বিশ্বব্যাপি চলমান করোনা ভাইরাসের কারনে স্থবির হয়ে পড়েছে সকল প্রকার সবা সমাভেশ ও সমাজিক অনুষ্টানের কার্যক্রম। অন্যান্য দেশের ন্যায় এই ভাইরাস বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
সরকারী হিসেবে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন হাজারের উপরে মানুষ এই ভাইরাসের আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিলও কম নয়। দেশে প্রায় গড়ে প্রতিদিন ৩৫ জনের উপরে মানুষ মারা যাচ্ছে।
এই অবস্থা থেকে সাধারন মানুষ রক্ষা পেতে সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী-বেসরকারী অফিস সমূহ বন্ধ করে দেন। সেইসাথে সকল প্রকার গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান করা নিষিদ্ধ করেন। বেশ কিছুদিন এগুলো বন্ধ থাকার পর প্রয়োজনের তাগিদে সরকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,সরকারী বেসরকারী অফিস, যানবাহনসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান শর্তসাপেক্ষে খুলে দেন। কিন্তু গনজমায়েত ও সকল প্রকার অনুষ্ঠান করা এখনো বন্ধ রয়েছে। তাই বিপাকে পড়েছেন ডেকোরটের ও সাউন্ট সিস্টেম ব্যবসায়ীরা।
ফলে সারা দেশের ন্যায় ফরিদগঞ্জের ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। করোনার কারনে দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস ডেকোরটের ও সাউন্ট সিস্টেম ব্যবসা বন্ধ থাকায় তারা পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
এই বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ডেকোরেটর মালিক সমিতির আহবায়ক মো.আমির হোসেন মৃধার নিকট তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৮০টি ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সকলেই এই ব্যবসার উপরেই নির্ভরশীল। তারা অন্য ব্যবসা জানেন না। বিগত ৫ মাস হলো তারা একেবারেই বসে আছেন।
তিনি আরো বলেন, বিগত ঈদে তারা কোন কাজ করতে পারেন নি। এছাড়াও এই মৌসুমে বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানের কাজ করতে পারে নাই। বর্তমানে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে আর কয়েক মাস ব্যবসা না করতে পারলে পথে বসা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। এখনই তাদের অবস্থা অত্যান্ত খারাপ। তাদের অবস্থার কথা কাউকে বলতেও পারছেন না।
আগামীতে পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া তাদের কোন পথ খোলা থাকবেনা বলে জানান তিনি। তিনি সমিতির পক্ষ থেকে দ্রুত তাদের ব্যবসা চালু করার লক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান করার অনুমিত প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সরকারের নিকট দাবী জানান।
এ দিকে সাউন্ট সিস্টেম ব্যবসায়ী সুপরিচিত এফ.এ মানিক জানান, বিগত ৫ মাস যাবত আমাদের কোন কাজ না থাকায় আমরা খুব সমস্যায় রয়েছি। এই মহামারিতে আমরা কিভাবে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি, আমাদের খোঁজ নেওয়ার মত নেই কেউ।
তিনি আরো বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত ১০ থেকে ১৫ জন লোক কাজ করত, এই অবস্থা চলতে থাকলে আমি তাদের নিয়ে পথে বসে যেতে হবে।
এদিকে উপজেলা ডেকোরেটর মালিক সমিতির সদস্য সচিব এমরান হোসেন মিন্টু পাটওয়ারী বলেন, বর্তমানে এই ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আর্থিক প্রণোদনা ছাড়া তারা কেউ ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবেনা।
তিনি বলেন, এই ব্যবসা থেকে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পান। এই ব্যবসা বন্ধ হলে একদিকে যেমন ব্যবসার সাথে জড়িত মানুষগুলো পরিবার নিয়ে পথে বসবে, তেমনি সরকার হারাবে বিশাল আকারের রাজস্ব। সবদিক বিবেচনা করে সহজ শর্তে, সহজ কিস্তিতে এবং নামমাত্র সুদে ব্যাংক থেকে ঋন প্রদান করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি ।
এছাড়াও সংগঠনের সদস্য বিল্লাল হোসেন, লোকমান হোসেন, খোরশেদ আলম, সাহাজানসহ বেশ কয়েকজন বলেন, এই সমস্ত লোকসানতো তাদের হচ্ছেই সেইসাথে তাদের ডেকোরেটর সামগ্রী যেমন কাঠের টেবিলে ঘুন ধরছে, সামিয়ানা ও অন্যান্য ডেকোরশেন কাপড় ব্যবহার না হওয়ায় ফাঙ্গাস ধরে কাপড়গুলো নষ্ট হতে বসেছে।
এই অবস্থায় বসে থাকতে থাকতে তাদের যে সামান্য জমানো অর্থ ছিলো তা শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্যের নিকট ঋন কিংবা ধার করে তাদের চলতে হচ্ছে। এক কথায় তারা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানান তারা।
এই ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে এবং ব্যবসার সাথে জড়িত পরিবারের সদস্য এবং কর্মীদের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থবিধি মেনে দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল প্রকার অনুষ্ঠান করার অনুমতি প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি দাবী জানান। সেইসাথে ব্যাংকের সুদ মওকুপের অনুরোধ করে তারা।
প্রতিবেদক:শিমুল হাছান, ১৫ জুলাই ২০২০