চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বালিথুবা গ্রামে ফসলি জমিতে বন্ধ করে দেয়া অবৈধ ইটভাটা পুনরায় চালু করা হয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে যাচ্ছে কৃষি আবাদ এবং মূল্যবান গ্রামীন পাকা সড়ক। ট্রাক্টর দিয়ে জমি থেকে মাটি কেটে সড়ক দিয়ে আনার সময় সড়কে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের চলাচল ব্যহত হচ্ছে। কৃষি জমি রক্ষার্থে ইটভাটা বন্ধ করে দেয়ার দাবী এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষক, সাধারন মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
সম্প্রতি সরেজমিন উপজেলার বালিথুবা গ্রামে গিয়ে দেখাগেছে, গত কয়েকবছর আগে বন্ধ করে দেয়া হাজী আব্দুল ওয়াদুদ এণ্ড মিয়াজী ব্রিকস চালু করা হয়েছে। আশপাশে বহু বসতবাড়ী। ওই গ্রামের বিভিন্ন ফসলি জমির ওপরের অংশের মাটি কেটে আনা হচ্ছে ইটভাটায়। মাটির কাজে বাহন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ ট্রাক্টর। ট্রাক্টর চলাচলের কারণে এলজিইডি’র নির্মিত পাকা সড়ক ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফসলি জমির মাটি কাটায় পাশের জমিগুলোও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
বালিথুবা গ্রামের কৃষক মহররম বেপারী জানান, ইটভাটার কারণে আমাদের পাকা সড়কটি ভেঙে যায়। গত বছর আবার সড়ক সংস্কার হয়েছে। এখন আবার ট্রাক্টর চলার কারণে ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ইটভাটার কারণে আমাদের ফসল উৎপাদন কয়েকগুন কমেছে।
একই এলাকার কৃষক আব্বাছ বেপারী ও ইয়াছিন খান জানান, ট্রাক্টর চলাচলের কারণে আমাদের সন্তানরা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারে না। স্কুলে যাওয়ার সময় অভিভবাকরা দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকে। কারণে এই ট্রাক্টরের চাপায় অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
ওই গ্রামের পাশবর্তী এলাকার গাজী বাড়ীর নুর মোহাম্মদ গাজী জানান, ইটভাটা গ্রামে মাঝখানে করার কোন যৌক্তিকতা নেই। কৃষি আবাদ ও সড়ক সব কিছুরই ক্ষতি হচ্ছে ইটভাটার কারণে। এই ধরণের অবৈধ ইটভাটা প্রশাসন এখনই বন্ধ করা প্রয়োজন।
কৃষক অমূল্য সুত্রধর জানান, গত ১০ বছর পূর্বে এই ইটভাটা চালু হয়। এলাকার কৃষি জমি ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার জমির পাশে সর্দর বাড়ীর কয়েকজন গর্ত করে মাটি বিক্রি করেছে ইটভাটায়। আমার জমিগুলো ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চেয়ে কোন লাভ হয়নি।
বালিথুবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ চাঁদপুর টাইমসকে জানান, আমি ইটভাটার মালিককে এটি চালু না করার জন্য বহুবার অনুরোধ করেছি। এলাকার কৃষি জমি ও সড়ক নষ্ট হচ্ছে। কৃষকরা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে। আমি বিষয়টি সংশিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব অবৈধ এই ইটভাটা খুব দ্রুত সময় যেন বন্ধ করে দেয়া হয়।
মেসার্স মা-রহমত ব্রিকস নামে ইটভাটার মালিক আলম তপদার জানান, পূর্বে যারা ইটভাটা চালাতেন, তাদের কাছ থেকে আমি ভাড়া নিয়েছি। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমার সকল কাগজপত্র আছে। যত পারেন সংবাদ প্রচার করেন, আমরা কোন সমস্যা নেই।
চাঁদপুর সদরের জ্যেষ্ঠ কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার জানান, ফসলি জমিতে ইটভাটা দেয়া হলে ওই জমিসহ আশাপাশের জমির ক্ষতি হয়। ইটভাটার আশাপাশে ফলের গাছ থাকলে সেগুলোরও ফলন কমে যায়। এই বিষয়ে আমি অনুরোধ করব-গ্রামের ফসলি জমিতে ইটভাটা না দিয়ে নদী কেন্দ্রিক করা উচিৎ এবং মাটিও অন্য উপায়ে সংগ্রহ করা উচিৎ। তাহলে আমাদের ফসলি জমিগুলো রক্ষা পাবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হান্নান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, জেলায় ৯৩টি ইটভাটা। এর মধ্যে ৫৩টি বৈধ। গত বছর আমরা অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের পর এ বছর ১৫টি বন্ধ রয়েছে। অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে। বালিথুবা গ্রামের হাজী আব্দুল ওয়াদুদ এণ্ড মিয়াজী ব্রিকস ইটভাটা অনেক আগে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
জানতে পেরেছি আমাদের কোন ধরণের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া আলম তপাদার নামে ব্যবসায়ী মেসার্স মা-রহমত ব্রিকস নামে অবৈধভাবে ইটভাটা চালু করেছেন। এই বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রতিবেদক: মাজহারুল ইসলাম অনিক, ১২ জানুয়ারি ২০২৩