যুথির বয়স সাড়ে তিন বছর আর রাফির ২ বছর। তাদের ঘরের পাশেই রাখা বালি নিয়ে খেলা করছিলো তারা। গায়ে বালি মাখাতে তাদের মা হাওয়া বেগম ছেলে মেয়েকে বকা দেয় এবং বালির পাশেই পানি দিয়ে ছেলেকে গোসল করায়। বালির স্তুপ ছিলো পাশের ঘরের বিল্লাল মোল্লাদের। তাদের বালু কেন ভিজালো এটা নিয়ে দুই পক্ষের তুমুল ঝড়গা। এক পর্যায়ে বিল্লাল মোল্লার ছেলেরা কয়েক দপায় হাওয়া বেগম (২৮), তার ননদ রুমা আক্তার (২১) এবং বৃদ্ধা শাশুড়ি ফাতেমা বেগম (৬০ কে মারধর করে। এক পর্যায়ে জোর পূর্বক তারা হাওয়া বেগমের ঘরে প্রবেশ করে তাদের উপর অত্যাচার চালায়।
ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১২ নং চর দুঃখীয়া (পশ্চিম) ইউনিয়নের বিষকাটালি গ্রামের মোল্লা বাড়িতে ঘটেছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাওয়া বেগম বাদী হয়ে চাঁদপুর কোর্টে মামলা দায়ের করে। মামলায় বিবাদী করা হয় মাসুদ মোল্লা, শরীফ মোল্লা পিতা- বিল্লাল মোল্লা, বিল্লাল মোল্লা পিতা মৃত আহমদ উল্যাহ মোল্লা, জান্নাত বেগম পিতা- বিল্লাল মোল্লা, মনুফা বেগম পতি বিল্লাল মোল্লা।
মামলার আরজি মোতাবেক জানা যায়, ‘১২ ফেব্রুয়ারি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের ভূমি সংক্রান্তের জের ধরে বাদীনি এবং তার স্বজনদের পুরুষ শূণ্য পেয়ে মারধর করে মারাক্ত জখম করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হাতে রড, বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাদীর বসত ঘরে অনধিকার প্রবেশ করে। এসময় তার কোলে থাকে ৪ মাস বয়সি বাচ্চাকে ছুড়ে ফেলে বাদীনি হাওয়া বেগমকে এলোপাথারী মারধর করে। বিল্লাল মোল্লা তার হাতের রড দিয়ে হাওয়ার মাথা লক্ষ করে স্বজোরে আঘাত করে। আঘাত পেয়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মাসুদ মোল্লা হাওয়া বেগমের ৪ মাস পূর্বে সিজার করা স্থানে লাথি দিয়ে মারাত্মক আঘাত করে। শরীফ তার হাতে থাকা রড দিয়ে হাওয়া বেগমকে বাম বাহুতে আঘাত করে। হাওয়া বেগমের ডাক চিৎকারে সেখানে ছুটে আসে তার শাশুড়ী ফাতেমা বেগম এবং ননদ রুমা আক্তার। তাদেরকেও ছাড়েনি মাসুদ আর শরীফ। বৃদ্ধা ফাতেমা বেগমকে (৬০)কে আঘাত করে আধমরা করে রাখে। বাঁশ দিয়ে ফাতেমা বেগমের পিঠে আঘাত করা হয়। এ সময় তারা রুমা বেগমকে গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার চেষ্টা করে।
এছাড়া তারা তরুণী রুমার তলপেটেও লাথি মারে। এ সময় তারা ঘরে ভাংচুর এবং লুটপাট করে। রুমার গলায় থাকা ১ ভরি স্বর্ণের চেইন, আলমারীর ড্রয়ার থেকে নদগ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ভবিষ্যতে বাড়াবাড়ি করলে হাওয়া বেগম গংদের জানে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। মারামারির এক পর্যায়ে অবস্থা খারাপ দেখে বাড়ির লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিতে গেলে হামলাকারীরা বাধা সৃষ্টি করে। উপায় না পেয়ে তারা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা নেয়। তারা ১২ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। চিকিৎসার কারণে কোর্টে মামলা করতে দেরী হয়েছে বলে আরজিতে উল্লেখ করা হয়।’ মারামারির একাধিক ভিডিও ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করে।
ঘটনাস্থলে গেলে কাতরাতে কাতরাতে বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন,‘বাবা ওরা আমাকে বাঁশ দিয়ে পিঠে বাড়ি দিয়েছে। আমার পুতের বৌ আর আমার মেয়েকেও মেরেছে।’
মামলার বাদী হাওয়া বেগম সাংবাদিকদের বলেন- ‘আমার আর আমার ননদের ছোট ছোট বাচ্চাগুলো ওদের বালি নিয়ে খেলতে গিয়ে নিজেদের শরীর বালি দিয়ে ভরে পেলে। আমি তাদের বকা দিয়ে ঐখানে পানি নিয়ে তাদের গোসল করাই। গোসলের পানি তাদের বালিতে কেন গেলো সেজন্য ওরা আমাদের ঘরে প্রবেশ করে আমাদের মেরেছে। আমার ৪ মাসের সন্তানকে আমার কোল থেকে কেড়ে নিয়ে ফিক মেরে ফেলে দিয়েছে। তারপর রড দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলে আমি মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ি। এ সময় তারা আমার সিজারের জায়গায় লাথি মারে।’
ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত পুরুষদের কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল নাম্বার চাওয়ার পর তাদের স্ত্রীগনও পালিয়ে যায়। পরে ৫নং আসামী বিল্লাল মোল্লার স্ত্রী মনুফা বেগম (৫০) এর কাছে জানতে চাওয়া হয় ১২ ফেব্রুয়ারি কী হয়েছিলো। তিনি
সাংবাদিকদের বলেন- ‘আমরা আমাদের জায়গায় বালু রাখছি। তাদের বাচ্চারা আমাদের বালু নষ্ট করে দিছে। পানি ঢেলে দিয়েছে। আমরা বাচ্চাদের বকা দিলে তারা উল্টো আমাদের গালি দিয়েছে।’ তাদের ঘরে গিয়ে কেন মারলো আপনার সন্তানরা। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ওদের মুখ খারাপ। আমার স্বামীর দাড়ি চিড়ে ফেলছে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- তারা ঢাকায় আছে।’
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩