নবনির্মিত ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে সড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবী করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন জনসাধারণ।
এনিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমপ্লেক্সের সামনের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। ওই স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ভাস্কর্য নির্মানসহ স্থানটির সৌন্দর্য বর্ধনে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রস্থাব দিয়েছেন তিনি। অপরদিকে জনস্বার্থ বিবেচনায় আবেদনটিতে স্থানীয় এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়াও সুপারিশ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে উক্ত আবেদনের কপি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর-রায়পুর সড়কের ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে সরকারি ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ১৬ হাজার ২শ’ ৩২ টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের বীর সৈনিকদের বহুল কাঙ্খিত এই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি গত ১লা এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত কমপ্লেক্সটির প্রথম দু’তলা মার্কেট এবং তৃতীয়তলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় ও হলরুম হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
কিন্তু সরকারের এই বিশাল উন্নয়ন কাজটি ঢাকা পড়েছে সামনের অবৈধ স্থাপনার কারনে। বাসস্ট্যান্ডের ১শ’ মিটারের মধ্যে ভবনটির অবস্থান হলেও অবৈধ স্থাপনার কারণে বাসস্ট্যান্ড থেকে এই ভবনটিকে দেখা যায় না। মূলত স্থানীয় কতিপয় অসাধু ব্যক্তির গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা ভবনটিকে আড়াল করে রেখেছে।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক পাটওয়ারীর ছেলে মো. মাহবুবুর রহমান আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংগঠনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন।
তিনি উল্ল্যেখ করেন কিছু অসাধু লোক সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গার উপর অবৈধ স্থাপনা নির্মান করে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। বাসস্ট্যান্ডে যত্রতত্র কতিপয় ব্যক্তি ফলের দোকান বসিয়ে মূল সড়কটিকে সংকোচিত করে রেখেছে। যার ফলে বাসস্ট্যান্ডে দুটি গাড়ি ওভারটিকং এ সমস্যা হচ্ছে। দ্রæত সড়কের পাশ থেকে এসকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন।
এসর্ম্পকে মাহবুবুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সর সামনে থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের পাশের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ভার্ষ্কয অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভার্স্কয তৈরি করে পানির ফোয়ারা নির্মান করা যেতে পারে। বিনোদনের জন্যে মিনি পার্ক এবং বিজয় মেলার জন্যে ডোবা ভরাট করে মাঠ নির্মাণ করা যেতে পারে। এতে করে এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে গাড়ি চলা চলে সুবিধা হবে। একই সাথে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স থেকে প্রাপ্ত বাড়তি আয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ সাধন করা সম্ভব হবে।
এসর্ম্পকে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম সিরাজুল হক বিএড এর সন্তান ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. মশিউর রহমান মিটু চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে সরকারি জায়গাতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনার কারণে সড়ক দূর্ঘটনা ও যানজট লেগেই থাকে। অচিরেই এই অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্থানে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে নির্মান করেছে। কিন্তু অবৈধ স্থাপনার কারণে ওই ভবনটি দেখা যাচ্ছে না।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শহীদ উল্ল্যা তপাদার বলেন, এলজিইডির কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন বুঝে নেওয়ার অপেক্ষায় আছি আমরা। ভবন বুঝে পাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উচ্ছেদকৃত স্থানে ফুলের বাগান তৈরিসহ ভবনের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।
অপরদিকে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই কমপ্লেক্সটি ফরিদগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে হস্তান্তর করা হবে মর্মে জানিয়েছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী ড. মো. জিয়াউল ইসলাম।
এসর্ম্পকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার এ প্রতিনিধিকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনের জায়গা সড়ক ও জনপদ বিভাগের। কতৃপক্ষকে আমি অনুরোধ করবো অচিরেই যেনো বাসস্ট্যান্ড ও আসে পাশের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগীতা করা হবে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক এ এইচ এম মাহফুজুর রহমান বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য করা আবেদনটি ভূমি কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। অচিরেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ফরিদগঞ্জ