ফরিদগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক ৪২ বছর পর তার নিজ বাড়িতে ফিরলেন। ১৯৭৩ সালে বাড়ি ছেড়ে কাজের জন্য খুলনা পাড়ি দিলে স্মৃতিশক্তি হারাতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে পুরোপুরি স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে যান তিনি। ফলে আর বাড়ি ফেরা হয়নি। সম্প্রতি তিনি তার বাড়িতে ফিরে এসেছেন।
ফরিদগঞ্জের বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সেকদি গ্রামের মিজি বাড়ির মৃত সুলতান মিজির ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক বাড়ি ফিরেছে এ খবরে তার সহযোদ্ধারাসহ আত্মীয়-স্বজন ও আশপাশের গ্রামের লোকজন ওই বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। তার ফিরে আসায় ফরিদগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দের ঢল নেমেছে।
১৯৭৩ সালের শেষের দিকে অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়ে আরেক সহযোদ্ধা ফরিদগঞ্জের কেরোয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের হাত ধরে খুলনায় পাড়ি জমান মফিজুল হক। সেই সময় থেকেই তিনি কিছুটা স্মৃতিশক্তি হারাতে থাকেন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানের বড় ভাই রুহুল আমিনের খুলনা সদরের সাউথ সেন্টার রোডের পাইওনিয়ার কলেজের সামনে বাসায় উঠেন এবং জীবিকার তাগিদে তিনি খুলনা মংলা বন্দরের শিপিং কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।
১৯৮২ সালে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হকের সাথে তার বড় ভাই তাজুল ইসলাম কাজলের দেখা হয় খুলনা নিউ মার্কেট এলাকায়। এরপর থেকে তার সাথে পরিবারের লোকজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
মফিজুল ১৯৮২ সালে খুলনার বাগেরহাটে বিয়ে করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি মাফিয়া হক মৌসুমী নামে একটি কন্যা সন্তানের জনক হন। ১৯৯২ সালে সন্তান প্রসবকালে তার স্ত্রী মারা যায়। স্ত্রীর মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক পুরোপরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আগের স্মৃতি ভুলে যান।
একমাত্র মেয়ে মাফিয়া হক মৌসুমী বড় হওয়ার পর বাবা মফিজুল হকের স্মৃতি ফিরিয়ে আনাসহ তার পৈত্রিক নিবাসের ঠিকানা জানার চেষ্টা করতেন। এরই মধ্যে মফিজুল হক ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি ফিরে পেলে মৌসুমী তার পৈত্রিক নিবাসের ঠিকানা জানতে পারেন। গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা হয়ে চাঁদপুরে লঞ্চযোগে এসে তার পৈত্রিক নিবাস সেকদি মিজি বাড়িতে ওঠেন।
দীর্ঘদিন পর ফিরে আসায় ক’দিন ধরে ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে শত-শত মানুষ ভিড় করছে। এই মুক্তিযোদ্ধাকে ৯ জানুয়ারি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসী ফুলেল শুভেচ্ছার মধ্যে দিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করে।
মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেঘালয়ে ২ মাস সেক্টর কমান্ডার মেজর হায়দার আলীর নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
ভারত থেকে প্রশিক্ষণ শেষে তৎকালীন কমান্ডার জহিরুল পাঠানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে আসেন। যুদ্ধকালীন গ্রুপ কমান্ডার ফরিদগঞ্জ কড়ৈতলীর গ্রামের আবুল হোসেনের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে ফরিদগঞ্জের গাজীপুর, কড়ৈতলী, চাঁদপুর সদরের মহামায়াসহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
৪২ বছর আগে এলাকা থেকে চলে যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হককে দেখতে তার সহযোদ্ধা মো. সফিউল্যা মুন্সিসহ মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে আসেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা সফিউল্যা মুন্সি যুদ্ধকালীন সময়ে মফিজুল হকসহ তার একটি দুর্লভ ছবি মাফিয়া হক মৌসুমীর কাছে হস্তান্তর করেন।
মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হকের মেয়ে মৌসুমী বর্তমানে খুলনা আজম খান সরকারি কমার্স কলেজে ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী।