার বাহিনী ও রাজাকাররা ‘আইয়ে আইয়ে’ শব্দ শুনে আমরা পালিয়ে যেতাম। তেমনি এখনো আমরা ‘আইয়ে আইয়ে” শুনে আতংকে থাকি। ভয়ে রাতে বাড়িতে থাকি না। যদি আবার হামলা করে আমার ভাইয়ের বাড়ির মতো আমাদের বাড়ি ঘর পুড়ে ফেলে এবং আমাদের শেষ করে দেয়, এই ভয়ে।

নুর মোহাম্মদের মেয়ে জেসমিন বলেন, আমরা স্বাধীন দেশে থেকেও পরাধীনের মতো রয়েছি। এমরান বাহিনীর লোকজন সর্বক্ষণ আমাদের ফলো করে। আমার পরিবারের সবশেষ করে ফেলেছে। তারা এখনো বীরদর্পে ঘুরছে, কিন্তু পুলিশ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।

হামলায় আহত ঢাকায় চিকিৎসাধীন গিয়াস উদ্দিন জানান, বর্তমানে ওমানে প্রবাসী লোকমান তার কাছে তার ঘরের ভিটা বিক্রি করে। তাদের বসবাসের কোন ব্যবস্থা না থাকায় আমি ২ বছরের জন্য থাকতে দেই। সেই সময়ে বিদেশ যাওয়ার সময়ে আমি ৩৫ হাজার ঋণ দেই। যা সে আস্তে আস্তে পরিশোধ করে। ২ বছর পর সে আবারো ঘরে ২ বছর থাকার জন্য আবেদন করে। সেই সময়েও আমি তাদের থাকতে দেই। আমি ১০ হাজার, আমার বাড়ির শাহাজাহান মাস্টার ১০ হাজার এবং আমার চাচারা মিলে মোট ১লক্ষ টাকা দিয়ে তাকে ওমান যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেই। কিন্তু লোকমান বিদেশে চলে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় হুমকি ধমকি। লোকমানের স্ত্রী শাহনুর বেগম পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের এমরান হোসেনসহ লোকজনের সাথে সখ্যতা করে এসব কাণ্ড শুরু করে।

সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারী দুপুরে আমি লোকজন নিয়ে পুকুর পাড় বাঁধাই কালে হঠাৎ করেই এমরান এসে আমাদের সাথে তর্কে জাড়িয়ে পড়ে। কথাকাটাকাটির একপযার্য়ে দেখাচ্ছি বলে বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বাড়ির চারিদিক থেকে শতাধিক লোকজন অস্ত্র স্বস্ত্র নিয়ে আসে হামলা শুরু করে। আমাদের মারধর করে এবং আমার বাড়িটি জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া আমার বাড়ির চাচাসহ অন্যদের বসতঘরেও হামলা করে ও ভাংচুর করে। সস্ত্রাসীরা আমাদের গোয়ালঘরের সবগুলো গরুসহ মোট ৭টি গরু নিয়ে যায়।

আমরা আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছি। কিন্তু আমার মা ছোট ভাইস পরিবারের অন্যসদস্যরা প্রতিদিন আতংকে দিন কাটাচ্ছে।

এদিকে নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলায় দুইজন অভিযুক্তকে আটকের পাশাপাশি লুট হওয়া ৩টি গরু উদ্ধার করে পুলিশ।
এব্যাপারে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, মামলাটি তদন্ত চলছে। এছাড়া অন্য অভিযুক্তদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।

এদিকে প্রবাসী লোকমান হোসেনের স্ত্রী শাহনুর বেগম জানান, তাদের বাড়িতেও হামলা করেছে প্রতিপক্ষরা। তিনিও আতংকে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রুয়ারী সন্ত্রাসী হামলায় সন্তোষপুর গ্রামের খলিফা বাড়িতে সন্ত্রাসীরা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদের বসত ঘর পুড়িয়ে দেয়। এতে নগদ কয়েক লক্ষ টাকাসহ অন্তত ১০ লক্ষাাধিক সম্পদ ভষ্মীভূত হয়। সন্ত্রাসীরা লুটে নেয় জিনিসপত্র ও গোয়ালঘরের গরু। তারা একই বাড়ির আরো ১০/১২টি ঘরেও হামলা ও ভাংচুর করে। এসময় তাদের হামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ, তার তিনি ছেলেসহ ৬জন আহত হয়।

প্রতিবেদকঃশিমুল হাছান,২১ মার্চ ২০২১

Share