শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিতে চাঁদপুরসহ দেশের গ্রামাঞ্চলে শনিবার থেকে নেমেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৮০০ রিকশা-ভ্যান। বাড়ি বাড়ি যাবে এসব ভ্যান। ভ্যানগুলোতে থাকবে বিদ্যুতের মিটার, তারসহ নতুন বিদ্যু সংযোগ দেওয়ার সব সরঞ্জাম। গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ চাইলে তাৎক্ষণিক সব প্রক্রিয়া শেষে মাত্র ৫ মিনিটেই দেওয়া হবে নতুন সংযোগ।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দীন গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকদের (জিএম) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রতিটি সমিতি থেকে অন্তত ১০টি করে রিকশা–ভ্যান নামিয়ে এভাবে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সে হিসেবে চাঁদপুরের দু’সমিতিতে ১০টি করে ২০ টি ভ্যান নামানোর কথা রয়েছে। তবে সমিতি কর্তৃপক্ষ বলছে বৃহস্পতিবার এ নির্দেশনা পেয়েছেন তারা। এখনো ভ্যান তৈরি কিংবা ক্রয় করা সম্ভব হয়নি।
ওই ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেওয়া চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আলতাফ হোসেন এসব তথ্য চাঁদপুর টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।
সারাদেশে পল্লী বিদ্যুতের ৮০টি সমিতির মধ্যে চাঁদপুর পল্লী বিদুৎ সমিতি-১ (হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর) ও চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (বাবুরহাট, চাঁদপুর) নামে জেলায় দু’টি সমিতি রয়েছে। সমিতি-১ এর অধিনে রয়েছে হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি ও কচুয়া উপজেলা। সমিতি-২ এর অধিনে রয়েছে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু তাহের চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘বৃহস্পতিবার আমরা ভিডিও কনফারেন্সে বিষয়টি দেখেছি এবং জেনেছি। তবে এটি করা হয়েছে .দ্রুত সংযোগ দেয়ার বিষয়ে তাগিদ দেয়ার জন্যে। আমরা সেটি করছি। বিশেষ করে কোনো গ্রাহক যেনো দালাল বা প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন সেটি আমরা খেয়াল রেখে দ্রুত সংযোগ দিচ্ছি।
‘তবে গ্রাহকের আবেদনের পরপরই অনেক ক্ষেত্রে ওয়ারিং না থাকায় সংযোগ দেয়া সম্ভব হয় না’ বাক্যটি তিনি যুক্ত করেন।
ভ্যান গাড়ি প্রস্তুত ও দ্রুত বিদ্যুৎ পৌঁছানো প্রসঙ্গে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার কেফায়েত উল্লাহ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমরা এখনো ভ্যান প্রস্তুত করতে পারিনি, পরবর্তী ধাপে ভ্যান-এর মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে।’
শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রসঙ্গে মি. কেফায়েত বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধিনে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। বাকি রয়েছে শুধুমাত্র কচুয়া উপজেলা।’
এদিকে চাঁদপুর জেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সমাপ্তির পথে। ইতিমধ্যে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, হাজিগঞ্জ, শাহারাস্তি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। বিগত সরকারের শেষ সময়ে এসে গত ১ নভেম্বর গণভবন থেকে এসব উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাকী ৪ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ অনেকটাই সমাপ্তির পথে রয়েছে বলে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর বিভাগ এর সূত্রে জানা যায়।
শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা দেয়া উপজেলার মধ্যে চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর, ফতেজংগপুর, আলুরবাজার হাইমচর উপজেলার মধ্যচর এলাকা এখনো বিদ্যুতের আওতায় আসেনি।
তবে এসব এলাকা মেঘনা তীরবর্তী চরাঞ্চলে হওয়ায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব না হলেও কিছু কিছু পরিবার সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।
গ্রামাঞ্চলে ভ্যানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা কার্যক্রমের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়, ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব-জোনাল অফিসের এজিএম শেখ আবদুর রহমান গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে ভ্যানে সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। সঙ্গে রাখেন দুজন লাইনম্যান ও একজন ওয়্যারিং পরিদর্শক।
যাঁরা নতুন সংযোগ নিতে চাইছেন, তাঁদের সব প্রক্রিয়া শেষ করে মাত্র ৫ মিনিটে নতুন সংযোগ দিচ্ছেন। হয়রানি, ভোগান্তি ও বাড়তি অর্থ খরচ ছাড়াই গ্রাহকেরা সংযোগ পাচ্ছেন। ৪ দিনে এভাবে তিনি ৫৪টি সংযোগ দেন। তিনি এই কর্মসূচির নাম দিয়েছেন ‘আলোর ফেরিওয়ালা’।
এই উদ্যোগ নিয়ে ৩ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পাঁচ মিনিটে নতুন বিদ্যুৎ–সংযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা পল্লী বিদ্যুতের উচ্চপর্যায়ে সাড়া ফেলে এবং উচ্চপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা হরিণাকু-ুর শেখ আবদুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন।
বিষয়টি দেখে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিকভাবে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএমদের নিয়ে ওই ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে ওই উদ্যোগকে মডেল হিসেবে নিয়ে প্রতিটি সমিতিকে অন্তত ১০টি করে এমন ভ্যান নামানোর নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ৮০০টি ভ্যান নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন
৫ জানুয়ারি, ২০১৮