ফরিদগঞ্জে ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংক শাখা থেকে টাকা নিয়ে সাবিনা নামের যুবতি উধাও হয়ে গেছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। থানায় উপস্থিত হয়ে ৫১ লাখ টাকা খোয়া যাওয়ার দাবী করে মামলার বিষয়ে কথা বলেও, শাখা মালিক ইউসুফ হোসেন রহস্যজনক কারণে আইনের আশ্রয় নেননি। টাকার অংক নিয়েও ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছেন তিনি। তার সঙ্গে ব্যাংকের এরিয়া ইনচার্জের তথ্যের অমিল পাওয়া গেছে। এছাড়া, বিল্লাল নামের এলাকার এক ব্যক্তি সংবাদ সংগ্রহে নানাভাবে বাধা দেন। ৬ জুন ঘটনা সংঘটিত হলেও, ৬ দিন ঘটনা গোপন রাখা হয়েছে। অপরদিকে, সাবিনার মাকে ইউসুফ গং হুমকি ধমকি দিয়ছেন মর্মে রোববার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন মা পারভিন বেগম।
সরজমিন ও শাখা মালিক সূত্রে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ফিরোজপুর বাজারে ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের ‘নিউ রামপুর ডট কম’ নামক শাখা অনুমোদন নিয়েছেন ইউসুফ হোসেন। প্রায় দুই বছর আগে সাবিনা (২৬) নামের প্রতিবেশি একজন যুবতিকে শাখায় নিয়োগ দেন। ইউসুফ হোসেন জানান, ৬ই জুন রাতে অফিস থেকে বের হয়ে সাবিনা পরদিন ফিরে আসেননি। দেরি দেখে তিনি শাখা অফিস খুলে দেখেন টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নেই। সাবিনার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি বাড়িতে খোঁজ নিয়েও সন্ধান পাননি। এরপর, অজ্ঞাত কারণে ছয়দিন ঘটনা গোপন রাখেন। ১৩-ই জুন রাত আনুমানিক ৯ ঘটিকায় ফরিদগঞ্জ থানায় উপস্থিত হন। সে সময় তার সঙ্গে প্রতিবেশি বিল্লাল, বেলালসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তারা, সাবিনা কর্তৃক চুরির টাকার অংক ৫১ লাখ টাকা ও অন্যান্য তথ্য অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলামকে জানান। ওসি’র পরামর্শ শুনে ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ লিখে আনার কথা বলে তারা থানা থেকে বের হন। এরপর, আর যাননি।
খবর শুনে, দুইদিন সরজমিন বিস্তারিত জানতে চাইলে ইউসুফ হোসেন রহস্যজনক আচরণ করেন। প্রশ্ন করার পর, তিনি মুখ খুলেন। তবে, সেখানে উপস্থিত বিল্লাল, ইউসুফ হোসেনকে থামিয়ে দিয়ে তিনি উত্তর দেন। এরই মধ্যে, ইউসুফ হোসেন বলেন, টাকার অংক ১২ লাখ। থানায় ওসিকে ৫১ লাখ টাকা জানানো হয়েছে ও ৬ তারিখের ঘটনা এতদিন গোপন রাখা, থানায় মামলা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউসুফ নীরবতা পালন করেন। তবে, বিল্লাল হোসেন নানানভাবে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে, এজেন্ট ব্যাংক এর এরিয়া ইনচার্জ ইলিয়াস হোসেন মুঠোফোনে বলেছেন, টাকার অংক ৯ লাখ ৯১ হাজার। এ ছাড়া, অন্তত ১২/১৩ জন গ্রাহকের টাকা রয়েছে। ইউসুফ বলেছেন, টাকার অংক ৫১ লাখ- এ তথ্য শুনে তিনি নাকচ করে দেন।
অপরদিকে, সাবিনার মা পারভিন ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ইউসুফ ও তার সহযোগি কয়েকজন, দিনে ও রাতে তার বাড়ি গিয়ে হুমকি ধমকি দিয়েছেন। তিনি জীবনের নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন বলে দাবী করেছেন। জানতে চাইলে কান্না জড়িত কন্ঠে সাবিনা নিখোঁজের বিষয়ে তিনি ইউসুফকে দায়ী করে নানান কথা বলেছেন। সাবিনাকে চাকরিতে রাখতে নিষেধ করেছি। সে কৌশল করে মেয়েকে তার কাছে রেখে দিয়েছে। মেয়েকে কক্সবাজার নিয়ে গেছে। মেয়ে বাড়ি আসতো না। আমি, আপনাদের কাছে বিচার ও সাবিনার সন্ধান চাই।
ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম বলেছেন, ইউসুফ হোসেন, ঢাকা জজ কোর্টের এ্যাডভোকেট বিল্লাল, নার্কোটিকস এর এ.ডি বেলালসহ কয়েকজন ১২-ই জুন থানায় এসে বলেছেন, গ্রাহকের টাকাসহ ৫১ লাখ টাকা নিয়ে সাবিনা নামে তাদের ম্যানেজার পালিয়ে গেছে। তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি। আমি, এস.পি-সহ উর্ধ্বতন কয়েকজন অফিসার এর কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেছি। কিন্তু, ইউসুফ আর আসেননি। বরং, সাবিনার মা পারভিন লিখিত একটি অভিযোগ দিয়ে গেছেন।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২৫ জুন ২০২৪