ইউরোপ থেকে এশিয়া, দূরত্ব অনেক। আরো সহজ করে বললে, আমেরিকা থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব কম নয়। কিন্তু ভৌগোলিক এই দূরত্বকে একেবারেই গৌন করে দিয়েছে আত্মীক সম্পর্ক।
নাড়ির সম্পর্ক ভুলা যায় না, শেষও হয় না। যুগে যুগে এরকম বহু দৃষ্টান্তের দেখা মিলে। সাধারণত এরকম দৃষ্টান্ত একটু বয়স্ক অথবা যুবক-যুবতীরা দেখিয়ে থাকে। বাংলাদেশ-আমেরিকার দূরত্বকে ছোট করে দিয়ে ব্যতিক্রম একটি উদাহরণ সৃষ্টি করলো আনোয়ার ইব্রাহিম কাদের। ছোট বয়সে বড় চিন্তা।
বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আমেরিকান কিশোর বাংলাদেশে একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন। সেই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আনোয়ার বাংলাদেশে তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে আসছে। তার রয়েছে সৃজনশীল একটি মনও। এ বয়সে সে একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশ করেছেন এবং ফরিদগঞ্জের কৃতি মুখ বই মেলাতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে তার।
আনোয়ার ইব্রাহিম কাদির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে এবং বেড়ে উঠেছে। তার দাদীর কাছে বাংলাদেশী সংস্কৃতি ও রীতিনীতি দেখে এবং শুনে অনেক কিছুই শিখে নিয়েছে। দুই বছর আগে সে স্বপরিবারে বাংলাদেশে আসে। কয়েক মাস বাংলাদেশে থেকে এ দেশের প্রেমে পড়ে যায় সে। এদেশের প্রকৃতি, মানুষ, সংস্কৃতি তাকে আল্পুত করে। ফরিদগঞ্জে কয়েক মাস থেকেই এখানে শিক্ষা এবং পিছিয়ে পড়া সমাজ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা যাগে। তাই তাৎক্ষনিক শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সমাজ নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই। সেই স্বপ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘ওয়ান টেক ফাউন্ডেশন’। এটি নর্থ ক্যারোলিনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত অলাভজনক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। আনোয়ার যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার ওয়েডিংটন হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সম্প্রতি আনোয়ার ‘স্টেপিং স্টোনস’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছে এই বইটি পওয়া যাচ্ছে বই মেলার ৫২২,৫২৩,৫২৪ ষ্টলে ।
ইংরেজি ভার্সনের কবিতার বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বেহুলা বাংলা প্রকাশনি। বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ইমদাদুল হক মিলন মুখবন্ধ লেখেন। বইয়ের অধিকাংশ কবিতা তার ৯ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায়। আনোয়ার বই বিক্রির সমস্ত টাকা দান করেন সমাজ উন্নয়ন কাজে। তার বই ‘স্টেপিং স্টোনস’ এর বিক্রির সমস্ত টাকা ধানুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান হিসেবে দিয়েছে। লক্ষ্য হল, শিক্ষার্থীরা যাতে স্বপ্নের মতো বড় হতে পারে। সম্প্রতি ধানুয়ায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি ‘ওয়ান টেক ফাউন্ডেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা। এতে সভাপতিত্ব করেন ধানুয়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাহী বোর্ড, অধ্যক্ষ ও শিক্ষার্থীরা।
এ সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের কথা বলা হয়। আনোয়ার একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় তারা গর্বিত।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ৭ মার্চ ২০২২
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur