ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা : সংস্কারে ধীরগতিতে চরম ভোগান্তি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ভঙ্গুর সড়কগুলোতে জনসাধারনের ভোগান্তির শেষ নেই। চলমান বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও জনসাধারণের এ ভোগান্তিকে চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।

এছাড়া পৌরসভা ও উপজেলা সদর থেকে গ্রামাঞ্চলে যাতায়াতের নির্মাণাধীন গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। নির্মানাধীন সড়কগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে কাজের ধীরগতির জন্য তারা নানা ধরনের অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন।

ফরিদগঞ্জ পৌরসভা ও একাধিক ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ‘ফরিদগঞ্জ পৌর সদরের টিএন্ডটি মোড় থেকে থানা মোড় পর্যন্ত নির্মাণাধীন। কর্দমাক্ত সড়কটি দিয়ে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণ চলাচল করছে না। এনিয়ে সড়কে যাতায়াতকারী জনসাধারনের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পৌর শহরে যাতায়াতের এই সড়কটির দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ঠিকাদার অদৃশ্য কারণে সংস্কার কাজ শেষ করছে না।

তবে পৌর মেয়র মাহফুজুল হকের দাবি তিনি সড়কটির দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়ে আসছেন।

পৌরসভাধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের সড়কটিরও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের আব্দুল হক সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি দিয়ে নিয়মিত বাড়িতে যাতায়াত করেন পৌরসভার দুই জন কাউন্সিলরসহ হাজারো বাসিন্দা।

সড়কটির পৌরসভার অংশের পরে ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের কালির বাজার অংশের শুরু। এটি যুক্ত হয়েছে ফরিদগঞ্জ থেকে কালির বাজার সড়কের সাথে। কিন্তু গত এক দশকে একবার ও সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ফরিদগঞ্জ পৌর সদর থেকে উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের অধিকাংশ সড়কেরই বেহাল দশা বিরাজ করছে। পৌরসভার রুপসা রাস্তার মোড় থেকে রুপসা বাজার-আমিরা বাজার হয়ে খাজুরিয়া বাজার পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রুপসা বাজারটি জনগুরুত্বপূণ স্থান হওয়া শর্তেও গত কয়েক বছর ধরেই সড়কের এই অংশটুকু পর্যন্ত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এনিয়ে রুপসা বাজার ব্যবসায়ী ও সড়ক দিয়ে চলাচলকারী জনসাধারনের মাঝে ক্ষোভ ও হাতাশা বিরাজ করছে।
অপরদিকে ফরিদগঞ্জ বাজারের কেরোয়া ব্রিজ থেকে মিরপুর সড়কটির বেহাল দশা বিরাজ করছে। গত সোমবার সকাল থেকে সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহন চালকরা সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে। এনিয়ে কয়েকজন সিএনজি চালক জানায় রোববার রাতে কয়েকটি সিএনজি সড়কের বড় গর্তে পড়ে পাশের ঝিলে উল্টে পড়ে যায়। এছাড়া ছোটবড় দুর্ঘটনা সড়কে যাতায়াতকারী জনসাধারনের নিত্যসঙ্গী।

এছাড়া পৌর সদরের কেরোয়া ব্রিজ থেকে চান্দ্রা বাজার হয়ে ওয়াপদা পর্যন্ত বেহাল সড়কটির সংস্কার কাজ চলছে। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারাধীন সড়কটির নির্মাণ কাজ খুবই ধীর গতিতে হচ্ছে বলে ওই সড়কে যাতায়াতকারী জনসাধারনের অভিযোগ।

পৌরসভার ভাটিয়ালপুর চৌরাস্তা থেকে আইলের রাস্তা হয়ে হরিনা ফেরীঘাট পর্যন্ত সড়কটি গত কয়েক বছর পূর্বেই মরণ ফাঁদে অবস্থায় রয়েছে। হয়। সড়কটির বেহাল অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনের পরেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে এই সড়কটি দিয়ে ইতোমধ্যে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতরে অন্যতম মাধ্যম হলেও সড়কটি দিয়ে চলাচলে যানবাহন চালকরা অপরাগতা প্রকাশ করছে এবং অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে।

এ সড়কের বিষয়ে চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে এর সংস্কার কাজে প্রাক্কলিত ব্যয় ১৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শীঘ্রই টেন্ডার পক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এছাড়াও ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চলের পাকা ও কাঁচা সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে জনসাধারনের ব্যাপক ভোগান্তি হ”েচ্ছ। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উপজেলার চান্দ্রা-সেকদী-টুবগী সড়ক, ১নং বালিথুবা ইউনিয়নের চান্দ্রা ওয়াপদা রাস্তা থেকে পাইকদী খেয়া ঘাট, চান্দ্রা বাজার থেকে ঔষুধ বাড়ি, বালিথুবা বাজার হতে ওয়াপদা সড়ক, দেইচর কালির বাড়ি থেকে জামতলা, জামতলা বাজার থেকে রামচন্দ্রপুর খেয়াঘাট, ইসলামপুর নবী উল্ল্যার দোকান থেকে কাজী বাড়ির রাস্তা, কৃষ্ণপুর ডরাঢোল খাল ব্রিজ থেকে তাপাজ্জলের দোকান, ইসলামপুর শহীদ উল্ল্যার দোকান থেকে সাংবাদিক শফিকুর রহমানের বাড়ি, ২নং বালিথুবা ইউনিয়নের মাছিমপুর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে রাজাপুর হয়ে ওয়াপদা পর্যন্ত, ওয়াপদা থেকে রাজাপুর বালিথুবা হাতির বাড়ি হয়ে বালিথুবা বাজার পর্যন্ত, বালিথুবা আড্ডা বাড়ি থেকে সাংবাদিক শফিকুর রহমানের বাড়ি হয়ে কৃষ্ণপুর পর্যন্ত। বালিথুবা বাজার থেকে রাঢ়ি বাড়ি হয়ে দেইঢ়র প্রাইমারী স্কুল, বালিথুবা দাখিল মাদ্রাসা থেকে টোরা বাড়ি হয়ে সানকিসাইর হাফিজিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত, দেইচর কালির বাড়ি থেকে জামতলা বাজার, পাটওয়ারী বাজার থেকে চৌধুরী বাড়ি হয়ে জামতলা রাস্তার মাথা, ইসলামপুর রাস্তার মাথা থেকে বগার গুদাড়া পর্যন্ত, বালিথুবা রাস্তার মাথা থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত। সরখাল থেকে শহীদুল্লাহ তপাদারের বাড়ি হয়ে মূলপাড়া একতা বাজার, মূলপাড়া একতা বাজার থেকে কামরাঙ্গা খেয়াঘাট পর্যন্ত, ৩নং সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের উভারামপুর থেকে বাঁশারা হয়ে আল-মদিনা বাজার, লক্ষ্মীপুর চৌরাস্তা থেকে আনন্দ বাজার হয়ে শ্রী কালিয়া, ৪নং ইউনিয়নের বদরপুর থেকে কামরাঙ্গা খেয়া ঘাট, বদরপুর থেকে মুন্সিরহাট, মুন্সির হাট থেকে উটতলী খেয়া ঘাট, বুলাচো থেকে রানার বাড়ি হয়ে একতা বাজার, বড়গাঁ গাজী বাড়ির সামনে থেকে ঠাকুর বাজার, ঠাকুর বাজার থেকে জয়শ্রী রাস্তার মাথা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আইটপাড়া হয়ে শাহার বাজার, ৫নং গুপ্টি ইউনিয়নের গল্লাক বাজার থেকে শ্রী কালিয়া হয়ে ফকির বাজার, গল্লাক থেকে আষ্টা, মানুরী-গুয়াথুবা-বালিমুড়া সড়ক, ৬নং ইউনিয়নের খাজুরিয়া বাজার থেকে হুগলী হয়ে রামগঞ্জ সড়ক, হুগলী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রামগঞ্জ, হামচাপুর থেকে নারকেল তলা হয়ে গল্লাক বাজার, পূর্ব গুপ্টি সূত্রধর পাড়া সড়ক, ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের ভাওয়াল থেকে শোল্লা বাজার, শাহী বাজার থেকে পশ্চিম জয়শ্রী হয়ে কড়ৈতলী বাজার, শাহী বাজার থেকে কাশার ওল্ড স্কীম দাখিল মাদ্রাসা হয়ে চৌরাঙ্গী বাজার, কাঁশারা থেকে আশক কুয়ারী হয়ে কড়ৈতলী বাজার, ভাওয়াল ভূইয়া বাড়ি থেকে সাহার বাজার হয়ে শোল্লা বাজা, ১৫ নং রুপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের রুপসা বাজার থেকে সাচিয়াখালী পর্যন্ত, রুপসা বাজার থেকে দত্ত শোল্লা, দক্ষিণ কাছারি বাড়ি থেকে লাউতলী, পৌর সভার চতুরা থেকে রহমান মিঝি বাড়ি, হাজী বাড়ি থেকে বোর্ড স্কুল, মৃধা বাড়ি থেকে জমাদার বাড়ি, চতুরা মসজিদ থেকে মালের ভাংতি, আজিম বাড়ি সংলগ্ন কালর্ভাট হতে চরপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বদিউজ্জামনাপুর পর্যন্ত সড়কে বেহাল দশা বিরাজ করছে। ১৬নং ইউনিয়নের জোড় কবর থেকে নাগের দিঘির পাড় বাজার, কুড়ালি মসজিদ থেকে মধ্য সাহেবগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত।

উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের সড়কগুলোর মধ্যে ১১নং ইউনিয়নের আলোনিয়া বাজার, বেড়ির বাজার থেকে কালির বাজার পর্যন্ত ১কি., বেড়ির বাজার থেকে বেপারী বাজার হয়ে বিরামপুর পর্যন্ত, পশ্চিম সন্তোষপুর আমতলী হতে রামপুর সড়ক দেওয়ান বাড়ি পর্যন্ত, বেড়ির বাজার থেকে রাঢ়ি বাড়ি পর্যন্ত, ১১নং ইউনিয়নের গোয়ালভাওর বাজারের প্রধান সড়ক, গোয়ালভাওর থেকে চরকুমিরা ফরিদগঞ্জ সড়কের ১কি., চরমথুরারা থেকে নয়াহাট স্কুল ও কলেজ সড়ক, ১৪নং ইউনিয়নে কাটাখালী থেকে চররামপুর সড়ক হয়ে রামপুর, মদিনা বাজার থেকে তুলাতলী সড়কের বেহাল দশা বিরাজ করছে।
পৌর এলাকার রাস্তা প্রসঙ্গে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ফরিদগঞ্জ বাজারের সড়কটি ঈদের আগেই কার্পেটিং করতে চাইলে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে তখন তা আর করা হয়নি। আর এখনতো বৃষ্টির কারণে করা যাচ্ছে না।’

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজার ও হাসপতালের সামনের সড়কের সংস্কার কাজটি দ্রুত করার জন্য এরইমধ্যে ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে।’

ফরিদগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা সর্ম্পকে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ড. মো. জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘ফরিদগঞ্জ থেকে চান্দ্রা হয়ে ওয়াপদা পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার বৈরি আবহাওয়ার কারণে কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। কেরোয়া ব্রিজ থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়কটির সংস্কার কাজ কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে। পৌরসভার রুপসা রাস্তার মাথা থেকে ভ্রাম্যপাড়া সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প দেওয়া হয়েছে।’

অপরএক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফরিদগঞ্জে গ্রামীণ সাড়ে তিনশ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। যার মধ্যে আমরা সরকারি বরাদ্ধ অনুসারে বছরে মাত্র ২৫/৩০ কিলোমিটার সড়ক পাকা করতে পারি।’

তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ফরিদগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে সুন্দর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব্য হবে বলে তিনি দাবি করেন।

আতাউর রহমান সোহাগ
: আপডেট, বাংলাদেশ ৭: ৫০ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ

Share