তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নিরপেক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান প্রেস ক্লাবকে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা সংঘর্ষের ঢাল হিসেবে অপব্যবহার করা কখনোই উচিত নয়। করলে সেটা অপরাধের শামিল। কেননা, প্রেস ক্লাব একটি নিরপেক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান। যা সব মত ও পথের মানুষ ও সব রাজনৈতিক দলের জন্য উন্মুক্ত। সুতরাং, সেখান থেকে পুলিশের ওপর হামলা—তা খুবই অনভিপ্রেত।
১ মার্চ সোমবার সচিবালয়ে সিনেমা হল নির্মাণ ও সংস্কারে সহজে ব্যাংক ঋণ চালু হওয়ায় তথ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস, সহ-সভাপতি মিঞা আলাউদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিন এলাহী সম্রাট, কোষাধ্যক্ষ আজগর হোসেন ও নির্বাহী সদস্য ফারুক হোসেন মানিক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ ও ছাত্রদলের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘প্রেস ক্লাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ছাত্রদল হাজার হাজার ইটের টুকরা, পাথরের টুকরা পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করে হামলা চালিয়েছে। প্রেস ক্লাবে তো কোনও পাথর থাকে না। এগুলো আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। প্রেস ক্লাবকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানো কখনোই উচিত নয় এবং এটি অপরাধের শামিল। এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই অনভিপ্রেত, দুঃখজনক, অনুচিত এবং কেউ যাতে এভাবে প্রেস ক্লাবকে অপব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ সংক্রান্ত আলোচনায় এটিএন বাংলার একজন সাংবাদিক ছাত্রদলের ছুড়ে মারা ইটের আঘাতে আহত হলো কেন, সেই প্রশ্ন আগে আসা উচিত ছিল।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল গতকাল (রবিবার) দেশে একটি ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছে। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে একটি মহল পানিঘোলা করার চেষ্টা করছে। এ অপচেষ্টা অতীতেও হয়েছে, কোনও লাভ হয়নি। এবারও কোনও লাভ হবে না।’
দেশে দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
এ সময় তথ্যমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের এ আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে যে শাস্তির বিধান রয়েছে, তা ভারতের ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্টের ১১তম অধ্যায়ে এবং পাকিস্তানের প্রোটেকশন অব ইলেকট্রনিক ক্রাইমস অ্যাক্টের ১৮ ধারায় আছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার ফ্রড অ্যান্ড অ্যাবিউজ অ্যাক্ট, যুক্তরাজ্যে কম্পিউটার মিসইউজ অ্যাক্ট, নেপালে ইলেক্ট্রনিক ট্রানজেকশন অ্যাক্ট, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেডারেল ডিক্রি ল অব ২০১২ অন কমব্যাটিং সাইবার ক্রাইমস, জার্মানিতে নেটওয়ার্ক এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্ট ২০১৭, অস্ট্রেলিয়ায় সাইবার ক্রাইম লেজিসলেশন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট ২০১২, সিঙ্গাপুরে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮—এ ধরনের আইন আছে। উন্নত দেশগুলোতেও এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেফতার এবং শাস্তির বিধান করা হয়। তবে অবশ্যই আমিও আপনাদের মতো এই আইনের যাতে কোনও অপপ্রয়োগ না হয়, সেজন্য সতর্ক থাকার পক্ষে।’
লেখক মুশতাক আহমেদ কোনও ড্রাগ ব্যবহার করতেন কিনা বা এর কোনও প্রভাব তার মৃত্যুতে আছে কিনা’—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘উনার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সেটা আমাদের জানা নেই। মৃত্যুর কারণ নিরূপণে যে তদন্ত কমিটি হয়েছে, তাদের রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে তিনি কোনও ড্রাগ ব্যবহার করতেন কিনা বা উনার কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, কিংবা কারা কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি ছিল কিনা। তবে এই মৃত্যুর জন্য আমি নিজেও ব্যথিত এবং এটি অবশ্যই অনভিপ্রেত।’
হল নির্মাণ-সংস্কারে ব্যাংক ঋণ চালু: চলচ্চিত্র শিল্পে আশার দিগন্ত
এর আগে সিনেমা হল নির্মাণ-সংস্কারে সহজে ব্যাংক ঋণ চালু হওয়ায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলে তিনি বলেন, ‘দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের যুগান্তকারী উন্নয়নের লক্ষ্যেই প্রকৃতপক্ষে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করি। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। সে কারণেই আজকে একটি বিশেষ তহবিল গঠিত হয়েছে।’ মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক আপাতত ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে, যা প্রয়োজনে এক হাজার কোটি টাকা বা তারও বেশি করা যাবে এবং সাধারণভাবে ৮ বছরে পরিশোধযোগ্য এই ঋণ গ্রহণের এক বছর পর থেকে শোধ করা শুরু হবে। এ তহবিল আসলে প্রণোদনা প্যাকেজ। তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে এটি বিতরণ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১.৫ শতাংশ সুদে অর্থটা তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোকে দেবে। ব্যাংকগুলো জেলা-উপজেলায় সেটি ৪.৫ শতাংশ আর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ৫ শতাংশ সুদে ভোক্তাদের কাছে এই ঋণ বিতরণ করবে। এ ঋণ তারাই পাবেন, যারা সিনেমা হল সংস্কার করতে চান, বন্ধ হয়ে গেছে এমন সিনেমা হল পুনরায় চালু করতে চান, অথবা নতুন সিনেমা হল বানাতে চান এবং একইসঙ্গে কোনও মার্কেটের ভেতরে যদি কোনও সিনেপ্লেক্স, সিনেমা হল কেউ করতে চান।
তথ্য থেকে ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়’ নাম প্রস্তাব
মতবিনিময়কালে সাংবাদিকরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই মন্ত্রণালয়ের নাম ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ই ছিল। পরে কোনও একসময় এটি পরিবর্তন করা হয়েছে। সম্প্রচারের বিষয়টা এই মন্ত্রণালয়ই দেখে। যেমন টেলিভিশনের সম্প্রচার, অন্যান্য মাধ্যমের সম্প্রচার, সমস্ত বিষয় এই মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত। এখন যেমন তথ্য মন্ত্রণালয় আছে, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও আছে। এতে করে নানা জটিলতা, এমনকি চিঠিপত্র উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ে এখন টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন, আইপিসহ সম্প্রচারের কাজ ব্যাপক। বঙ্গবন্ধুর সময় এই মন্ত্রণালয়ের নাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ছিল। এছাড়া ভারত, পাকিস্তানেও এই মন্ত্রণালয়ের নাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। এসব কারণেই আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এটি মন্ত্রিসভায় পাস হতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেতে হবে, সর্বশেষ রাষ্ট্রপতিরও অনুমোদন লাগবে। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।’
ঢাকা ব্যুরো চীফ,১ মার্চ ২০২১