ফরিদগঞ্জ

ফরিদগঞ্জে খোলা আকাশের নিচে চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান

চাঁদপুর ফরিদগঞ্জে বালিথুবা সামছুলিয়া অদুদীয়া মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। ১৯৯৪ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এপর্যন্ত সরকারি অর্থে অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন হয়নি।

২০০১ সালে এমপিভুক্ত হওয়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকটের কারণে ৫ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া হুমকির মুখে রয়েছে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কাযক্রম। সংশ্লিষ্টদের দাবী, বোর্ড পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হওয়া সত্ত্বেও এমপিভুক্ত হওয়ার ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও অদৃশ্যকারণে এ প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন হয়নি।

সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা মাঠের দক্ষিণ পাশে খোলা আকাশের নিচে পাশাপাশি তৃতীয়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করছেন তিনজন শিক্ষক। তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একই সাথে উচ্চস্বরে পাঠদান, মাঠের পাশদিয়ে বয়ে যাওয়ার রাস্তার ধূলাবালি ও যানবাহনের বিকট শব্দে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনোসংযোগ মারাত্বকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছিল। মাঠের পশ্চিম পাশে মসজিদের ২য় তলায় ইবতেদায়ী প্রথম ও দ্বিতৃীয় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছিলেন শিক্ষক। এছাড়া মাঠের উত্তরে রাস্তার পাশে পুরাতন পরিত্যক্ত আরেকটি ভবনের চারটি কক্ষে ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে চলছিলো অন্যান শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম।

মাঠে ৬ষ্ঠ শ্রেণির আরবী বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক মাও. হারুনুর রশিদ। তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘খোলা আকাশের নিচে সকালে ঠান্ডা ও দুপুরে প্রচন্ড গরম থাকে। এতে করে শিশু শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। খোলাস্থানে একই সাথে তিন শ্রেণির পাঠদান চলমান থাকায় তারা মনযোগ দিয়ে পাঠগ্রহণ করতে পারে না। তাছাড়াও মাঠ সংলগ্ন যানবাহনের শব্দ ও ধূলাবালিতে পড়ালেখার পরিবেশ নেই বললেই চলে।’

মাদ্রাসা সুপার মো. মাহাবুবুর রহমান সংকটের কথা তুলে ধরে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘মাদ্রাসায় ব্যবহার উপযোগী মাত্র দুটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। বাকি ৪টি কক্ষ ২০১০ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন জনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে টিনশেডের ৩টি শ্রেণিকক্ষ নির্মান করা হচ্ছিল। কিন্তু, আর্থিক সংকটের কারণে তাও সম্ভ্যব হচ্ছেনা। তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে ও পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণি পাঠদান করতে হয়। সামনের বর্ষা মৌসুমে কিভাবে শ্রেণিকার্যক্রম চালাবো এনিয়ে আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। ’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মাদ্রাসায় গত তিন বছরের জেডিসি পরীক্ষায় কয়েকটি এ প্লাসসহ শতভাগ শিক্ষার্থী ও দাখিল পরীক্ষায় শতভাগ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু, মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষ সহ বিভিন্ন সংকটের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একটি ভবনের জন্যে উর্ধ্বতনদের কাছে ধর্না দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তবে আশা করছি এই এলাকার কৃতি সন্তান মাননীয় এমপি মহোদয় আমাদের প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন করে দিবেন।’

মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল আজিজ চাঁদপুর টাইমসকে বলেছেন,‘এই এলাকার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বর্তমান সাংসদ মুহম্মদ শফিকুর রহমানের আন্তরিক সহযোগীতায় ২০০১ সালে মাদ্রাসা এমপিভুক্ত হয়। কিন্তু, পরবর্তী এমপিরা সাংবাদিক শফিুকুর রহমানের প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে এই মাদ্রাসার কোন উন্নয়ন করেনি। বিশেষ করে গত ১০ বছরে ফরিদগঞ্জের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ও ডিজিটাল ল্যাবসহ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হলেও আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি। আমি বর্তমান এমপি মহদোয়ের কাছে সমগ্র এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা নিবিঘিœ করতে নতুন একটি বহুতল ভবন নির্মানের দাবী করছি।’

এবিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আলী আফরোজ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘মাননীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার নিয়ে আবেদন করলে অবশ্যই এই প্রতিষ্ঠানে একটি নতুন ভবন হবে। এক্ষেত্রে আমি এমপি মহোদয়কে অনুরোধ করবো যাতে দ্রুত শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করার জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমর্হুত্ত্বে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করে তাহলে আমি জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

প্রতিবেদক:আতাউর রহমান সোহাগ
২৪ জানুয়ারি,২০১৯

Share