ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুপসা উত্তর ইউনিয়নের দক্ষিণ বদরপুর চাঁদ মিয়া পাটওয়ারী বাড়ি সংলগ্ন থেকে গৃদকালিন্দিয়া মোহাম্মদিয়া কিন্ডার গার্টেন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়ক এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাকালে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে এমনভাবে কাঁদার সৃষ্টি হয় দেখে মনে হবে চষা ক্ষেত।
সড়কটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে দাবি জানিয়ে এলেও কেউ তাদের দাবির প্রতি ভ্রæক্ষেপ করছে না। আর সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় অনেক পথচারীর হাত-পা ভেঙে পঙ্গু হচ্ছে।
এলাকার স্থানীয়রা জানান, ফরিদগঞ্জ নির্বাচনীয় এলাকার সাবেক ও বর্তমান সাংসদ নিজেও নির্বাচনকালী দক্ষিণ বদরপুর চাঁদ মিয়া পাটওয়ারী বাড়ি সংলগ্ন থেকে গৃদকালিন্দিয়া মোহাম্মদিয়া কিন্ডার গার্টেন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কটি পাকাকরণ করে দিবে বলে কথা দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও কেন এ দেড় কিলোমিটার সড়ক পাকা হচ্ছে না তা আমাদের জানা নেই।
দক্ষিণ বদরপুর চাঁদ মিয়া পাটওয়ারী বাড়ি সংলগ্ন থেকে গৃদকালিন্দিয়া মোহাম্মদিয়া কিন্ডার গার্টেন পর্যন্ত গ্রামের শেষ পর্যন্ত সড়কটি প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ সেই প্রথম থেকেই বেহাল অবস্থা। সড়কটিতে চলতে গিয়ে প্রতিদিন নাকাল হতে হচ্ছে এ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের।
আবার সামান্য বৃষ্টি হলেই খানাখন্দে ভরা সড়ক দুটিতে পানি জমে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলরত সাধারণ মানুষ ও স্কুল কলেজে যাওয়া আশা শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বেহাল এই সড়কে প্রায়ই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা চলাচলের সময় খানা-খন্দে পড়ে তাদের জামা-কাপড় নষ্ট করছে। গত দিনের টানা বৃষ্টিতে এই ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
গৃদকালিন্দিয়া বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান,‘ভাঙা এ সড়কে প্রতিদিন আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পথচারীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে।’
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন,‘এ সড়কটি খুব দ্রæত বাস্তবায়ন করা হোক,তার জন্য আমরা ফরিদগঞ্জ নির্বাচনি এলাকার সাংসাদ সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান এর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
স্থানীয় এমরান হোসেন বলেন,‘আমাদের এ গ্রামের বেহাল সড়কে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় রোগীদের। বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স বা সিএনজিতে যেসব রোগী আসেন তাদের যন্ত্রণা অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে। কাঁচা বেহাল সড়কে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের। জরুরি মুহূর্তে অথবা গুরুতর অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে বা কোনো সিএনজি করে তাদের হাসপাতালে আনতে হয়। সে সময়ে কোন অ্যাম্বুলেন্স বা সিএনজি ঢোকানো যায় না। এছাড়া অন্য রোগীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন,‘প্রতিদিন আমাদের এই সড়ক দিয়ে কলেজে যাতায়াত করতে হয়। আসা-যাওয়ার সময় যখনই এই পথটুকুর কথা মনে পড়ে,তখনই মনটা খারাপ হয়ে যায়।
বিরক্তি আর তিক্ত অভিজ্ঞতা এখানে আমাদের। আমাদের স্থানীয় বিভিন্ন জন প্রতিনিধিরা আমাদের এলাকায় এসে এ সড়কটি করে দিবেন বলে প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। কিন্তু আজও তা করা হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মমিন জানায়, আমি গত কয়েকদিন পূর্বে নিজ অর্থায়নে কিছু সংস্কার করেছি। এ রাস্তা পাকা করনে কোড নাম্বার পড়েছে। তবে কোন অগ্রগতি দেখছি না। জনস্বার্থে এ রাস্তাটি জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ বদরপুর চাঁদ মিয়া পাটওয়ারী বাড়ি সংলগ্ন থেকে গৃদকালিন্দিয়া মোহাম্মদিয়া কিন্ডার গার্টেন পর্যন্ত সড়কটির ওপর এ গ্রামের লোকজন নির্ভরশীল। এলাকার লোকজন এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করছেন। শুধু তাই নয় ওই এলাকার স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরাও এ সড়কের ওপর নিভর্রশীল।
সর্বোপরি এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধান-পাটসহ অন্যান্য পণ্য বাজারজাত করতে এ সড়ক দিয়েই বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করতে হয়। এ ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নেই। ফলে কৃষকরা ধানসহ অন্যান্য পণ্য বাজারজাত করতে মারাত্মক অসুবিধায় পড়ছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুপসা উত্তর ইউনিয়নের দক্ষিণ বদরপুর চাঁদ মিয়া পাটওয়ারী বাড়ি সংলগ্ন থেকে গৃদকালিন্দিয়া মোহাম্মদিয়া কিন্ডার গার্টেন পর্যন্ত কৃষকরা প্রতি মৌসুমে হাজার হাজার মণ ধান ফরিদগঞ্জ, গৃদকালিন্দিয়া বাজার ও পাশ্ববর্তী উপজেলা রায়পুরসহ বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে থাকে। ওই কৃষিপণ্য নেওয়ার একমাত্র পথ এ সড়ক। সড়কটি প্রায় দেড় কিলোমিটার,সবটুকুই কাঁচা।
চলতি বর্ষা মৌসূমে সড়কটির এমন অবস্থা হয়েছে যে, যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেই চলাচল করা অসম্ভব। কাঁদার গর্তে পিছলে পড়ে প্রায়ই পথচারীরা হাত-পা ভাঙ্গাসহ মারাত্মক আঘাত পেয়ে থাকেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও এলাকাবাসির ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এ সড়কের ওপর নিভর্রশীল বিপুল জনগোষ্ঠীর দুর্দশা লাঘবে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এমতাবস্থায় সড়কটি পাকা করে এলাকাবাসীর ভোগান্তি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রæত হস্তক্ষেপ আবশ্যক।
শিমুল হাছান , ৩১ জুলাই ২০২১
এজি