চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় লোকালয়ে ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও গ্রামবাসী। পুড়ছে গাছপালা। নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করে অবৈধভাবে ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা।
পরিবেশ বিভাগ বলছে, পরিবেশ দূষণ রক্ষায় সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তাই বিধি-বিধান অমান্য করলে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। পরিবেশ আইন অনুযায়ী ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপনের কোনো বিধান নেই। একই সঙ্গে লোকালয় থেকে এক কি.মি. দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। সেই সঙ্গে গ্রামবাসী তথা সর্বসাধারণের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে ভাটা চালাতে হবে। কিন্তু কিভাবে গ্রামের ঘনবসতি এলাকায় একটি ইটভাটা দীর্ঘদিন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে জনমনে এমন প্রশ্ন রয়েছে।
এখন ইট তৈরীর সিজন, সেই লক্ষে মালিকপক্ষ ব্রিকফিল্ডে কাজ শুরু করে করেছেন । তাই এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক সৃষ্টি করছে।
সেই লক্ষ্যে এলাকাবাসীর পক্ষে মো.শুকুর আলমের অভিযোগের আলোকে সরজমিনে দেখা যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার মোট ২৯টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সবগুলোই অবৈধ। অবৈধ গুলোর মধ্যে ১নং বালিথুবার টুবগি এলাকায় গাজী (গাংগুল্লা) বাড়ির পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অমান্য করে তাজুল ইসলাম নামের একজন স.ঃন. নামের গড়ে তুলেছে ইটভাটাটি।
এ সময় ১ নং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. শুকুর আলম খান সহ অনেকে জানান এই ইটভাটার ধোঁয়ায় স্থানীয় মীরের বাড়ি, গাজি বাড়ি, বেপারী বাড়ী, শেখ বাড়ি, খান বাড়ি, মিজি বাড়ি, মজুমদার বাড়ি সহ এই অঞ্চলের অসংখ্য বাড়ির নারিকেল, সুপারি, কাঠাল গাছসহ বিভিন্ন ফল গাছ ধোঁয়ায় পুড়ে ছাই হয়েছে। যে গাছগুলো আছে সেগুলোর পাতা লাল হয়ে গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ব্রিকফিল্ডের পাশে একটি কালভার্ট ছিল। যার দ্বারা এলাকাবাসীর কৃষি ফসল করতে পানি আনা নেওয়ার কাজ হতো। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এই কালভার্ট দিয়ে অতিরিক্ত পানি অপসারন হতো। কিন্তু ব্রিকফিল্ডের জোরদার মালিক সেই কালভার্টটি বন্ধ করে দিয়ে এলাকার মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী করে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, ব্রিকফিল্ডের মালিক তাজুল ইসলাম এলাকার কৃষকদের লোভ-লালসা দেখিয়ে কৃষি জমির মাটি ক্রয় করে এনে, ইট তৈরি করে কৃষি জমিনকে ব্যবহারের অনুপযোগী তুলছে।
তিনি বলেন,এলাকার সহস্রাধিক ব্যক্তিবর্গের গণস্বাক্ষর নিয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করলেও তাজুল ইসলামের খুঁটির জোরে ইটভাটাটি বন্ধ হচ্ছে না এবং একাধিকবার এলাকার শত শত মানুষ ইটভাটাটি বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করলেও প্রশাসন কোনো কর্ণপাত করছে না।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্তসহ স্থানীয়রা জানান, বাড়ির আঙ্গিনার ধারে সড়কের সীমানা দিয়ে সারি সারি গাছ ছিল। এলাকা বাসির দাবি, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় সবগুলো গাছ মরে গেছে। শুধু তাই নয়, আশেপাশের প্রায় ২ শ’ বাড়ির গাছের পাতা জ্বলে একের পর এক মরে যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় বাড়িতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এছাড়া টুবগী-চান্দ্রা সড়ক দিয়ে ব্রিক ফিল্ডের বিভিন্ন মালামাল আনা নেওয়ার কারণে সড়কটির অবস্থা একেবারেই বেহাল হয়ে পড়েছে। যার কারণে প্রতিবছরই সরকারপক্ষ এই সড়কটি পুনঃ নির্মাণ ও সংস্কার করতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হয়।
অন্যদিকে এলাকার জৈনক এক ব্যক্তি বলেন এই ইটভাটাটি আরো আগেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কালো তালিকায় নাম এসেছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে কিভাবে এখনও ব্রিকফিল্ডটি চালিয়ে যাচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।
বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কথা হলে তারা জানান, ইটভাটাটি সম্পূর্ণরূপেই অবৈধ। কিন্তু কাগজপত্রের কিছু জটিলতার কারণে ব্যবস্থা নিতে পারছেননা বলে তারা জানান।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলী হরি চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, অবৈধ ইটভাটা গুলোর তালিকা আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর দিব এবং জেলা প্রশাসক এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।
প্রতিবেদকঃশিমুল হাছান,১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১