চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুটি পরস্পর বিরোধী গ্রুপের দফায় দফায় সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে ঘন্টাব্যাপি চলমান এ সংর্ঘষের ঘটনায় সভাস্থল ও আশেপাশের সড়ক রণক্ষেত্রে পরিনত হয়।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে লাঠিচার্জ করে ও দেড় শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। এ সময় সাংবাদিক ও পুলিশসহ আওয়ামী লীগের উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সংর্ঘষের সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা আতংঙ্কগ্রস্ত হয়ে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এদিকে এই সংর্ঘষের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের নেতারা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য প্রদান করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আ’লীগের দলীয় সূত্র জানায়, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্যে আ’লীগের কেন্দ্রিয় নির্দেশনা অনুসারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ স্থানীয় বিআরডিবি অফিসের সামনে বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করে।
সকাল ১১টায় সভা মঞ্চে ফরিদগঞ্জের সরকার দলীয় সদ্য সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমানসহ আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা চলাকালীন একপর্যায়ে উপজেলা সদরের সবুজ মার্কেটের সামনে থেকে ড. শামছুল হক ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলে আওয়ামী লীগের ক্ষুব্ধ আরেকটি পক্ষ উক্ত সভায় অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় উভয় পক্ষর ইটপাটকেল ও কাঁচের বোতল ছুড়তে থাকে। উভয় পক্ষের মধ্যে হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলমান এ সংর্ঘষে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই রবিউল, স্থানীয় সাংবাদিক টিপু পাঠান, জেলা পরিষদের সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম রিপন, আওয়ামী লীগ নেতা আলী আকবর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি এ্যাড. মো. মাহাবুব আলম, আওয়ামী লীগের নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাহবুব সউদ, মো. মনির হোসেন, শরিফুল ইসলাম, মো. সুমন, মনু মিয়া, নিবিড় আহম্মেদ, মাসুদ আলম, সাগরসহ ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়।
আহতরা প্রথমে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ও পরে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশংঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এদিকে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা সভাস্থলের বাইরে থাকা সাবেক এমপি ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার পাজেরো জীপ ভাংচুর করে। একপর্যায়ে বর্ধিত সভাটি পন্ড হয়ে যায়। পরে সিনেমা হল মার্কেটর সামেন আরেকদফা সংর্ঘষ হয়।
দলীয় সূত্রে আরো জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে উক্ত সভা আহ্বান করা হয়। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌর মেয়র নাছির উদ্দীন আহম্মেদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম দুলাল পাটওয়ারী ঘোষনা থাকার কথা থাকলেও তারা আসেননি।
এ ছাড়াও ওই সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারও উপস্থিত ছিলেন না। তবে সভার সভাপতি হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধ আবুল খায়ের পাটওয়ারী উপস্থিত ছিলেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পৌর শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এবিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জ হারুন অর রশিদ চৌধুরী জানান, আবারো যেনো কোন সংর্ঘাত না ঘটে সে জন্যে পৌর শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে ইটের আঘাতে ৩/৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে থানা পুলিশের সঙ্গে জেলা গোয়েন্দা ও দাঙ্গা পুলিশ অংশ নেয়। এই ঘটনায় সহকারী উপ-পরিদর্শক রবিউলসহ তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন।’
ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উভয় পক্ষের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রথমে টিআর শেল নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু উভয় পক্ষ এসময় গাড়ি ভাঙচুর শরু এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় লিপ্ত হলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুব আলম সোহাগ জানান, সকালে বিআরডিবি কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শুরু হয়। সভায় ফরিদগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারসহ উপজেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তাঁর দাবি সভার শেষ পর্যায়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাড.জাহিদুর রহমান রোমান বক্তব্যে দিচ্ছিলেন। এসময় বিক্ষুব্দ একটি গ্রুপ মিছিল নিয়ে বর্ধিতসভায় প্রবেশ করে সবাইকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। একপর্যায়ে বর্ধিতসভা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূঁইয়ার গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে উক্ত সভা আহবান করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম দুলাল পাটওয়ারী ঘোষণা থাকার কথা থাকলেও তারা আসেননি।
এ ছাড়াও ওই সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারও উপস্থিত ছিলেন না। তবে সভার সভাপতি হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধ আবুল খায়ের পাটওয়ারী উপস্থিত ছিলেন।’
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহফুজুল হক চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘সাবেক এমপির উদ্দেশ্য বাস্তাবায়নে জেলা আওয়ামী লীগের নিদের্শনা অমান্য করে উপজেলা আ’লীগ সভা আহ্বান করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে সভা আহ্বান করায় ক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা আ’লীগের একটি অংশের সভায় হামলা করে।’
জেলা পরিষদের সদস্য ও পৌর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম রিপন চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘নেত্রীর সিদ্ধান্ত অনুসারে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। যারা বর্ধিত সভায় হামলা করেছে তারা আ’লীগের শত্রু। এই সভায় হামলা করা মানে নেত্রীর সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘সংঘর্ষে নেপথ্যে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার। তার নেতৃত্বে নব্য আওয়ামী লীগাররা পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারে বিশেষ বর্ধিত সভায় হামলা করেছে। এছাড়া পুলিশ ন্যাক্কারজনকভাবে নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে অন্যায় করেছে। নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করবো।’
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার বলেন,‘বর্তমান এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমানকে দাওয়াত না দেওয়ার কারনে গতকাল রাতেই জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আমাদের বলেছেন সভাটি না করে স্থগিত রাখার জন্যে। এ কারণে আমি মিটিংয়ে যাইনি। আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন।’
সাবেক সাংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া বলেন,‘যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আওয়ামী লীগের জন্যে লজ্জাজনক ব্যাপার।এর চাইতে বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।’
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘সংঘর্ষের কারণ আমার জানা নেই। তবে আজকে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।’
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন,‘কী কারণে এবং কেন এই সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।’
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) জিহাদুল কবির বলেন,‘ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা চলছিলো। সভায় সাংসদ শফিকুর রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ কারণে তার সমর্থকরা সভা স্থলে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়।’
ভিডিও দেখুন-
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ জানুয়ারি, ২০১৯