ফরিদগঞ্জে কথিত সাংবাদিক কামরুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর এলাকায় এক সাংবাদিক নামধারীর নামে চাঁদাবাজির ব্যাপক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। জানা যায় তিনি আগে ঢাকায় ছিলেন। গত এক বছর আগে এলাকায় এসে সাংবাদিক নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্নজন থেকে চাঁদাবাজি করছেন। এই নিয়ে এলাকায় তার বিরুদ্ধে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গত এক বছর নিজেকে সাংবাদিক ও আওয়ামীলীগ পরিচয় দিলেও গত পাঁচ আগস্ট থেকে এখন আবার বিএনপি সেজে গেছেন বলে এলাকার অনেকে জানান। সর্বশেষ তিনি গত বৃহস্পতিবার এলাকার সোনামিয়া কবিরাজ থেকে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। সোনামিয়া কবিরাজ এত টাকা কোথায় থেকে দিবেন তার চিন্তায় ঐদিন সন্ধ্যায় তিনি হার্ট অ্যাটাক করে বসেন। এবং বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেছেন সোনামিয়া কবিরাজের ছেলে কাদির।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে অভিযোগ আসলে কথিত সাংবাদিক কামরুল ইসলাম রনির বিষয়ে ও তার চাঁদাবাজির বিষয়ে কতটুকু সত্য তা জানতে উপজেলার গাজীপুর এলাকায় যান ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় গাজীপুর এলাকায় গেলে কামরুল ইসলাম ও তার সহপাঠীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে কিছু বলতে চান না। তবে এলাকায় তাদের চাঁদাবাজির ব্যাপক গুঞ্জন শোনা গেছে। থানায় অভিযোগকারী কাদিরের বাড়িতে গেলে সেখানে চাঁদাবাজদের বিষয়ে কথা বলার জন্য অনেকে এগিয়ে আসেন। এসময় কাদির বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজ কামরুল তার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল্লাহ এবং বিএনপি নেতা বিল্লাল সহ আমাদের ঘরে আসে এবং আমার বৃদ্ধ বাবা সোনা মিয়া কবিরাজ থেকে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। ঐদিন সন্ধ্যার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা, বাকি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা কিস্তির মত দিতে বলে। এ সময় আমি ও আমাদের ঘরের অন্যান্যরা তাদের এই চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতে গেলে তারা আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন এবং বিভিন্ন হুমকী-ধমকী দেন। পরে আমার বাবা সারাদিন এসবের টেনশনে রাতে স্টক করে বসেন। পরে বাবাকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিলে সেখানের ডাক্তারেরা বাবাকে সাথে সাথেই ঢাকা মেডিকেল হসপিটালে পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে আমার বাবা ঢাকা মেডিকেল হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন।

অন্যদিকে আইরিন বেগম, পিঞ্জিরা বেগম, আছিয়া বেগম নামের তিন জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, কামরুল, শহিদুল্লাহ, বিল্লাল এরা এলাকায় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করতেছে। সর্বশেষ আমার বাবার কাছে তারা ৫ লক্ষ টাকা চায়। আমার বাবা ওই টাকার চিন্তায় স্টক করে বসেন, বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, এই তিন জনের চাঁদাবাজির কবল থেকে আমাদের রক্ষার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।

এলাকার সাবেক মেম্বার মাহবুব বলেন, কামরুল আসলেই সাংবাদিক না, তিনি সাংবাদিক দাবী করে। তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের খারাপ ওকারেন্স করে আসছে। ইতিপূর্বে তিনি কয়েকবার এলাকার মানুষের তোপের মুখে পড়েছেন এবং জেলও খেটেছেন। চাঁদাবাজির পাশাপাশি সে মাদকের সাথেও যুক্ত। আগে শুনেছি তিনি আওয়ামীলীগ ছিলেন, কিন্তু গত পাঁচই আগস্ট এর পরে এখন আবার তিনি বিএনপি হয়ে গেছেন বলে দাবি করছেন। সোনামিয়া কবিরাজের কাছে তারা তিনজনে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছেন বলে শুনেছি। এসময় উৎসক জনতা এই চাঁদাবাজদের উপযুক্ত বিচার চান বলে স্লোগান দেন।
অভিযুক্ত কথিত সাংবাদিক কামরুলের সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টার পরও তাকে পাওয়া যায়নি বলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মামুন পাঠান বলেন, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের অধীনস্থ যেসব সাংবাদিক আছেন, আমার বিশ্বাস এরা কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নয়। ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রত্যেক সাংবাদিক তাদের নিজ নিজ কর্মব্যস্ততা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোন চাঁদাবাজির সাথে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্যরা জড়িত নয়। তিনি বলেন, উল্লেখিত নামধারী সাংবাদিক কামরুল ইসলাম রনি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের কোন সদস্য নন। প্রশাসনিক ভাবে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানা।

ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ফরহাদ বলেন- অভিযুক্ত কামরুলের সাথে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের নুন্যতম সম্পর্ক নেই। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা যদি সত্য হয় তাহলে বলবো সে জঘন্য কাজ করেছে। প্রশাসনকে বলবো তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। সেই সাথে যারা তাকে সহযোগিতা করছে তাদেরকে সর্তক থাকার আহ্বান করছি। আমার বিশ্বাস আমাদের ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের কোনো সদস্য এমন কাজের সাথে জড়িত নয়।

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি, ২ আগস্ট ২০২৪

Share