চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের পাইকপাড়ায় বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় এক পুলিশ সদস্যের হাতে মসজিদের ইমাম লাঞ্ছিত হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন ১১ জানুয়রি সোমবার সকালে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অপরাধ) কাজী আব্দুর রহিম।
এ সময় তিনি এ ঘটনার বিষয়ে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলেন এবং ওই দিনকার ঘটনার বিষয়ে অবহিত হন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘটনার ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহিদ হোসেন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ইমামকে চড়ধাপ্পড়ের ঘটনায় এলাকার বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। সেটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করে ৪ জনের বিরুদ্ধে প্রশিকিউশন দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেছি।
এদিকে ইমামকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ১১ জানুয়ারি সোমবার পাইকপাড়ায় ঘটনাস্থলে উপজেলা ইমাম সমিতি এবং ইসলামী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ প্রায় ৮০ জন ইমাম ঘটনাস্থলে যান। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ বিচার দাবী করেন।
আরও পড়ুন… ফরিদগঞ্জে বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় ইমামকে মারধর
স্থানীয় সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ইয়াছমিন আক্তার জানান, ইমাম সাহেবকে চড়থাপ্পড়ের ঘটনাটি আমি দেখিনি,তবে এই ঘটনার পর এলাকার কিছু লোকজন ঘটনা জানতে এগিয়ে আসলে তাদের উপর হামলার ঘটনাটি দেখেছি। আলমগীর ও জাহাঙ্গীর ক্ষুব্ধ হয়ে এই হামলা করে।
প্রসঙ্গত,৮ জানুয়ারি শুক্রবার পাইকপাড়ায় বাল্যবিয়ে পড়াতে রাজি না হওয়ায় এক পুলিশ সদস্যের হাতে মসজিদের ইমাম লাঞ্ছিত হয়।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার পুলিশ সদস্য দুলালের ভাই জাহাঙ্গীরের মেয়ের বিয়েতে মসজিদের ইমাম আবুল কালাম আজাদকে দাওয়াত দেওয়া হয়। দাওয়াতে অংশ নিতে গেলে দুলাল তার বাড়ির সম্মুখে বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ইমামকে লাঞ্ছিত করাসহ মারধর করেন।
মারধরের কারণ জানতে মসজিদের বেশ কিছু মুসল্লী দুলালের বাড়ির সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তাদের উপরও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ, মাওলানা আবু জাফর, গোলাম কিবরিয়া, শাহাদাৎ হোসেন, নেছার পাঠানসহ বেশ কয়েকজন মুসল্লী আহত হন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মসজিদ কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার সাদাত বলেন, দুলাল এবং তার ভাইয়েরা বরাবরই উগ্র। দুলাল নিজেকে পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে এলাকার মানুষকে শাসিয়ে বেড়ায়। তার ভাই আলমগীর মার্শাল কোর্টে শাস্তি প্রাপ্ত হয়ে চাকুরীচ্যুত হয়েছেন। তিনিও নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর লোক বলে জাহির করে বেড়ান। শুক্রবার তারা মারধর করে তারাই আবার থানায় অভিযোগ করেছেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে ইমাম আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি জাহাঙ্গীরের মেয়ের বিবাহ পড়াতে গেলে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিধায় বিয়ে অপারগতা প্রকাশ করায়, কোন কিছু না বলেই জাহাঙ্গীরের ভাই দুলাল আমাকে মারধর করে। বিয়েতে আগত মেহমানরা প্রতিবাদ করায় তাদেরকেও মারধর করে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করছি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কাজী মো. শাহ্ আলম বলেন, আমি নিকাহ রেজি: করতে গিয়েছি, মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়সের বিধায় নিকাহ্ রেজি: না করেই চলে এসেছি। মেয়ের জন্ম তারিখ আমার দেখা মতে ২০০৪ সালে।
তবে ঘটনার পর ওই পুলিশ সদস্য নিজেকে রক্ষা করতে ইমাম থানায় অভিযোগ করার পুর্বেই নিজেই ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লাঞ্ছিত হওয়া ইমাম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গণশিক্ষা বিভাগের শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং লাঞ্ছনাকারী পুলিশ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল ডিএমপিতে চাকুরি করেন বলে জানা গেছে।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ঘটনার ব্যাপারে তারা মিমাংসা করার চেষ্টা করছেন। সোমবার সন্ধ্যায় এলাকায় বৈঠক হবে।
প্রতিবেদক:শিমুল হাছান,১১ জানুয়ারি ২০২১