চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের যাত্রীবাহী মাইক্রো চালকসহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাই কারীরা যাত্রীদের নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। চালককে জিম্মি করে মোবাইল ফোনে দুই লাখ টাকা নিয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে একজন নারীসহ ৫ জন ছিনতাই কারীকে আটক করে ফরিদগঞ্জ থানা হেফাজতে নিয়েছে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে বুধবার সন্ধ্যায় আটককৃতদের দাউদকান্দি থানায় প্রেরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ ঘটিকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে দাউদকান্দি থানার উত্তর নছুরুউদ্দি (গোয়ালমারী) এলাকার ফিলিং স্টেশনের সামনে।
অভিযোগে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বড়ালি গ্রামের আমিন মিজি’র ছেলে নূরনবী মিজি (২৮)। তিনি রেন্ট-এ (রেজিঃ নং ঢাকা মেট্রো চ-১৫-৬৪৩৪) কার চালক। সোমবার রাত আনুমানিক ১০ ঘটিকায় ফরিদগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে ৩ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার শাহজালাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। দাউদকান্দির ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২ ঘটিকায় ৫টি মোটর সাইকেলযোগে ৫/৬ জন গাড়ির গতিরোধ করে ও ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা চালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা ও চোখ বেঁধে অস্ত্র মুখে মারধর করতঃ রাস্তার পাশে বেঁধে রাখে। এরপর, যাত্রীদের কাছে থাকা সমূদয় টাকা, স্বর্ণালংকার ও তিনটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে এয়ারপোর্ট সড়কের কোনো এক স্থানে নামিয়ে রাস্তার পাশে বেঁধে কয়েকজন ছিনতাইকারী মোটর সাইকেলযোগে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। এরপর, চালক ও যাত্রীদেরকে তুলে গাড়ীতে বসায়। ছিনতাই কারীদের মধ্যে মিন্টু তালুকদার চালকের আসনে বসে ঢাকা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথে চালকের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। চালক নূরনবী নিজের মোবাইল ফোন থেকে আত্মীয়-স্বজনকে জানান। এতে, তার আত্মীয়-স্বজন ছিনতাই কারীদের দেওয়া বিভিন্ন ফোন নম্বরে বিকাশে প্রায় ২ লাখ টাকা পাঠায়। অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের ইয়ারপোর্ট অভিমুখে রাস্তার পাশে নামিয়ে চালককে জিম্মি করে দ্রুত গাড়ী টেনে গাজীপুর জেলার দিকে চলে রওয়ানা দেয়। এক পর্যায়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ নূরনবীর মোবাইল ফোনের লোকশেন সংগ্রহ করে।
এদিকে, গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন উলুখোলা বাজারস্থ উলুখোলা ব্রীজের ওপর এশিয়ান হাইওয়ে গাজীপুর টু কাঞ্চনপুর ব্রীজমুখী রাস্তার ওপর উত্তর-পশ্চিম কোনে অবস্থান নেয়। গাড়ীতে থাকা ছিনতাই কারীরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাদের কিছু সহযোগী ওই স্থানে নেয়। ওই সময় গাড়ীতে ছিনতাই কারীদের সহযোগী আমায়রা ইসলাম প্রঃ আয়েশা আক্তার (২৭)কে আলাপ করতে দেখেন।
এর এক পর্যায়ে, ফরিদগঞ্জ থেকে অপর একটি হাইজ গাড়ীযোগে ৮/৯ জন ড্রাইভার ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছিনতাই হওয়া গাড়ীটি দেখে ধাওয়া দেয়। মিন্টু গাড়ীটি চালনা করে দ্রুত গতিতে পালানোর চেষ্টা করে। সকলের ডাক-চিৎকার শুনে হাইওয়ে রাস্তায় চলাচলরত বিভিন্ন চালক তাদের গাড়ী দ্বারা বেরিকেড দিয়ে গাড়িটি থামাতে সক্ষম হন। বিভিন্ন চালক ও আশেপাশের লোকজন গাড়ীতে থাকা ছিনতাই কারীদের আটক ও উত্তেজিত জনতা মারধর করে। ওই সময় কালীগঞ্জ থানাধীন উলুখোলা ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ছিনতাই কারীদেরকে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে, ফরিদগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরীর আলোকে পুলিশের সহায়তায় গাড়ীসহ ৫ ছিনতাই কারী চাঁদপুর জেলার, কচুয়া থানার রাজারামপুর গ্রামের দৌলত মিয়া ছেলে মোঃ জুলহাস (৩০), নদুমদা গ্রামের ইলিয়াছ এর ছেলে রাসেল (২৫), সদর থানার পূর্ব বিষ্ণুদি গ্রামের জিল্লুর রহমানের ছেলে মিন্টু তালুকদার (৩৭), মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার নয়াকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মনির হোসেন (২৮) ও মুন্সিগঞ্জ জেলার থানার ছোট কেওয়ার, ঢালী বাড়ী’র আসাদ ঢালীর কন্যা আমায়রা ইসলাম প্রকাশ্য আয়েশা আক্তার (২৭)কে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ বুধবার ভোর ৫ ঘটিকায় আটক করে ফরিদগঞ্জ থানা হেফাজতে রাখেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৫ ঘটিকায় তাদেরকে গাড়ী আটকের স্থান দাউদকান্দি থানায় প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হানিফ সরকার থানায় সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযান ও অভিযুক্তদের আটকের তথ্য স্বীকার করে বলেন, মামলা ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকলকে দাউদকান্দি থানায় প্রেরণ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চালক নূরনবীকে ছিনতাই কারীরা পিটিয়েছে। তাকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৩০ অক্টোবর ২০২৪