চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে পিতৃ-মাতৃহারা ৬ বছরের শিশু। ধর্ষণের শিকার শিশুটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুর পরিবারের হাতে ৯ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন ও ঘটনার বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ধমকে দেন।
কিন্তু অভিযুক্তের বাবা ও তার পক্ষের লোক জনের হুমকির শিকার শিশুর নানী বিচার চাওয়ার সাহসও করতে পারছে না। প্রভাবশালীরা তার কাছ থেকে জোর পূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। ফলে ঘটনার ১৩ দিন পরও পৈশাচিক এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
ঘটনা ঘটেছে গত ১৩ই জুন রাত আনুমানিক ১১টায় উপজেলার আলোনিয়া গ্রামে। ঘৃণিত এ ঘটনায় শুক্কুরের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার খবর পেয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মী বিকেলে ঘটনাস্থলে যায়। কথা হয় শিশুর রোগাক্রান্ত নানীর সঙ্গে।
তিনি চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ঘটনার কিছু সময় আগে তিনি পাশের ঘরে যান। এ সময় শিশুটি একাই ঘুমিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর তিনি ঘরে ফিরে যান। ফিরে নাতনীকে যৌন নির্যাতনরত অবস্থায় শুক্কুর আলী (২০) নামের লম্পটকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।
তিনি তার শুক্কুরের শার্টের কলার চেপে ধরে চিৎকার দেন। এ সময় শুক্কুর আলী দৌড়ে পালিয়ে যায়।
সাথে সাথে তিনি শুক্কুর আলীর ঘরে গিয়ে ও তার বাবা, মাকে ঘটনা জানান। ঘটনা শুনে শুক্কুরের বাবা সিরাজুল ইসলাম সিরা, মা নেহার বেগম ও বাড়ির অন্যান্য লোকজন শিশুর ঘরে যান। তারা শিশুর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পান।
আক্রান্ত শিশু চাঁদপুর টাইমস প্রতিবেদকের কাছে তার ভাষায় ঘটনাটি খুলে বলেছেন এবং ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
এদিকে শুক্কুরের বাবা ও মা শিশুর নানীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘তুমি কাউকে কিছু বলবে না। আমরা সুষ্ঠু বিচার করবো।’
আর শিশুর দরিদ্র্য নানীও এতে আশ্বস্ত হয়ে কিছুদিন চুপ থাকেন।
কিন্তু, শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১৫ জুন দুপুরে চাঁদপুর জেলা সদর হাসপাতালে নানী তাকে নিয়ে যান। সেখানে তার চিকিৎসাপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
পরে ওইদিন রাত ১০টায় শুক্কুরের বাবা, মা, ভাই ও জনৈক ইসমাইল শিশুর নানীর ঘরে যান। তারা তার হাতে ৯ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে একটি সাদা কাগজে দস্তখত নেন ও ঘটনার বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ধমকে দেন।
শিশুর নানী অভিযোগ করে বলেন, আমি পরদিনই ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বাছির উদ্দিন ও মেম্বার বুলু কে জানিয়েছি। কিন্তু, তারা আমাকে কোনও সহযোগিতা করেনি।
তিনি আরও জানান, শিশুর বাবা জন্মের পরই তাকে ও তার মাকে ফেলে পালিয়ে গেছে। বাড়িতে খেতে না পেরে তার মাও ঢাকা শহরে চলে গেছে। আমিই শিশুকে লালন পালন করছি। সে পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলে শিশু শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, আমি এ নোংরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে বাড়ির এক গৃহবধু জানান, এই শুক্কুর একে একে ৪বার আমার ঘরে ঢুকেছে। আমি প্রত্যেকবারই তাকে ধরে ফেলেছি। তার বাবা, মা তার বিচার করবে বলেছে। কিন্তু, সে তার নোংরা কাজ করেই যাচ্ছে। শুক্কুরের বাড়ির আশেপাশের নারী-পুরুষ ও যুবকরা বলেছেন, শুক্কুরের বাবা মা ভাই ও তাদের আত্মীয় স্বজন উগ্র। তাদের হুমকি ধমকির শিকার হয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে শুক্কুরের বাবা, মা ও বড় ভাই নাছির এর সঙ্গে তাদের বসত ঘরে আলাপকালে তারা বলেন, শুক্কুর বখাটে হয়ে গেছে। তাকে শাসন করেও কাজ হচ্ছে না। এক প্রশ্নের উত্তরে, শিশুর নানীকে ৯ হাজার টাকা দেয়ার কথা তারা স্বীকার করেন। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, শুক্কুর এখন কোথায় আছে, জানি না।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বাছির উদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে বলেছেন, শিশুর নানী আমার কাছে এসেছিলো। তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে বলে দিয়েছি। অপরএক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমি থানায় জানাইনি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভুলু মেম্বারও হুবহু কথা বলেছেন।
ঘৃণিত এ ঘটনায় শুক্কুরের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মোঃ শাহ আলম বলেছেন, এমন কোনো অভিযোগ পাইনি।
প্রতিবেদক-আতাউর রহমান সোহাগ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur