দলিলের তফসিল সম্বলিত পাতা পরিবর্তন করে খারিজ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসের আব্দুল করিম পাটওয়ারী নামে এক দলিল লেখকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট কোর্টে মামলা (সিআর মামলা নং- ৪৯৩/২৪ )দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম । এদিকে ঘটনার বিষয়ে দলিল লেখকের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন এবং একজন সাংবাদিকের মুঠো ফোন ছিনিয়ে নেন।
জানা গেছে, উপজেলার ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবড়ালী মৌজার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। গত ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারী তিনি তার ছেলে হাসান ইসলামকে সংশ্লিষ্ট মৌজার বিএস ৩২০৬ দাগে ৬ শতক এবং ৩২২৭ দাগে ৫ শতক ৩০ পয়েন্ট অর্থাৎ মোট ১১ শতক ৩০ পয়েন্ট জায়গা হেবা (দলিল নং ৫৯৫) ঘোষণা করে দেন। যার দলিল লেখক ছিলেন আব্দুল করিম পাটওয়ারী (সনদ নং-৮৯)। এরপর একই বছরের ১৬ জুলাই দলিল গ্রহিতা হাসান ইসলামের পক্ষে সহকারি কমিশনার (ভুমি) বরাবর জমি খারিজের আবেদন করেন আব্দুল করিম পাটওয়ারী। কিন্তু আব্দুল করিম পাটওয়ারী জালিয়াতি করে আবেদনে ৩২০৬ এবং ৩২২৭ দাগের পরিবর্তে ৩৬৬৩ দাগেই ১১ শতক ৩০ পয়েন্ট জায়গা খারিজের আবেদন করেন। এ সময় তিনি দলিলের সার্টিফাইড কপির তফসিল সংক্রান্ত পাতা কক১৭৫০৭৮৩ এর পরবর্তে অবৈধভাবে ড১৬৫১২৭৩৫ পাতাটি সংযুক্ত করেন এবং তাতে তফসিল পরিবর্তন করে দেন। এমনকি তিনি খারিজ আবেদনের ৪টি স্থানে নিজের মুঠো ফোন নাম্বার জুড়ে দেন।
আরও পড়ুন… ফরিদগঞ্জে সাংবাদিকের মোবাইল ছিনিয়ে নিলেন দলিল লেখক আব্দুল করিম
পরিবর্তিত তফসিল অনুসারেই খারিজও করিয়ে নেন। খারিজ নং ১৯৫ এবং খারিজ মামলা নং ৩৮৪(ওঢ-ও)/২০২৩-২৪। ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম জমির খাজনা দিতে গিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি টের পান। পরে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ শেষে চলতি বছরের ১১ আগস্ট ছেলে হাসান ইসলাম ও দলিল লেখক আব্দুল করিমকে বিবাদী করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চাঁদপুরে মামলা দায়ের করেন তিনি। এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, আমার দলিলটির লেখক ছিলেন আব্দুল করিম। খারিজটিও তার মাধ্যমেই হয়েছে। সে দলিলের সার্টিফাইড কপির পাতা পরিবর্তন করে তফসিল পরিবর্তন করেছে। আবার দলিলের পরিবর্তিত পাতায় আমার স্বাক্ষরও বসিয়েছে। আমি আমার ছেলে এবং তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি এবং তার সনদ বাতিলের দাবী করছি। নুরুল ইসলামের ছেলে হাসান ইসলাম জানান, আমি জমি খারিজের জন্য দলিল লেখক আব্দুল করিমকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনিই সকল কাজ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে দলিল লেখক আব্দুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা শতশত মানুষের খারিজ করি। হাসান ইসলাম কাগজপত্র সব সংগ্রহ করে খারিজের জন্য আমাকে দিয়েছেন। আমি খারিজ করে দিয়েছি। এদিকে দলিল লেখকের বক্তব্য নেয়ার সময় তিনি হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের উপর চড়াও হন। এসময় তিনি এক সংবাদিকের মুঠো ফোন ছিনিয়ে নেয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা সাব রেজিস্টার ও দলিল লেখক সমিতির বরাবর তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিস্টার মো: আরিফ হোসেন জানান, রেকর্ড অনুসারে দলিলে কোন অনিয়ম নেই। যা হয়েছে তার দায় দায়িত্ব দলিল লেখক ও দলিল গ্রহিতার। সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্য মুলক আচরণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিবেদক মো: শিমুল হাছান, ৮ অক্টোবর ২০২৪