চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও যখন ঝুঁকিপ‚র্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, করোনা মোকাবেলয় চাঁদপুর জেলায় চলছে লকডাউন। এরমধ্যেও ফরিদগঞ্জে তুচ্ছু ঘটনায় চলছে হামলা মামলা। এসব হামলা মামলা বেশিরভাগ চিত্র চলে আসছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।
গত ৮ এপ্রিল উপজেলার ৪ নং সুবিদপুর ইউনিয়নের ভূলাচৌ এলাকায় দু’প্রতিবেশির দ্বন্দ্বে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়ায়। এ নিয়ে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা হলেও এটি তদন্ত কিংবা ব্যবস্থ গ্রহণে সক্ষম হয়নি পুলিশ। ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে করোন পরিস্থিতিতে সামজিক দ‚রত্ব বাস্তবায়ন ও ত্রাণ কার্যক্রমে পুলিশের ব্যাপক ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া এখনিই যাচ্ছে না।
দু’পক্ষের পাল্টপাল্টি মামলা স‚ত্রে জানা যায় ৮ এপ্রিল রাতে পাশ^বর্তী হিন্দু বাড়িতে বিশু মিয়র গরু চুরি হয়েছে বলে ডাক চিৎকার দিয়ে স্থানীয় কামরুলসহ কয়েকজন মিলে হিন্দু বাড়ির পাশে অবস্থানরত তাদের প্রতিবেশি মাছুম ও তার ভাইকে দেখতে পায় বলে চুরির অভিযোগ আনে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়।
কিন্তু স্থানীয়রা জানায় ওই রাতে বিশু মিয়ার কোনো গরু চুরি হয়নি, প্রতিবেশিকে ফাঁসিয়ে চোর সাব্যস্ত করতে এমন নাটক সাজিয়েছে কামরুল ও তার সহযোগীরা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিশু মিয়াও জানায় ওই রাতে তার কোনো গরু চুরি হয়নি কে বা কারা চোর বলে ডাক চিৎকার করে তার বাড়ির পাশে ভিড় জমায়। তিনি অন্ধ হওয়ায় কাউকে দেখতে পাননি।
তবে মামলা বলায় হয়, এ স‚ত্র ধরেই ১৩ এপ্রিল কামরুল, হাবিব, মাসুদ ও তাদের সহযোগীরা দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে (ছবিতে সংযুক্ত) স্থানীয় গ্রামের হাশিম মিয়ার বাড়ির সামনে পেয়ে তার প্রতিবেশি ওই পরিবারের মো. মাছুম ও হানিফ বেপারীকে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় তারা যন্ত্রণায় রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে থাকলে কামরুল ও তার সহযোগীর এদের দুজনকে গলাটিপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। লকডাউন পরিস্থিতিতে রাস্তা ফাঁকা থাকায় অনেক সময় ধরে মারধরের সুযোগ পায়। পরে পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাাঠানোর ব্যবস্থ করে।
মাছুম ও হানিফ বেপারীর পিতা ও মামলা বাদী শফিকুর রহমানের দাবি তার বিল্ডিংয়ের কাজ চলতেছে। তার ছেলেরা ইটের টাকা পরিশোধের জন্যে যাচ্ছিলো। এসময় তাদের পকেট থেকে হামলাকারীরাা নগদ ১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
আহত সন্তানদের পিতা কান্না কণ্ঠে বলেন, হানিফ চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও মাছুম জীবনের জন্যে পঙ্গু। তার পায়ে হাঁটুর নিয়ে কামরুল খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করায় দু’স্থানে পুরো ভেঙ্গে গেছে। ডান হাতের জোড়া ছুটে গেছে। বর্তমানে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লকডাউনে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ছেলের চিকিৎসায় পরিবারের সদস্যরা ঢাকা যাতায়াত করতে খুবই সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছন।
তবে অভিযুক্তের কামরুলের দাবি তিনি মাছুমসহ তার সাথে আরো কয়েকজনকে গরু চুরি করতে দেখেছেন। প্রতিবাদ করায় তাকে মারধর করে। এ ব্যাপারে কামরুল থানায় অভিযোগ করায় মাসুমের ফুফাতো ভাই স্থানীয় মুন্সীর হাট বাজার কমিটির ভাই সভাপতি খোরশেদ মজুমদার কামরুলের বড় ভাই সহিদ বেপারীকে মারধর করেছে বলে এ প্রতিনিধিকে জানায়। হানিফকে মারধর ও মাছুমের হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে খোরশেদ আলম জানায়, এ হামলার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। করোনা পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে বাজারে দোকান খোলা রাখায় আমি অনেক দোকানদারকেই দোকন বন্ধ রাখতে বলেছি। বাজারের সভাপতি হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব । কিন্তু এরমধ্যে বাজারের দোকানদার সহিদ বেপারীকে একাধিকবার বলা সত্তে¡ও তিনি কর্ণপাত করেনি বরং উল্টো আমার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। বিষয়টি আমি বাজারেই সমাধান করে আসছি। কিন্তু এ ঘটনায় সহিদ বেপারীর বিষয়টি জড়ানো দুঃখজনক। হামলার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।
এদিকে সোস্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে একে অপরকে দোষারপ করে এবং হামলার ভিডিও ছবি শেয়ার করছে একটি পক্ষ। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
একই বাড়ির শাহ জাহান বলেন, আমাদের বাড়িতে এ দু’পরিবারের দ্ব›দ্ব সংঘাত আমাদের জীবন জাপন করা দুর্বিষহ করে তুলছে। তাদের কারণে আমাদের ঘরে থাকা মা-বোনেরা আতংকিত থাকে সব সময় । আমরা প্রশাসনের কাছে তাদের কঠিন বিচার চাই।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রকিব জানায়, হামলার ঘটনায় দু পক্ষই মামলা দায়ের করেছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ বিষয়ে তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফরিদগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট, ২১ এপ্রিল ২০২০